প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

পাথরঘাটায় হালনাগাদ হয় না সরকারি ওয়েব পোর্টাল

ইমরান হোসাইন, পাথরঘাটা (বরগুনা): ডিজিটাল বাংলাদেশের ছোঁয়া লাগেনি বরগুনার পাথরঘাটার অধিকাংশ সরকারি দপ্তরের ওয়েবসাইটগুলোয়। উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের প্রায় ২০টি সরকারি ওয়েব পোর্টাল হালনাগাদ না করায় অনলাইনে জরুরি তথ্যপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সচেতন মানুষেরা। সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতার কারণে সরকারি এসব ওয়েব পোর্টালে প্রয়োজনীয় তথ্যের ১০ শতাংশও পাওয়া যাচ্ছে না।

জাতীয় তথ্য বাতায়ন পাথরঘাটার ওয়েবসাইটে দেখা যায়, উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের সাইটে মোহাম্মদ মোহাসীন নামে উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার নাম রয়েছে, যেটি সঠিক নয়। সাইটটি কবে হাল-নাগাদ করা হয়েছে, তাও দেখা যায় না। পাথরঘাটা সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের সাইটে মো. হুমায়ুন বিন সিরাজ নামে এক সাব-রেজিস্ট্রারের নাম রয়েছে। ওই সাব-রেজিস্ট্রার ২০১৫ সালে বদলি হলেও আট বছর ধরে তার ছবি ও মোবাইল নম্বর এখনও তাদের ওয়েবসাইটে শোভা পাচ্ছে। উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সাইটটি ২০২২ সালের ৩১ মে হালনাগাদ করা হয়েছে। ওই মাসেই সমাজসেবা কর্মকর্তা মুরাদ হোসেন বদলি হয়ে অন্য উপজেলায় চলে গেলেও এখনও রয়ে গেছে তার নাম। উপজেলা শিক্ষা অফিসের কার্যালয়ে একজন উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও তিনজন সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার থাকলেও সাইটে প্রথমে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার রণজিৎ চন্দ্র মিস্ত্রি এবং এরপর উপজেলা শিক্ষা অফিসার টিএম শাহ আলমের নাম দেখানো হলেও কর্মরত আরও দুই সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নাম নেই। উপজেলা বন অফিসের সাইটটি ২০২২ সালের ২৪ মার্চ শেষ হালনাগাদ করা হয়েছে। ওই অফিসের বর্তমান বন কর্মকর্তার নাম আবুল কালাম আজাদ। তাদের ওয়েবসাইটে সাবেক বন কর্মকর্তা মনিরুল হকের নাম রয়েছে। পাথরঘাটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাইটে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহর নাম রয়েছে। তিনি প্রায় দুই বছর আগে পাথরঘাটা থেকে বদলি হয়েছেন। এছাড়া উপজেলা ভূমি অফিস, পাথরঘাটা থানা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, উপজেলা মহিলা-বিষয়ক অফিস, উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিস, উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিসহ বেশ কয়েকটি দপ্তরে সাইটে কোনো কর্মকর্তার নাম পাওয়া যায়নি।

উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি ওয়েব পোর্টাল পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, এতে ‘তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯’ অনুযায়ী যে তথ্যগুলো স্বপ্রণোদিত হয়ে প্রকাশ করার কথা, সেগুলোই নেই। তাছাড়া দপ্তরের কার্যক্রম, গুরুত্বপুর্ণ নোটিস, কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য, বিভিন্ন সভার কার্যবিবরণী, উন্নয়ন প্রকল্পের তথ্য, সুবিধাভোগীদের তালিকাÑএগুলো নেই অধিকাংশ ওয়েব পোর্টালে। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর এসব ওয়েব পোর্টাল হালনাগাদ হচ্ছে না। এমনকি পৌরসভার ওয়েব পোর্টালে পুরোনো কাউন্সিলরদের তালিকা এখনও ঝুলছে। সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা ও তদারকির অভাবে তথ্য থেকে বঞ্চিত সচেতন অনলাইন ব্যবহারকারীরা।

সাংবাদিক মির্জা শহিদুল ইসলাম খালেদ বলেন, বর্তমানে অনলাইন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে, তাই সরকারি ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ধরনের তথ্য বিশেষ করে সরকারি উন্নয়নমূলক কাজের প্রকল্পের তথ্য এবং সুবিধাভোগীদের তালিকাসহ জনগুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হতো। তেমনি সরকারি কাজে দুর্নীতি কম হতো এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হতো।

এ ব্যাপারে উপজেলার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি দপ্তরের সহকারী প্রোগ্রামার মো. মুনিজ্জামান বলেন, ‘আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। যেসব দপ্তরের ওয়েব পোর্টাল হালনাগাদ করা হয়নি, তাদের জরুরিভাবে হালনাগাদ করার জন্য অনুরোধ করব। প্রতিটি দপ্তরের নিজ নিজ ওয়েবপোর্টাল হালনাগাদ করার জন্য প্রত্যেককে নিজস্ব পাসওয়ার্ড দেয়া হয়েছে। ওয়েবপোর্টাল হালনাগাদ করা তাদের দায়িত্ব। কেউ যদি না পারে এবং আমাদের কাছে আসে, তাহলে আমরা তাদের সাহায্য করব।

পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুফল চন্দ্র গোলদার বলেন, উপজেলার সব দপ্তরের ওয়েব পোর্টাল হালনাগাদ করার জন্য দপ্তর প্রধানদের চিঠি দিয়ে নিদের্শনা দেয়া হয়েছে। যেসব দপ্তরের ওয়েব পোর্টাল হালনাগাদ করা হয়নি, সেগুলো দ্রুত হালনাগাদ করার জন্য তাদের আবারও চিঠি দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।