প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

পিছিয়ে যাচ্ছে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আরোপ

ইসমাইল আলী: ২০২০ সালের মার্চে খুলে দেয়া হয় ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে। বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল মহাসড়কটিতে এতদিন বিনা পয়সায় চলাচল করা গেলেও বর্তমানে টোল আরোপের চিন্তাভাবনা চলছে। এজন্য ২৪ মে বৈঠক আহ্বান করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। তবে শেষ মুহূর্তে তা স্থগিত করা হয়। ফলে টোলের হার চ‚ড়ান্ত হয়নি। আর কবে থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আরোপ করা হবে সে সিদ্ধান্তও নেয়নি মন্ত্রণালয়।

গত ২৩ মে শেয়ার বিজে ‘ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা রুট: পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন থেকেই পৃথক টোল’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর পরের দিনই টোল আরোপের বিষয়ে অংশীজন সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এজন্য বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারের (অংশীজন) ২২ মে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে চিঠি দেয়া হয়। ২৩ মে ফোন করে পরের দিনের বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিতও করা হয়। তবে ২৪ মে সকালে হঠাৎ করেই ফোন করে সভা স্থগিতের বিষয়টি জানানো হয়। কেন সভা স্থগিত করা হয়েছে তা জানানো হয়নি।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে জানান, ২৩ মে শেয়ার বিজে প্রতিবেদন প্রকাশের পর সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসে বিষয়টি। আর পদ্মা সেতু ও ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে একই দিনে টোল আরোপ করা হলে জনমনে অসন্তোষ সৃষ্টির বিষয়টি বিবেচনা করে এক্সপ্রেসওয়ের টোল পিছিয়ে দেয়ার কথা জানানো হয়। এজন্য পরের দিন অনুষ্ঠিতব্য সভাটি স্থগিত করা হয়।

জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, ২৪ মে একটি জরুরি সভা থাকায় এক্সপ্রেসওয়ের টোলের সভাটি স্থগিত করা হয়েছে। তবে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের এখনও অনেক সময় বাকি আছে। তাই বিষয়টি নিয়ে বেশি তাড়াহুড়ো করার কিছু নেই। তবে সবার মতামতের ভিত্তিতেই টোলহার চ‚ড়ান্ত করা হবে। কারও ওপর কিছু চাপিয়ে দেয়া হবে না।

যদিও সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আরোপ সময়সাপেক্ষ বিষয়। কারণ টোলের হার চ‚ড়ান্ত করে তা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হবে। এরপর তা যাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে। তিনি অনুমোদন করলে গেজেট জারি করা হবে। আর পদ্মা সেতু উদ্বোধনের বেশি সময় বাকি নেই। মাত্র ১৭-১৮ কার্যদিবস আছে। এখনও টোলহার নির্ধারণই করা যায়নি। তাই পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে পৃথক টোল কার্যকর হবে না এটা মোটামুটি নিশ্চিত। হয়তো তিন থেকে ছয় মাস পিছিয়ে দেয়া হতে পারে। আবার এক বছরও পেছাতে পারে।

যদিও এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আরোপের বিরোধিতা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, পদ্মা সেতু ছাড়াও দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকা রুটে চলাচলকারী যানবাহনকে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে টোল দিতে হয়। আবার ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতেও টোল দিতে হবে। এতে বাস ভাড়া যেমন বাড়বে, পণ্য পরিবহন খরচও তেমনি বাড়বে। ফলে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সূত্র জানায়, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে প্রবেশ ও বের হওয়ার চারটি প্রস্তাবিত পয়েন্ট রয়েছে। এগুলো হলো আবদুল্লাহপুর, ধলেশ্বরী, মালিগ্রাম ও আড়িয়াল খাঁ। এসব পয়েন্টে টোল দিয়ে যানবাহন বেরিয়ে যেতে পারবে। আবার এসব পয়েন্ট দিয়ে মহাসড়কে গাড়ি প্রবেশের সুযোগও থাকবে। তবে কোনো যানবাহনকে এক্সপ্রেসওয়েটিতে একাধিকবার টোল দিতে হবে না।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, পদ্মা সেতু ও ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে সমন্বিতভাবে টোল আরোপ করা উচিত ছিল। কিন্তু তা না করে ভিন্ন ভিন্ন টোল আরোপ করা জনগণের বোঝা বাড়বে। এছাড়া আশানুরূপ গাড়িও চলবে না সেতুতে।

সূত্রমতে, এক্সপ্রেসওয়েটিতে টোল আদায় শুরুর পর পোস্তগোলা (বুড়িগঙ্গা-১) সেতু, ধলেশ্বরী সেতু ও আড়িয়াল খাঁ সেতুতে আর টোল দিতে হবে না। একটি গাড়ি এক্সপ্রেসওয়েটিতে প্রবেশ করে বেরিয়ে যাওয়ার মাঝে যত কিলোমিটার পথ চলবে ঠিক ততটুকুর টোল দিতে হবে। তবে দুই পাশে ধীরগতির যানবাহনের জন্য নির্মিত সার্ভিস লেনে কোনো টোল দিতে হবে না।

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী সভায় (একনেক) জাতীয় মহাসড়কগুলোতে চলাচলকারী যানবাহন থেকে টোল আদায়ের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেন। পরে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধনের পর এ কার্যক্রমে গতি আসে। তবে পদ্মা সেতু নির্মাণ শেষ না হওয়ায় তা বন্ধ রাখা হয়।

গত বছর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে টোলের হার অনুমোদন করিয়ে নেয় সড়ক পরিবহন বিভাগ। এতে একটা মাঝারি ট্রাককে এক্সপ্রেসওয়ে পাড়ি দেয়ার জন্য মোট ৫৫০ টাকা টোল দিতে হতো। আর যাত্রীবাহী বাসের টোল হবে ৪৯৫ টাকা এবং ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য ১৩৮ টাকা। তবে সেটি কার্যকর করা হয়নি। বর্তমানে প্রস্তাবটি বাতিল করে নতুন করে বর্ধিত হারে টোল আরোপ করতে চাচ্ছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।