তৈয়ব আলী সরকার, নীলফামারী: নীলফামারীতে পুরোদমে শুরু হয়েছে বোরো ধানের চারা রোপণের কাজ। আমনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে জেলার কৃষকরা এ বছর বোরো আবাদে ঝুঁকছেন। জেলায় এবার আগেভাগেই শুরু হয়েছে বোরো ধানের চারা রোপণের কাজ। এখানকার কৃষকরা জমি তৈরি, চারা উত্তোলন, সেচ দেয়া ও বীজ রোপণসহ নানা কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রতি বছর বন্যা, খরা ও পোকার আক্রমণে আমনের যে ক্ষতি হয়েছে তা বোরো দিয়ে পুষিয়ে নেবেন বলে আশা করছেন কৃষকরা।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, জেলায় এ বছর বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮১ হাজার ৭০০ হেক্টর। এর মধ্যে সদরে ২৩ হাজার ৭০০ হেক্টর, ডোমার উপজেলায় ১৩ হাজার ২৩৪ হেক্টর, ডিমলায় ১১ হাজার ২৫৪ হেক্টর, জলঢাকায় ১৪ হাজার ৬৬৬ হেক্টর, কিশোরগঞ্জে ১১ হাজার ১৬৩ হেক্টর ও সৈয়দপুর উপজেলায় সাত হাজার ৬৮৩ হেক্টর। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন কৃষি বিভাগ। এখন পর্যন্ত অর্জিত জমির পরিমাণ ২৭ হাজার ৪৯০ হেক্টর। তবে এটি চলমান প্রক্রিয়া।
অপরদিকে, গত বছর জেলায় বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮১ হাজার ৬৭০ হেক্টর। সূত্র জানায়, গত বছরের চেয়ে এবার ৩০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে।
এ বছর জেলায় হাইব্রিড জাতের ৪৩ হাজার ৪০০ এবং উচ্চফলনশীল উফশী জাতের ৩৮ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৩৫ ভাগ জমিতে বোরো চারা রোপণ হয়েছে।
এছাড়া সরকারের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় জেলার ৬১টি ইউনিয়নে ৩৬ হাজার (পরিবার) কৃষককে প্রণোদনার আওতায় আনা হয়েছে। এর মধ্যে বীজ সারসহ ১৮ হাজার ও শুধু বীজ প্রদান করা হয়েছে ১৮ হাজার কৃষককে। তাছাড়া আমরা কৃষকদের নানাভাবে সহযোগিতা করে আসছি। আমাদের লোকজন সব সময় কৃষকদের পাশে আছে। তাই এ বছর বোরো আবাদে ঝুঁকে পড়েছেন এ জেলার কৃষকরা।
জেলা সদরের রামনগর ইউনিয়নের বাহালী পাড়া গ্রামের কৃষক অবিনাস রায় জানান, প্রতি বছর ৩-৪ বিঘা জমিতে ইরি লাগাই, এবার সরকার থাকি সার বীজ পেয়ে আরও দুই বিঘা জমির আবাদ বারাইছি। আবহাওয়া ভালো থাকলে খরচ বাদে দ্বিগুণ লাভ হতে পারে। ভালো ফলনের আশায় পরের দুই বিঘা শুধু হাইব্রিড জাতের ধান লাগাইছি। এলাকার কৃষক আশরাফ আলী, আইয়ব আলী একই কথা জানান।
একই উপজেলার টুপামারী ইউনিয়নের চৌধুরী পাড়া গ্রামের কৃষক আমিরুজ্জামান, রজব আলীসহ অনেক কৃষক জানান, সরকার যেভাবে সার বীজ দিয়েছে এটা কৃষকের জন্য খুবই উপকার হয়েছে। কিন্ত পরবর্তী পর্যায়ে ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত ডিজেল, বিদ্যুৎ, সার ও কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করা না হলে লাভতো দূরের কথা কৃষকদের দ্বিগুণ লোকসান গুনতে হবে।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিক আহমেদ জানান, কৃষি বিভাগের পৃষ্ঠপোশকতায় এবার বোরো মৌসমে সদরের ১৫টি ইউনিয়নের আট হাজার ৪০০ কৃষককে প্রণোদনার আওতায় আনা হয়েছে। আর এ কারণে কৃষক বোরো চাষে শতভাগ ঝুঁকছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উপজেলার ২৩ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করি, ওই লক্ষ্যমাত্রা এবার ছাড়িয়ে যাবে। বাজারে কৃষক ধানের দাম ভালো পেয়ে বোরো চাষে উঠে পড়ে লেগেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এস এম আবু বক্কর সাইফুল বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার ৩০ হেক্টর বেশি জমিতে বোরো আবাদ হবে। সরকারিভাবে জেলার ৩৬ হাজার কৃষককে প্রণোদনার আওতায় আনা হয়েছে। তাই বোরো চাষে কৃষক উদ্বুদ্ধ হয়েছে। বর্তমানে আবহাওয়া ভালো থাকায় কৃষকরা এখন বোরো চাষে বেশি ঝুঁকছেন। পাশাপাশি, মাঠ পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার কৃষি বিষয়ক নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।