বাংলাদেশের ফ্রিল্যানসারদের জন্য ‘পেপ্যাল’ এক আক্ষেপের নাম। দুইশটির মতো দেশে কাজ করলেও কী এক অজানা কারণে কোম্পানিটি বাংলাদেশে আসতে চাইছে না। এক সময় শোনা গিয়েছিল, বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে পেপ্যালের নীতির বনিবনা না হওয়ায় এদেশে আসতে আগ্রহী নয় তারা। পরবর্তী সময়ে সরকারের উদ্যোগে পেপ্যালের সঙ্গে এসব বিষয়ে আলোচনা হয় এবং কিছু অগ্রগতির খবরও শোনা গিয়েছিল। গত দুবছর ধরে পেপ্যাল আসছে বলে সরকারি মহল থেকে আশাবাদ ব্যক্ত করা হচ্ছে। সম্প্রতি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক আবারও জানিয়েছেন, শিগগিরই বাংলাদেশে পেপ্যাল আসছে। আমরা তার বক্তব্যে আস্থা রাখতে চাই।
প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য অনুসারে, যেভাবে পেপ্যাল বাংলাদেশে আসছে, সেটি উৎসাহব্যঞ্জক নয়। মন্ত্রী জানিয়েছেন, পেপ্যাল তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান জুম-এর মাধ্যমে বাংলাদেশে লেনদেন চালাবে। প্রসঙ্গত, পেপ্যালের সরাসরি সার্ভিস আর তার মাধ্যম হয়ে আসা জুম সার্ভিস একরকম নয়। পেপ্যালের যত সুবিধা রয়েছে, তার সব জুম দিতে পারবে বলে ফ্রিল্যানসাররা আশাবাদী নন। অনলাইন মার্কেটে আরও কয়েকটি কোম্পানি রয়েছেÑপেইজ্যা, পেওনিয়ার, স্ক্রিল, নেটেলার প্রভৃতি। এগুলো বাংলাদেশে কাজ করছে এবং পেপ্যালের অভাবে বাংলাদেশের ফ্রিল্যানসাররা সার্ভিসগুলো ব্যবহারও করছেন। একেকটি কোম্পানির কাজের ধরন ও সুবিধা যদিও একেক রকম, কিন্তু পেপ্যালের বিকল্প হিসেবে কেউ দাঁড়াতে পারেনি। ফলে ফ্রিল্যানসাররা দীর্ঘদিন ধরে আগ্রহভরে অপেক্ষা করছেন পেপ্যালের জন্য। কোনো কারণে পেপ্যাল কাজ করতে না পারলে জুম সার্ভিস সত্যিকার অর্থে বিকল্প হবে কি না, সে ব্যাপারে সরকারের উচিত হবে ফ্রিল্যানসারদের সন্দেহ দূর করা।
ফ্রিল্যানসিং ও অনলাইন অ্যাকটিভিজম নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী উভয়েই কর্মতৎপর এটি আমাদের জন্য সুখবর। তারা নিশ্চয়ই ফ্রিল্যানসারদের সুবিধার বিষয় বিবেচনায় রেখে আন্তর্জাতিক এই মুদ্রা বিনিময়ের মাধ্যমটিকে বাংলাদেশে আনার ব্যাপারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন। ইতোমধ্যে ইস্টার্ন ব্যাংকসহ (ইবিএল) তফসিলভুক্ত কয়েকটি ব্যাংকে টেস্ট ট্রানজেকশন হচ্ছে বলে জানা গেছে। আমরা আশা করবো, পেপ্যালের বদলে জুমই যদি আসে বাংলাদেশে, তাহলে পেপ্যালের যাবতীয় সুবিধা যেন পেমেন্ট গেটওয়েটিতে থাকে। পাশাপাশি ফ্রিল্যানসারদের আস্থা অর্জনের জন্য যদি ব্যাংকিং পর্যায়ে নীতি ও বাস্তবায়নে কোনো ধরনের সমন্বয়হীনতা থাকে, সেটি দূর করে যত দ্রুত সম্ভব পেপ্যালকে বাংলাদেশে আনার আহ্বানও থাকবে আমাদের পক্ষ থেকে। পেপ্যাল কর্তৃপক্ষকেও উপলব্ধি করতে হবে বাংলাদেশের আউটসোর্সিং ক্ষেত্রটি অপার সম্ভাবনাময়, যেখানে তারা
নিজেরাও লাভবান হবে। অনলাইন ট্রানজেকশনে নিঃসন্দেহে পেপ্যাল জনপ্রিয়; কিন্তু অন্যরাও বসে নেই। ২০১১ সাল
বা তারও আগে থেকে বাংলাদেশ পেপ্যালকে এদেশে যুক্ত করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার ও ফ্রিল্যানসারদের চাওয়াকে সম্মান জানিয়ে কৌশলগত প্রয়াস নিয়ে তারা এগিয়ে আসবে এ আমাদের প্রত্যাশা।
মহাব্যবস্থাপক (কৃষি), নর্থ বেঙ্গল সুগার
মিলস লি., গোপালপুর, নাটোর
netairoy18Ñyahoo.com