নিজস্ব প্রতিবেদক: দ্রুত মজুরি বোর্ড ঘোষণা করে তৈরি পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়েছে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ থেকে এ দাবি জানায় সংগঠনটি। পাশাপাশি আরও কয়েকটি দাবি তুলে ধরা হয়।
এদিকে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী-এমপিদের বেতন বাড়লে গার্মেন্ট শ্রমিকদের বেতন কেন বাড়বে না? মন্ত্রী-এমপিদের বেতন বাড়লে শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর এ প্রশ্নটি আসতে পারে। তবে কতটা বাড়বে, তা আলোচনার বিষয়। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত পৃথক এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি ।
প্রথম সমাবেশে ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি অ্যাডভোকেট মন্টু ঘোষ বলেন, ‘গার্মেন্ট শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা করতে হবে। এর মধ্যে ১০ হাজার মূল বেতন এবং খাদ্য ও ভাতাসহ আরও ছয় হাজার টাকা। বর্তমান বাজারে তাদের চলার জন্য এটাই হবে যৌক্তিক।’
আশুলিয়ায় বেতনের দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে পুলিশ উসকানির মামলায় যাদের গ্রেফতার করেছে তাদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন কারখানার যে শ্রমিকদের বরখাস্ত করা হয়েছে, তাদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান মন্টু ঘোষ।
একটি মজুরি বোর্ডের পর পাঁচ বছর শেষ হওয়ার আগে আরেকটি মজুরি বোর্ড দেওয়া যায় না আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের এমন বক্তব্যের সমালোচনায় আইনজীবী মন্টু ঘোষ বলেন, ‘উনি ভালো আইনজীবী আমরা সেটা জানি। কিন্তু চেয়ার টেকানোর জন্য এ ধরনের কথা বলবেন, সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। নতুন মজুরি বোর্ড দেওয়ার জন্য সময়ের বাধ্যবাধকতা নেই।’
সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে সিপিবির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মনজুরুল আহসান খান বলেন, আশুলিয়ায় লাখ লাখ শ্রমিক তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য রাস্তায় নেমেছিল। কিন্তু তাদের দাবি না মেনে বরং দমন-পীড়ন-নির্যাতন চালানো হলো। শ্রমিক আন্দোলন এভাবে সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ করা গেলেও শেষ করা যাবে না।
তিনি বলেন, গার্মেন্ট মালিকরা যখন শ্রমিকদের মজুরির আইন মানেন না, তখন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। আবার শ্রমিকরা যখন সেই আইন মান্য করার দাবিতে আন্দোলনে নামে, তখন তাদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন, দমন-পীড়ন চালানো হয়। এটা চলতে পারে না।
গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জলি তালুদকারের পরিচালনায় অন?্যদের মধ্যে সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি সাদিকুর রহমান শামীম, সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সমাবেশে বক্তব্য দেন।
এদিকে জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের ১৫তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে সমাবেশে রাশেদ খান মেনন বলেন, শুরুতে গার্মেন্ট শ্রমিকদের বেতন ছিল ৫৭০ টাকা। তা থেকে এখন বেতন অনেক বেড়েছে। অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে এ অর্জন হয়েছে। তবে দ্রব্যমূল্য যে বেড়েছে, সেদিকটাও দেখতে হবে।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী-এমপিদের বেতন বেড়েছে। কাজেই গার্মেন্ট শ্রমিকরা প্রশ্ন করতেই পারেন, কেন তাদের বেতন বাড়ছে না? অবশ্যই এ প্রশ্ন তারা করতে পারেন। তবে বেতন কত বাড়বে, তা আলোচনার বিষয়। অনেকে বলেন, শ্রমিকরা বাড়াবাড়ি করছেন। কিন্তু কারখানা বন্ধ করে শ্রমিকদের কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়ার জন্য বাড়াবাড়ি করেছেন কারখানা মালিকরা। শ্রমিকরা মুচলেকা দেননি, দেবেনও না।
তিনি আরও বলেন, আন্দোলনের একটা ধারা আছে, তা বুঝতে হবে। নিয়ম মেনে, আইন মেনে আন্দোলন করলে দাবি অবশ্যই আদায় হবে। এজন্য ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করতে হবে।
সমাবেশে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান বলেন, ১৯৮৪ সালে বেতন ছিল ৫৭০ টাকা। ধাপে ধাপে তা এখন অনেক বেড়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতার আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে কারখানা মালিকদের সঙ্গে দরকষাকষি করেছেন। আশা করি, ২০১৮ সালের প্রথম দিকেই ওয়েজ বোর্ড হবে। শ্রমিক ছাড়া গার্মেন্ট চলবে না। তেমনি মালিক না থাকলে গার্মেন্ট হবে না। তবে অবশ্যই শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা দিতে হবে।
তিনি বলেন, আইন ও বিধি-বিধানের বাইরে গিয়ে কোনো আন্দোলন করলে তা সফল হয় না। তাই বেতন বাড়ানোর দাবিতেও আন্দোলন, আইন ও বিধি-বিধানের মধ্যে থেকেই করতে হবে। আন্দোলনের নামে ভাঙচুর করা যাবে না।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি আমিরুল হক আমিরের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক নাইমুল হাসান জুয়েল, সদস্য ড. ওয়াজেদুল ইসলাম প্রমুখ।