নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) খাতভিত্তিক লেনদেনে মাসজুড়েই আধিপত্য রয়েছে প্রকৌশল খাতের। বিদায়ী সপ্তাহেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। আলোচিত সপ্তাহেও লেনদেনের শীর্ষে রয়েছে প্রকৌশল খাত। ডিএসইতে মোট লেনদেনের ২৩ শতাংশ অবদান রয়েছে এ খাতের।
প্রকৌশল খাতের নেতৃত্ব দেওয়া কোম্পানিগুলো উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াচ্ছে। আবার রড নির্মাণে মধ্যবর্তী কাঁচামাল বিলেট উৎপাদনেও বাড়ছে স্বয়ংসম্পূর্ণতা। এসব কারণে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের প্রতি সব ধরনের বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে। ফলে ঊর্ধ্বমুখী বাজারে ঘুরেফিরে লেনদেনের শীর্ষে অবস্থান করছে প্রকৌশল খাত।
এ খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো এগিয়ে চলছে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে আবাসন খাতে স্থবিরতা পুরোপুরি কেটে যাওয়ার আভাসে প্রকৌশল খাতের একাধিক কোম্পানি তাদের উৎপাদনক্ষমতা বাড়াচ্ছে। সে কারণে কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের শীর্ষে স্থান করে নেয় প্রকৌশল খাত।
ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, গত সপ্তাহে প্রকৌশল খাতে প্রতিদিন ২১০ কোটি ৯৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ওষুধ-রসায়ন খাত ১৩ শতাংশ লেনদেন করে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। গত সপ্তাহে এ খাতে প্রতিদিন ১১৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। বস্ত্র খাতে ১১ শতাংশ লেনদেন করে তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে। এ খাতে প্রতিদিন ৯৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
অন্য খাতগুলোর মধ্যে ব্যাংক খাতে ৮ শতাংশ, আর্থিক ও জ্বালানি-বিদ্যুৎ খাতে ৭ শতাংশ, খাদ্য-আনুষঙ্গিক খাতে ৬ শতাংশ, সেবা-আবাসন ও সিমেন্ট খাতে ৫ শতাংশ, বিবিধ খাতে ৪ শতাংশ, আইটি খাতে ৩ শতাংশ লেনদেন হয়েছে। এছাড়া ট্যানারি, টেলিকমিউনিকেশন, মিউচুয়াল ফান্ড ও বিমা খাতে ১ শতাংশ করে লেনদেন হয়েছে।
বর্তমানে পুঁজিবজারে প্রকৌশল খাতে ৩৩টি প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত রয়েছে। এর বেশিরভাগ কোম্পানির অবস্থা ভালো রয়েছে। অধিকাংশ কোম্পানির অবস্থান ‘এ’ ক্যাটাগরিতে। অন্য খাতের তুলনায় এ খাতের লভ্যাংশ প্রদানের হারও বেশি।
সম্প্রতি পরিবেশগত ছাড়পত্র পেয়েছে প্রকৌশল খাতের বিএসআরএম স্টিল ও জিপিএইচ ইস্পাত। চট্টগ্রামে মিরসরাইয়ের সোনাপাহাড় এলাকায় নির্মাণাধীন বিএসআরএম স্টিল মিলসের নতুন ইউনিটের ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এ ইউনিটে কোম্পানিটি আয়রন বিলেট উৎপাদন করবে।
জিপিএইচ ইস্পাতের সীতাকুণ্ড ইউনিটের ইআইএ অনুমোদন দিয়েছে পরিবেশগত ছাড়পত্র কমিটি। এ ইউনটে বিলেট, রড ও বার উৎপাদন করা হয়। এ প্রকল্পের সম্প্রসারণের জন্য ইতোমধ্যে রাইটের মাধ্যমে টাকা তুলেছে কোম্পানিটি। ২০১৮ সালের মধ্যে কোম্পানিটি সম্প্রসারিত ইউনিটের বাণিজ্যিক উৎপাদর শুরু করতে চায়। এসব খবরে প্রকৌশল খাতের প্রতি প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীর আকর্ষণ বাড়ছে।
প্রকৌশল খাতে উৎপাদন বাড়ার প্রমাণ পাওয়া যায় গত তিন বছরের তথ্য পর্যালোচনা করলে। ইস্পাতশিল্পে ব্যবহƒত কাঁচামাল বিলেট ও স্ক্র্যাপ (পুরোনো জাহাজ ও পুরোনো লোহা) আমদানি ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এ দুই ধরনের কাঁচামাল আমদানি হয় ২৮ লাখ টন। তা ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়ায় সোয়া ৪৪ লাখ টনেরও বেশি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আমদানি হয় প্রায় ৫৫ লাখ ৩৮ হাজার টন।