শেয়ার বিজ ডেস্ক: প্রকৃতির নিয়মানুসারে চলছে কচ্ছপের ডিম পাড়ার মৌসুম। এ কারণে কক্সবাজার উপকূলজুড়ে বেড়েছে সামুদ্রিক কচ্ছপের বিচরণ। বাধার সম্মুখীন না হওয়ায় ডিম থেকে বেরিয়ে সাগরেই ফিরছে শত শত বাচ্চা কচ্ছপ। খবর জাগোনিউজ।
প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন, টেকনাফের বদরমোকাম, শাহপরীরদ্বীপ, বাহারছড়া, মনখালী, কক্সবাজারের হিমছড়ি, প্যাচারদিয়া ও মহেশখালীর সোনাদিয়া সৈকতে দেখা মিলছে মা কচ্ছপের। সচেতনতা বাড়ায় জেলেদের জালে আটকা পড়ে কচ্ছপের মৃত্যুর হারও কমেছে অনেক।
প্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে, শীত মৌসুম শুরুর সঙ্গে সঙ্গে কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকায় মা কচ্ছপ ডিম পাড়তে আসে। বিগত বছরগুলো এ সময়ে উপকূলে পুঁতে রাখা মাছ ধরার জালে আটকা পড়ে শত শত মা কচ্ছপ মারা যায়। তবে এ বিষয়ক প্রচারণায় সচেতনতা বাড়ায় জেলেদের জালে আটকে কচ্ছপ মারা পড়ার খবর এখনও আসেনি।
পরিবেশ অধিদফতর কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিদর্শক জাহানারা ইয়াছমিন জানান, উপকূলের সোনাদিয়া থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ পর্যন্ত সাগর এলাকায় ডিম পাড়তে আসে মা কচ্ছপ। বিগত সময়ে অনেকে নিরীহ এ প্রাণীটি ধরে মেরে ফেলতেন। তাদের রক্ষায় পরিবেশে কচ্ছপের উপকারিতা বিষয়ে স্থানীয়দের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে কাজ করে আসছে পরিবেশ অধিদফতর। তাই এখন কিছুটা হলেও সচেতনতা এসেছে বলে মনে হচ্ছে।
সোনাদিয়ার জেলে সর্দার আবদুল আলীম জানান, উপকূলের সোনাদিয়া থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার সাগর এলাকায় হরেক রকম কচ্ছপের বিচরণ দেখা যায়। আগে এসব কচ্ছপ জালে আটকা পড়লে জেলেরা লাঠি দিয়ে আঘাত করে মেরে ফেলতেন। এখন জালে আটকা পড়া কচ্ছপ সাবধানতার সঙ্গে ছেড়ে দেওয়া হয়।
সামুদ্রিক প্রাণী গবেষণার একটি সংস্থা সূত্র জানায়, দেশের ভৌগোলিক সীমায় বঙ্গোপসাগরে কচ্ছপ বিচরণ করে। পশ্চিমে সুন্দরবন থেকে দক্ষিণ-পূর্বের সেন্টমার্টিন দ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত সমুদ্র সৈকতের বালুচরে এরা ডিম পাড়তে আসে। শীতকাল থেকে বর্ষার শুরু পর্যন্ত কচ্ছপের ডিম পাড়ার সময়। স্থান ও প্রজাতিভেদে দিনক্ষণ পরিবর্তন হয়। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় এখন পর্যন্ত পাঁচ প্রজাতির সামুদ্রিক কচ্ছপের উপস্থিতির তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অলিভ রিডলে, গ্রিন টারটল এবং হকসিবল এ তিন প্রজাতির কচ্ছপ কক্সবাজার উপকূলে ডিম পাড়তে আসে। টেকনাফের সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমেদ জানান, গত নভেম্বর মাস থেকে কচ্ছপ ডিম পাড়তে আসছে। তবে সচেতনতা বাড়ায় এ বছর এখনও কচ্ছপ মারা পড়েনি।
তবে সেন্টমার্টিন ও সোনাদিয়াসহ কচ্ছপের বিচরণ এলাকায় পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় কচ্ছপ প্রজনন ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, সৈকত এলাকায় শব্দদূষণ, জেনারেটর চালানো ও যানবাহনের আনাগোনা বেড়ে গেলে মা কচ্ছপ উপকূলে ডিম পাড়তে আসতে ভরসা পায় না। এছাড়াও সাগরে জাল পুঁতে, বেহন্দি জাল বসিয়ে, বড়শি দিয়ে কচ্ছপ ধরে একটি চক্র। পাচার হয় কচ্ছপের খোলস ও ডিম। সে সঙ্গে অতিরিক্ত মাছ ধরার কারণে কচ্ছপ প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস হচ্ছে। তবে বর্তমানে এ প্রবণতা কমেছে।
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদফতর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম জানান, সেন্টমার্টিন ও টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ কচ্ছপের জন্য সংরক্ষিত এলাকা। এ এলাকার পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখতে নানাবিধি নিষেধ আরোপ করা আছে। কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী এ ব্যাপারে সহায়তা করছে। কচ্ছপের ডিম চুরি বন্ধে সৈকতে বসানো হয়েছে পাহারা।
প্রাণী বিশেষজ্ঞরা কচ্ছপ রক্ষার প্রয়োজনীয়তা জেলেদের কাছে তুলে ধরে ফল পেয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা জানান, সামুদ্রিক কচ্ছপ সাগরে জেলিফিসসহ নানা প্রজাতির ক্ষতিকর প্রাণীর পোনা খেয়ে বাঁচে। জেলিফিসের সংখ্যা বেড়ে গেলে মাছের সংখ্যা কমে যায়। কচ্ছপ এ বিষাক্ত প্রাণী খেয়ে সাগরের মাছের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করছে।
পরিবেশ অধিদফতরের সিবিএইসিএ প্রকল্প সূত্র মতে, গভীর সাগরে চিংড়ি ধরার ট্রলার ও নৌকার পুঁতে রাখা ১০ হাজারের বেশি বেহন্দি জাল এবং আট হাজারের বেশি ভাসা জালে আটকা পড়ে গত কয়েক বছরে পাঁচ হাজারের মতো কচ্ছপ মারা গেছে। এ ধরনের জালের ব্যবহার বন্ধের উদ্যোগ না নিলে কচ্ছপের প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস হতে পারে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের অভিমত।