প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নই কাম্য

 

রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নতুন ভবন ও দেশব্যাপী বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম (ফাইন্যান্সিয়াল লিটারেসি প্রোগ্রাম) উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, বিএসইসির চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠানে একটি স্থিতিশীল, স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক পুঁজিবাজার গড়ে তুলতে সরকারের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএসইসির আর্থিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি এ প্রতিশ্রুতিও দেন যে, ‘বর্তমান সরকার পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। পুঁজিবাজার হবে উন্নত বাংলাদেশ নির্মাণের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের নির্ভরযোগ্য উৎস।’ তার এ বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণের কোনো সুযোগ নেই যে, বাংলাদেশের অর্থনীতি যত অগ্রসর হবে, ততই শক্তিশালী পুঁজিবাজার প্রয়োজন হবে এর। কাজটি শুধু একপক্ষের উন্নয়ন ঘটিয়ে নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। লক্ষণীয়, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিএসইসির আর্থিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। একথা সত্য, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপযুক্ত আর্থিক সুবিধাদি প্রদান বা তাদের দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা বিএসইসিকে শক্তিশালীকরণের স্বার্থেই দরকার ছিল। আমরা এ আর্থিক স্বাধীনতাকে কমিশন শক্তিশালীকরণের পথে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবেই বিবেচনা করতে চাইবো। ক্রমে এটি যেন সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা পায়, সেদিকে অবশ্যই দৃষ্টি দিতে হবে সংশ্লিষ্ট কমিশন ও সরকার উভয়কে।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে দৃঢ়ভাবে বলেছেন পুঁজিবাজার শক্তিশালীকরণে তার সরকারের সার্বিক সহায়তা অব্যাহত রাখার কথা। এক্ষেত্রে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণে বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ ও পুঁজিবাজার সংক্রান্ত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে রাজধানীতে স্থাপিত একটি স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল যথেষ্ট উপকারী হবে বলে মনে হয়। একই সঙ্গে অনেকেই দাবি তুলতে পারেন পুঁজিবাজারসংক্রান্ত পূর্ববর্তী অভিযোগগুলো সুরাহার। পাশাপাশি নিশ্চিত করা দরকার, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সহায়তায় গৃহীত কর্মসূচিগুলোর সুফল যেন প্রকৃত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা পান। অভিযোগ রয়েছে, ওই ধরনের কিছু কর্মসূচির প্রভাব অস্পষ্ট এবং আরও কয়েকটির সুফল ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা না পেয়ে পাচ্ছেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগকারীরা আস্থা রাখতে চাইবেন, এ ব্যাপারে বিশেষ যতœবান হবে বিএসইসি তথা সরকার। দেশব্যাপী বিনিয়োগকারীদের আর্থিক বিষয়াদির শিক্ষাদান কর্মসূচি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তবে এর সাফল্য নির্ভর করছে মূলত বাস্তবায়নের ওপর। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ভূমিকা নির্ধারণ। এটি শুধু নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব, এভাবে বিষয়টিকে দেখার সুযোগ নেই। কোম্পানিগুলোও শেয়ারবাজারের অপরিহার্য অংশ। আর সেগুলোর আচরণ পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসম্ভব। এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হলে অধিক ফল মিলবে বলে অনেকের বিশ্বাস। শেয়ার বিজে গত কয়েক দিনে প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, একশ্রেণির কোম্পানি নগদ ডিভিডেন্ড না দিয়ে ইস্যু করছে বোনাস ডিভিডেন্ড। কিছু কোম্পানি রয়েছে, যাদের মুনাফা হারের সঙ্গে প্রকৃত মুনাফা হারের আকাশপাতাল ব্যবধান। আবার কয়েক কোম্পানিকে দেখা গেছে, যেগুলো প্রভূতভাবে শক্তিশালী কিন্তু সাধারণ শেয়ার বাড়াতে চায় না খুব একটা। এখন কথা হলো, এদের ওপর খড়গ তোলার হয়তো দরকার নেই। কিন্তু তারা যেন পুঁজিবাজারে দায়িত্বশীল আচরণ করে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে আমরা যদি ভিত্তি ধরি, তার সাফল্য নির্ভর করবে ভিত্তি মজবুতকরণ তথা পুঁজিবাজার শক্তিশালীকরণে সরকারি প্রতিশ্রুতির কার্যকর বাস্তবায়নের ওপর।