প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

প্রবাসীদের অপ্রদর্শিত আয়ে কর বসাবে আর্জেন্টিনা

শেয়ার বিজ ডেস্ক: আর্জেন্টিনার বর্তমান জোট সরকারের সিনেট সদস্যরা দেশটির নাগরিকদের বিদেশে থাকা অপ্রদর্শিত সম্পদের ওপর করারোপ করতে নতুন আইন প্রণয়নের জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন। এ আইন কার্যকর হলে দেশের বাইরে থাকা অর্থ দিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ঋণ শোধ করা যাবে বলে মনে করছেন তারা। খবর: বুয়েন্স আইরেস টাইমস।

গত সোমবার আর্জেন্টিনার সিনেটররা নিশ্চিত করেন, নতুন আইন কার্যকর হলে বিদেশে থাকা অপ্রদর্শিত আয়ের ওপর করারোপ করা যাবে, যা দিয়ে আইএমএফের চার হাজার ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করা যাবে। এক বিবৃতিতে ফ্রেন্টে ডি টোডোস ব্লকের এই সদস্যরা জানান, অপ্রদর্শিত সম্পদের মাত্র ২০ শতাংশের ওপর করারোপ করা হলে আইএমএফের দায় মেটানো যাবে।

নতুন আইন বাস্তবে পরিণত হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে কোনো নাগরিক দেশের বাইরে থাকা সম্পদের বিবরণ দিলে ৩৫ শতাংশ হারে করারোপ করা হবে। কর দিতে রাজি না হলে আইন অনুযায়ী তাদের ‘কারাবন্দি’ করা হতে পারে। তবে সিনেটে বর্তমান শাসকদল সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়, এ কারণে আইনটি পাস করতে চ্যালেঞ্জে পড়তে হবে তাদের। তাদের নেতৃত্বে রয়েছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিনা ফার্নান্দেজ ডি ক্রিচনার। যদিও বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘নতুন আইন দিয়ে নাগরিকদের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হবে না। তবে যে নাগরিকরা কর এড়িয়ে যান ও মানি লন্ডারিংয়ে জড়িত, তাদের অবশ্যই কর দিতে হবে।’ একই সঙ্গে নাগরিকদের মধ্যে যাদের করের ঠিকানা ভিনদেশে রয়েছে তাদের ওপরও করারোপ করা হবে, যদি তাদের আয়ের উৎস আর্জেন্টিনায় বহাল থাকে।

কয়েকজন সিনেট সদস্য জানান, ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বাইরে প্রায় ৪১ হাজার ৭৫০ কোটি ডলার সমমূল্যের সম্পদ রয়েছে আর্জেন্টাইনদের। এর মধ্যে মাত্র ছয় হাজার ৯০০ কোটি ডলার সম্পদকে করের আওতায় আনতে পেরেছে দেশটির সরকার।

বিবৃতিতে তারা জানান, যে নাগরিকরা আইএমএফের সম্পদভোগী এবং অর্থ নিয়ে দেশের বাইরে চলে গেছেন বা পাচার করেছেন এবং সবশেষে যারা এ সম্পদের ঘোষণা দেননি, তারা নিঃসন্দেহে অপরাধ করেছেন। নতুন আইন অনুযায়ী তাদের টার্গেট করা হয়েছে এবং তাদের কর দিয়েই আইএমএফের দায় শোধ করা হবে। এতে ঐতিহাসিক ন্যায়বিচার চালু হবে দেশটিতে বলে উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।

চলতি মাসের শুরুতে আইএমএফের কাছ থেকে নেয়া ঋণের পুনর্গঠন করে আর্জেন্টিনা সরকার। এজন্য নতুন আর্থিক কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়, যাতে ২০১৮ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট মাউরিসিও ম্যাক্রির আমলে নেয়া পাঁচ হাজার ৭০০

কোটি ডলারের ঋণ কমিয়ে চার হাজার ৪৫০ কোটি ডলারে আনা হয়। এ-সংক্রান্ত এক চুক্তিতে সমর্থন দেয় কংগ্রেস।

প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র গ্যাব্রিয়েলা সেররুতি বলেন, আলবার্তো ফার্নান্দেজের সরকার সিনেটরদের উদ্যোগকে ‘গুরুত্ব’ দিচ্ছে।

এতে মুদ্রা তহবিলের ঋণ থেকে মুক্তি দিতে জাতীয় তহবিল গঠন করা সহজ হবে। এ তহবিল ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে এবং আগের সরকারের ঋণ থেকে জাতিকে মুক্তি দেবে বলে জানান সেররুতি।

এদিকে ফার্নান্দেজ ডি ক্রিচনার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে উল্লেখ করেন, তিনি সম্প্রতি দেশটিতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্ক আর স্ট্যানলির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তারা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে একই পদক্ষেপ নিতে সম্মত হয়েছেন। তিনি সেখানে বলেন, আমি তার দেশকে এই বিলের প্রতি সমর্থন দিতে বলেছি, যাতে জাতীয় তহবিল গঠন করা যায় এবং ঋণ শোধ করা যায়। অর্থপাচার ও কর ফাঁকি রোধে তিনি কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন।

আর্জেন্টিনার প্রধান বিরোধী দল জুন্টোস পর এফ ক্যাম্বিওর নেতারা এ বিলকে ‘অসম্পূর্ণ’ ও ‘অপূরণীয়’ বলে মন্তব্য করেছেন।