আতাউর রহমান: দেশে প্রথমবারের মতো কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। এরই মধ্যে এ বিষয়ে সিএসইকে অনুমোদন দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কিন্তু এ বিষয়ে পূর্ব-অভিজ্ঞতা কোনো প্রতিষ্ঠানের নেই। তাই অভিজ্ঞতা নিতে ভারতের মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জের (এমসিএক্স) বিশেষ পেশাদার প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নিতে আট প্রতিনিধির সিএসই ও বিএসইসির একটি দল ভারত সফরে যাচ্ছে। আগামী ৯ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ভারতের এমসিএক্সের এ বিশেষ পেশাদার প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হওয়া কথা রয়েছে। এ বিষয়ে সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে সিএসই সূত্রে জানা গেছে।
তথ্য মতে, এমসিএক্স পরিদর্শনের জন্য বিএসইসির পক্ষ থেকে ছয় প্রতিনিধিকে মনোনয়ন দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেনÑবিএসইসি’র কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমান, পরিচালক মো. আবুল কালাম, অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ও উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ওয়ারিসুল হাসান রিফাত। এদিকে এ সফরে সিএসই থেকে দুই প্রতিনিধিকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তারা হলেন সিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গোলাম ফারুক এবং উপ-ব্যবস্থাপক ও সিএসই’র প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট কমিটির সচিব মো. ফয়সাল হুদা।
ভারতের এমসিএক্সে বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেবেন বিএসইসি’র কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ। এ বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির যাবতীয় খরচ সিএসই কমোডিটি প্রকল্প থেকে ব্যয় করা হবে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গোলাম ফারুক শেয়ার বিজকে বলেন, ‘সিএসই দেশের প্রথম কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে সিএসই। এরই ধারাবাহিকতায় ভারতের মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জে বিশেষ পেশাদার প্রশিক্ষণ নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ সফরে সিএসই ও বিএসইসির প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। দেশের কমোডিটি পণ্যকে স্ট্যাবল করতে হলে কমোডিটি এক্সেচেঞ্জের বিকল্প নেই।’ এটা চালু করা হলে ব্যবসায়ী ও ক্রেতা উভয়েই আরও বেশি সুবিধা পাবেন বলে জানান তিনি।
এর আগে গত বছরের ১৮ থেকে ২২ অক্টোবর ভারতের এমসিএক্স পরিদর্শন করেন সিএসই পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল।
তথ্যমতে, প্রথমবারের মতো কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করার লক্ষ্যে গত বছরের ১১ অক্টোবর খসড়া বিধিমালা বিএসইসিতে জমা দিয়েছে সিএসই কর্তৃপক্ষ। কমোডিটি এক্সচেঞ্জের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এমসিএক্সের সঙ্গে চুক্তি করার ছয় মাসের মধ্যে প্রথম উদ্যোগটি সফলভাবে শেষ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ‘সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯’ অনুযায়ী, উল্লেখিত পণ্যসামগ্রী কমোডিটি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে বেচাকেনা হবে। এ পদ্ধতিতে কেনাবেচাটা হয় কাগুজে বা ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে। মূল পণ্যটি কোনো গুদামে বা মাঠে থাকে। সেখান থেকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর এর চূড়ান্ত নিষ্পত্তি বা হস্তান্তর হয়।
এদিকে সিএসইর পক্ষ থেকে স্বর্ণ, পাট, তুলা, আলু, পেঁয়াজ, চা প্রভৃতি পণ্যের মধ্য থেকে এক বা একাধিক পণ্য কমোডিটি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে কেনাবেচার করা যায় কি না, সে বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে। একটি কেন্দ্রীভূত বাজারের সঙ্গে পণ্য ব্যবসা ও ভোক্তাদের সেবাদানের লক্ষ্যে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ফলে সংগঠিত ও স্বচ্ছ বাজার সিন্ডিকেট ও দামের কারসাজি কমাতে এ ধরনের এক্সচেঞ্জ মুখ্য ভূমিকা রাখবে বলে মনে করে সিএসই।
সিএসই সূত্রে জানা গেছে, বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী, সিএসই এরই মধ্যে প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী কমোডিটি এক্সচেঞ্জের প্ল্যাটফর্ম পরিচালনার পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশ পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নতুন প্ল্যাটফর্মে সব ধরনের বিনিয়োগকারীকে পণ্য লেনদেনের সুবিধা দিতে কাজ চলছে। তবে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করলে প্রথম পর্যায়ে নন-ডেলিভারি ক্যাশ সেটেলমেন্ট পদ্ধতি অনুসরণ করতে চায় সিএসই। ফলে ফিজিক্যাল ডেলিভারি ক্যাশ সেটেলমেন্ট পদ্ধতি না থাকার কারণ সাময়িকভাবে ওয়্যার হাউস ও গোডাউন লাগছে না। তবে পরবর্তীকালে ফিজিক্যাল ডেলিভারি ক্যাশ সেটেলমেন্ট পদ্ধতি চালু করা হবে। সেজন্য সিএসই শিগগির কনসালটেন্ট নিয়োগ দেয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে। কনসালটেন্টের পরামর্শে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বিশেষ করে বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষপটে কী কী পণ্য নিয়ে এ কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করা যায়, সে বিষয়ে পরামর্শ নেয়া হবে।
এছাড়া কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করার আগে স্টোরেজ মেকানিজম ও ম্যানেজমেন্ট, ডেলিভারি সিস্টেম, ক্লিয়ারিং ও সেটেলমেন্ট সিস্টেম, হিউম্যান রিসোর্সসহ, বাজার স্থাপনের বিষয়টি বিবেচনা করছে সিএসই। এসব বিষয়ে ভারতের মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ সিএসইকে পরামর্শ দিতে সম্মত হয়েছে।