প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে ডে ট্রেডিং কাম্য নয়

বাজার ভালো করার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু ভালো বিনিয়োগকারী তৈরি করা যাচ্ছে না। কারণ সবাই ডে ট্রেডিং ভূমিকা পালন করেন অর্থাৎ সামান্য লাভ হলেই শেয়ার বিক্রি করে দেন। এক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীকে একই ভূমিকায় দেখা যায়। ডে ট্রেডিং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে কাম্য নয়। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।

মাহমুদ হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ এ হাফিজ, পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ড. মোহাম্মদ মুসা এবং আইসিএবির ভাইস প্রেসিডেন্ট সাব্বির আহমেদ, এফসিএ।

মোহাম্মদ এ হাফিজ বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই। বিভিন্ন কারণে বাজারে আস্থা হারিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। কারণ এখন পর্যন্ত একটি স্থিতিশীল পুঁজিবাজার তৈরি করতে পারেনি। বাজারের আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে, বাজার ভালো করার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু ভালো বিনিয়োগকারী তৈরি করা যাচ্ছে না। কারণ সবাই ডে ট্রেডিং ভূমিকা পালন করেন অর্থাৎ সামান্য লাভ হলেই শেয়ার বিক্রি করে দেন। এক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীকে একই ভূমিকায় দেখা যায়। ডে ট্রেডিং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে কাম্য নয়। পুঁজিবাজার, ব্যাংক ও আর্থিক খাতে যে যা করছে সেটা করে সে পার পেয়ে যাচ্ছে। যদি এগুলো বিচারের আওতায় না হয় এবং দৃশ্যমান শাস্তি না দেয়, তাহলে কীভাবে ভালো হবে। মানি মার্কেট থেকে হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে এবং ঋণখেলাপি হচ্ছে। কারা এ অর্থ নিতে সহযোগিতা করছে। এদের কাউকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না। এছাড়া পুঁজিবাজারে বিভিন্ন উপায়ে যারা শেয়ার কারসাজি করছে, এদের ক্ষেত্রেও কোনো শাস্তি হচ্ছে না। এখানে কি নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর ব্যর্থতা নেই!  

তিনি আরও বলেন, বাজারে প্রায় ৬৪টি মার্চেন্ট ব্যাংক রয়েছে। এদের মধ্যে মাত্র পাঁচ থেকে ছয়টি মার্চেন্ট ব্যাংক ইস্যু নিয়ে আসে। এদের মধ্যে যদি কেউ খারাপ ইস্যু নিয়ে আসে তাদের শাস্তি দেন। 

ড. মোহাম্মদ মুসা বলেন, পুঁজিবাজারের একটি মূল অংশ শেয়ার কেনাবেচা করে সাধারণ বা ব্যক্তি বিনিয়োগকারী। আর এসব বিনিয়োগকারী বাজার সম্পর্কে তেমন বুঝেশুনে বিনিয়োগ করে না। ফলে দেখা যায়, যখন কোনো শেয়ারদর বাড়তে থাকে তখন তারা শেয়ার কেনেন। আবার যখন শেয়ারদর কমতে থাকে তখন আতঙ্কিত হয়ে বিক্রি করে দেন। এ সময় বাজারের মূল ভূমিকা থাকার কথা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের। এখানে তাদের  সক্ষমতার একটি বড় ঘাটতি দেখা যায়। আবার এখন ব্যাংক, আর্থিক ও বিমা খাত নাজুক অবস্থায় রয়েছে। পুঁজিবাজারে মোট বিনিয়োগের ৩৫ শতাংশই হচ্ছে এ খাতের। যদি এ খাতগুলো ভালো করা না যায় এক্ষেত্রে পুঁজিবাজার দীর্ঘদিন সমস্যা থেকে যাবে। কথা হচ্ছে, এ সমস্যা কতদিন ধরে থাকবে। যারা এটি নিয়ন্ত্রণ করে, তারা যতদিন ভালো করে দেখভাল না করবে।

সাব্বির আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজারে এখনও মৌলিক কিছু সমস্যা রয়েছে। শুধু পুঁজিবাজার নয়, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে একই অবস্থা। আবার বিভিন্ন খাতে সুশাসনের ঘাটতি বিরাজমান রয়েছে। পুঁজিবাজার তার ব্যতিক্রম নয়। তাই আগে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে বাজারের ফাঁকফোকর বন্ধ করতে। তা না হলে শুধু প্রণোদনা দিয়ে বাজার দীর্ঘমেয়াদি ভালো করা যাবে না।

 তিনি আরও বলেন, বাজারে দুর্বলদের শাস্তি দেওয়া হয়। অর্থাৎ যাদের ধরা সহজ হয় বা কোনো বাধার সৃষ্টি হয় না। কিন্তু রাঘববোয়ালদের কোনো শাস্তি দেওয়া হয় না।

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ