শেয়ার বিজ ডেস্ক: বিশ্বের যেসব প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সার্চ রেজাল্ট ও নিউজ ফিডের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করে, তাদের অবশ্যই মুনাফার ন্যায্য অংশ ভারতীয় গণমাধ্যম ও প্রকাশকদের দিতে হবে। এতে উভয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা দূর হবে বলে মনে করছে ভারত সরকার। খবর: এনডিটিভি।
ভারতের ইলেকট্রনিকস ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বরাত এনডিটিভি জানিয়েছে, সম্প্রতি ১৭টি শীর্ষস্থানীয় ভারতীয় সংবাদ প্রকাশকদের সংগঠন ডিজিটাল নিউজ পাবলিশার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিএনপিএ) একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে ভারতের ইলেকট্রনিকস ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর এ বার্তা দিয়েছেন।
রাজীব চন্দ্রশেখর অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্স ও অন্যান্য দেশের উদ্যোগের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, এসব দেশ সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠান ও বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ন্যায্য আয় নিশ্চিত করতে আইন পাস করেছে। বিজ্ঞাপনী প্রযুক্তি সংস্থা ও সংবাদ প্রতিষ্ঠানের আয়ের মধ্যে বিশাল ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে। সংবাদ প্রতিষ্ঠানের খবর বা কনটেন্ট ব্যবহার করে বিপুল মুনাফা অর্জন করছে ডিজিটাল প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মগুলো। কিন্তু সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলো সেই মুনাফার ন্যায্য অংশ পাচ্ছে না। আমরা অবশ্যই এ সমস্যার সমাধান করব।
‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া আইন’ পাস করা হলে সমস্যাটির সমাধান হবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন প্রতিমন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর। তিনি বলেছেন, অস্ট্রেলিয়া এ সমস্যার একটি ভালো সমাধান বের করেছে। আমরা সেটিকে অনুসরণ করার চেষ্টা করছি। দুই বছর আগে অস্ট্রেলিয়া এমন একটি আইন পাস করেছে, যার কারণে ফেসবুক ও গুগলের মতো বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যম ও প্রকাশকদের অর্থ দিতে হয়।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে এ-সংক্রান্ত একটি আইন নিউজ মিডিয়া বারগেইনিং কোড পাস করে অস্ট্রেলিয়া। সেই আইনের আওতায় নিজেদের ওয়েবসাইটে সংবাদ প্রকাশের জন্য প্রকাশক সংস্থাকে অর্থ দেয় ফেসবুক ও গুগলের মতো সংস্থাগুলো। এসব সংস্থার আয়ের প্রাথমিক উৎস বিজ্ঞাপন। ফলে বিজ্ঞাপন থেকে প্রাপ্ত আয়ের অংশ প্রকাশক সংস্থাগুলোকে দেয় গুগল ও ফেসবুকের মতো জায়ান্ট প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো।
তার রেশ ধরে একই মাসে একই দাবি ওঠে ভারতে। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে তখন নিজ প্ল্যাটফর্মে সংবাদ প্রকাশের জন্য গুগলের কাছে অর্থ দাবি করা হয়, দেয়া হয় চিঠিও। সংবাদ প্রকাশ বা শেয়ারের জন্য অর্থ আদায়ের বিধান রেখে অস্ট্রেলিয়ায় আইন পাসের পর বিষয়টি নিয়ে সরব হয় দ্য ইন্ডিয়ান নিউজপেপার সোসাইটি (আইএনএস)। এজন্য নিজেদের প্ল্যাটফর্মে সংবাদমাধ্যমের প্রকাশিত খবর শেয়ার করার জন্য সুষ্ঠুভাবে বিজ্ঞাপনের আয় বণ্টন করতে গুগলকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেয় তারা। ভারতে গুগলের কান্ট্রি ম্যানেজার সঞ্জয় গুপ্তকে লেখা চিঠিতে আইএনএসের সভাপতি আদিমুলাম জানান, গুগলের উচিত বিজ্ঞাপনের মোট রাজস্বের ৮৫ শতাংশ প্রকাশককে দেয়া। গণমাধ্যম যে খবর প্রকাশ করে, সেজন্য তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার টাকা দেয়া উচিত। তথ্য সংগ্রহ ও যাচাইয়ের মাধ্যমে পাঠকের জন্য খবর প্রস্তুত করতে যথেষ্ট ব্যয় করে হাজার হাজার সাংবাদিক নিয়োগ করে থাকে সংবাদমাধ্যমগুলো। এছাড়া রেজিস্টার্ড নিউজ পাবলিশার্সের এডিটোরিয়াল কনটেন্টকে বাড়তি গুরুত্ব দেয়ার বিষয়টিও চিঠিতে উল্লেখ করে আইএনএস। সেই পরিস্থিতিতে প্রকাশকদের মুনাফার অংশ বাড়িয়ে ৮৫ শতাংশ করার পাশাপাশি মুনাফা-সংক্রান্ত রিপোর্টের ক্ষেত্রেও স্বচ্ছতা আনার জন্য গুগলের প্রতি অনুরোধ জানায় আইএনএস।
অস্ট্রেলিয়ার পর কানাডাও একই পথে হাঁটে। এজন্য গত বছরের এপ্রিলে দেশটিতে অনলাইন নিউজ অ্যাক্ট চালু করা হয়। এ আইনের আওতায় ফেসবুক ও গুগলের মতো বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মকে প্রকাশকের কাছ থেকে সংগৃহীত বিভিন্ন সংবাদের আয়ের অংশ দিতে বাধ্য করা হচ্ছে।
এদিকে সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া খবর ঠেকানোর লক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তি বিধি ২০২১-এ সংশোধনী প্রস্তাব এনেছে ভারতের ইলেকট্রনিকস ও আইটি মন্ত্রণালয়। ১৭ জানুয়ারি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে খসড়া সংশোধনী প্রকাশ করা হয়েছে। খসড়া সংশোধনী অনুযায়ী, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার যেসব তথ্য বা খবর ভুয়া বলে চিহ্নিত করবে, তা কোনো সামাজিক মাধ্যম প্রকাশ ও প্রচার করতে পারবে না।