মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ : চলতি বছর পুঁজিবাজারে মোট সাত কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি থেকে বিনিয়োগকারীরা ভালো মুনাফা না পেলেও আলোচনায় রয়েছে অন্য চারটি কোম্পানি। কারণ তালিকাভুক্তির পর থেকে প্রায় সব সময়ই এসব কোম্পানির শেয়ারদর বাড়তে দেখা গেছে। এ কোম্পানিগুলো হচ্ছে—এিম ল্যাবরেটরিজ, ডরিন পাওয়ার, ফরচুন সুজ ও ইয়াকিন পলিমার। তবে বিনিয়োগকারীরা শেয়ারদরে খুশি থাকলেও সংশ্লিষ্টদের মতে, এসব কোম্পানির শেয়ার ছিল অতিমূল্যায়িত।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, এ বছর তালিকাভুক্ত ফরচুন সুজ প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে দুই কোটি ২০ লাখ শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ২২ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। যা দিয়ে কোম্পানিটির ভবন নির্মাণ ও মেশিন ক্রয়ের কথা। ১০ টাকা অভিহিত দরের প্রতিটি শেয়ারবাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গে ৬৫ টাকায় চলে যায়। যদিও পরবর্তীতে এ শেয়ার ৪০ টাকায় চলে আসে। বর্তমানে আবারও বাড়ছে এর শেয়ারদর। সর্বশেষ এর প্রতিটি শেয়ার ৫৬ থেকে ৫৭ টাকায় লেনদেন হয়।
২০১০ সালের ১৪ মার্চ প্রাইভেট কোম্পানি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা ফরচুন সুজ ২০১১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর উৎপাদন শুরু করে। এরপর ২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি কোম্পানিটি পাবলিক কোম্পানি হিসেবে রূপান্তর হয়।
কোম্পানির তথ্যকণিকা সূত্রে জানা গেছে, ফরচুন সুজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জুতা রফতানি করে থাকে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে—তাইওয়ান, নেদারল্যান্ডস, স্পেন, সুইজারল্যান্ড, কানাডা ও জার্মানি। কোম্পানিটি শিশু, নারী, পুরুষ সবার জন্য জুতা তৈরি করে। অন্য কোম্পানি ইয়াকিন পলিমার আইপিওর মাধ্যমে অভিহিত মূল্যে ১০ টাকা করে দুই কোটি শেয়ার ছেড়ে ২০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এই টাকা দিয়ে মেশিনারিজ ক্রয়, কারখানা ও প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ এবং আনুষঙ্গিক খাতে ব্যয় করবে কোম্পানিটি। বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গে এই শেয়ার ৪৭ টাকায় লেনদেন হয়। ফরচুন সুজের মতো যদিও এক সময় এর দর ২৫ টাকায় নেমে আসে। বর্তমানে এর প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হচ্ছে ৩১ টাকায়। এই কোম্পানিটি ২০০১ সালে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে রেজিস্ট্রি হয় ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের অধীনে। কোম্পানিটি বাণিজ্যিকভাবে কাজ শুরু করে ২০০৩ সালের ১৫ জুলাই। এ বছর তালিকাভুক্ত অন্য কোম্পানি ডরিন পাওয়ার পুঁজিবাজারে দু্ই কোটি শেয়ার ছেড়ে ৫৮ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। তালিকাভুক্ত হওয়ার সময় কোম্পানিটি ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের সঙ্গে ১৯ টাকা প্রিমিয়াম গ্রহণ করে। অর্থাৎ প্রতিটি শেয়ারের মূল্য দাঁড়ায় ২৯ টাকা। লেনদেনের শুরুতে এ শেয়ার সর্বোচ্চ ৯০ টাকায় কেনাবেচা হয়। কিন্তু এরপরই এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর কমে ৫০ টাকায় চলে আসে। বর্তমানে এর প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হচ্ছে ১১১ টাকা ৯০ পয়সায়।
‘কোম্পানিটির শেয়ার অতিমূল্যায়িত কি না’ জানতে যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, ‘শেয়ারের দর ওঠানামা করে মূলত বিনিয়োগকারীদের চাহিদার ওপর। কেউ যদি মনে করেন এ শেয়ার ভালো, তখন তারা এখানে বিনিয়োগ করেন। আর পিই রেশিও দেখে মনে হয় না আমাদের এই কোম্পানির শেয়ার অতিমূল্যায়িত।’
এদিকে প্রতিষ্ঠানটি পুঁজিবাজারে আসার আগেই সমালোচিত হয়। বিএসইসিতে আইপিও অনুমোদন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেঁকে বসেন বিনিয়োগকারীরা। তারা ঋণগ্রস্ত এ কোম্পানিকে অধিক প্রিমিয়াম দেওয়ার অভিযোগে আদালতে রিট আবেদন করেন। ফলে স্থগিত হয়ে যায় এ প্রতিষ্ঠানের আইপিওর টাকা সংগ্রহ। পরবর্তীতে কোম্পানিটি বাজারে আসার অনুমোদন পায়।
অন্য কোম্পানি এিম ল্যাবরেটরিজ বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে বাজার থেকে ৪০৯ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। ৭৭ টাকায় লেনদেন শুরুর পর এ কোম্পানির শেয়ার অল্প দিনের ব্যবধানে ১৩৫ টাকায় চলে যায়। অন্যদিকে এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার সর্বনিম্ন ৯৬ টাকা ২০ পয়সায় লেনদেন হয়। বর্তমানে এ শেয়ার ১০০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, ‘বাজারে আসার পরপরই এসব শেয়ার অতিমূল্যায়িত হয়ে পড়ে। একটি চক্র এসব শেয়ার নিয়ে খেলা করে। কোম্পানির আর্থিক বিচারে এটা স্বাভাবিত মূল্য নয়।’
এ প্রসঙ্গে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বর্তমানে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর ক্রয়সীমার মধ্যে রয়েছে। এর মধ্য থেকে বিনিয়োগকারীদের দেখেশুনে ভালো মানের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা উচিত। এর পাশাপাশি কোনো কোম্পানির গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হলে বিনিয়োগকারীদের উচিত হবে ওই কোম্পানিতে বিনিয়োগ না করা। কারণ পুঁজি তাদের। সে জন্য সবার আগে পুঁজির নিরাপত্তা তাদেরই ভাবতে হবে।’