প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

বছর বছর লোকসানে পুঞ্জীভূত লোকসান ৬৫ কোটি টাকা

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: দেশে কাচ উৎপাদনে ৬৩ বছরের প্রতিষ্ঠান উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি লিমিটেড। একদিকে পুরোনো প্রযুক্তির কারখানা, একটি উৎপাদন ইউনিট বন্ধ, উৎপাদন ব্যয় বেশি, বাজারের অসম প্রতিযোগিতা, নীতিনির্ধারকদের উদাসীনতা, অদক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণে ধারাবাহিকভাবে গ্লাস বিক্রি কমেছে। আর করোনাকালীন সংকট কাটিয়ে ওঠার আগে চলমান অর্থনৈতিক মন্দায় আরও বিক্রয় কমেছে। ফলে গত কয়েক বছরের টানা লোকসান করেছে পুঞ্জীভূত লোকসান হয়েছে প্রায় ৬৫ কোটি টাকা, যা পরিশোধিত মূলধনের সাড়ে তিন গুণেরও বেশি।

উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি লিমিটেড সূত্রে জানা যায়, ১৯৫৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত পুরোনো প্রযুক্তি ও জরাজীর্ণ পুরোনো যন্ত্রপাতি দ্বারা শুধু সাদা রঙের গ্লাস শিট উৎপাদন করে উসমানিয়া। এর মধ্যে চার বছর বন্ধ নাম্বার ফানের্স। আর ডুবে যাওয়া ও আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রায় এক বছর বন্ধ থাকা দ্বিতীয় ইউনিট কয়েক মাস আগে চালু হয়েছে। ফলে ২০২০-২১ অর্থবছর গ্লাস উৎপাদন করতে পারেনি। এছাড়া করোনা ও চলমান অর্থনৈতিক মন্দায় কাচ বিক্রি কমেছে। ২০২১-২২ অর্থবছর প্রতিষ্ঠানটির নিট লোকসান ছিল চার কোটি ৬৩ লাখ টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১০ কোটি ৬২ লাখ টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১২ কোটি ৫৪ লাখ, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১০ কোটি ৮২ লাখ টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছর দুই কোটি ৩৮ লাখ, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সাত কোটি ৮৮ লাখ টাকা এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সাত কোটি ৯১ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে পুঞ্জীভূত লোকসান হয়েছে ৬৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।

লোকসান অব্যাহত থাকায় সর্বশেষ অর্থবছর লভ্যাংশ দিতে পারেনি উসমানিয়া। এ নিয়ে টানা চার বছর লভ্যাংশ দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। এদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম প্রান্ত্রিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের মোট বিক্রি ছিল ৮ কোটি ১২ লাখ টাকা। কিন্তু বিক্রীত পণ্যের ব্যয়, বিক্রয়-বিপণন ব্যয়, প্রশাসনিক ব্যয়সহ সব ধরনের খরচ নির্বাহ করার পর নিট লোকসান হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। এতে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ২৮ পয়সা। অপরদিকে মজুত স্থিতি হয়েছে ৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।

মূলত প্রতিযোগীদের তুলনায় পুরোনো প্রযুক্তিতে গ্লাস শিট উৎপাদন করে উসমানিয়া। এতে পণ্য নি¤œমানের হলেও উৎপাদনব্যয় বেশি। প্রতিযোগী কোম্পানিগুলো প্রতিনিয়ত মূল্য কমানোয় কয়েক বছর ধরে লোকসানে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। বিক্রি কম, চাহিদা কম এবং মজুত বেড়ে যাওয়ায় কোম্পানিটির উৎপাদন সক্ষমতার ৪০ শতাংশও ব্যবহার করতে পারছে না। আর তারল্য সংকটের

পাশাপাশি উসমানিয়া গ্লাস শিটের ফ্যাক্টরি উৎপাদনে বড় ধরনের প্রযুক্তিগত সমস্যায় ভুগছে। এখন সরকার নগদ অর্থ এবং নতুন ও উন্নত প্রযুক্তির মেশিনারিজ স্থাপন না করলে কোম্পানির পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো অসম্ভব হয়ে পড়বে।

প্রতিষ্ঠানটির একাধিক বিনিয়োগকারী বলেন, চারদিকে এত উন্নয়ন হচ্ছে। অথচ উসমানিয়ার করুণদশা। এ থেকে উত্তরণে কোম্পানি সম্পূর্ণ ৯ দশমিক ৮ একর জমিসহ বেসরকারি খাতে অথবা পিপিপির মাধ্যমে আধুনিক কারিগরি ক্ষমতাসম্পন্ন করে সম্প্রসারণ করতে পারে। এ কোম্পানির শেয়ার ১০০ টাকা করে কেনা। এখন ৭৪ টাকা ৬০ পয়সা দর।

উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খ শহিদুল ইসলাম বলেন, ৬৩ বছরের পুরোনো প্রযুক্তি ও জরাজীর্ণ যন্ত্রপাতি দ্বারা গ্লাস শিট  উৎপাদন, বাজারের অসম প্রতিযোগিতা, কাঁচামাল ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, বিক্রি কমিশন বৃদ্ধি এবং গ্লাসের চাহিদা কমে যাওয়ায় উসমানিয়া লোকসানে আছে। জ্বালানি ও ডলার সংকটে এখন পণ্যের বিক্রিও কমেছে। এসব কারণে অর্থ সংকটে কোম্পানির পরিচালন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সর্বশেষ এলসি পেমেন্ট দেয়ার জন্য বিসিআইসি থেকে ঋণ নেয়া হয়। এ দিয়ে আগামী ছয় মাস কারখানার উৎপাদন চলবে। আসলে কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য কোম্পানিটি চালু আছে। তা না হলে বন্ধ হয়ে যেত।