মাথাপিছু মাত্র ২৫ হাজার টাকা ঋণ খেলাপি হওয়ার কারণে সম্প্রতি পাবনার ২৫ জন কৃষককে জেলহাজতে নেয়া হয়। বিষয়টি দেশের গণমাধ্যমে ব্যাপকহারে আলোচিত হয়। এমন সময় কৃষকদের জেলহাজতে নেয়া হলো, যখন হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক খাত থেকে লোপাটের খবর বের হচ্ছে গণমাধ্যমে। একদিকে হাজার কোটি টাকা লোপাটের হোতাদের ধরার জন্য কোনো উদ্যোগ নেই, অন্যদিকে মাত্র ২৫ হাজার টাকা ঋণখেলাপি হওয়ার কারণে কোমরে দড়ি বেঁধে নিরীহ কৃষকদের নেয়া হচ্ছে জেলহাজতে। বিষয়টি নজর এড়ায়নি উচ্চ আদালতেরও। গত সোমবার উচ্চ আদালত এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘২৫ হাজারে কোমরে দড়ি, লক্ষ-কোটিতে কিছু হয় না’। এমন পরিস্থিতিতে বড় অঙ্কের অর্থ লোপাটকারীদের বিরুদ্ধেও যাতে ব্যবস্থা নেয়া হয়, সে বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া জরুরি।
ব্যাংক খাত থেকে অর্থ তছরুপের ঘটনা নতুন কিছু নয়। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এ বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১১ সাল থেকেই বড় বড় ঋণ কেলেঙ্কারি ও অর্থ তছরুপের ঘটনা সামনে আসতে থাকে। ওই বছর হলমার্ক নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ঋণ কেলেঙ্কারির খবর প্রকাশ্যে আসে। পরে প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তাদের গ্রেপ্তার করা হলেও সোনালী ব্যাংকের সে অর্থ এখনও পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এর পরের বছর রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক থেকে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা লোপাটের খবর বেরোয়। এ কেলেঙ্কারির সঙ্গে ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুর সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি বারবার এলেও তার বিরুদ্ধে কার্যত কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। এছাড়া জনতা ব্যাংকের অ্যানোন টেক্স ঋণ কেলেঙ্কারি, পিকে হালদারকাণ্ড, সাবেক ফারমার্স ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারির মতো দেশের ব্যাংক খাতে বড় বড় কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এসব ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক কোনো ব্যবস্থা নেয়ার নজির নেই।
এমন বাস্তবতায় ক্ষুদ্র কৃষি ঋণ গ্রহীতাদের জেলহাজতে প্রেরণ করা নিয়ে বেশ সমালোচনার সৃষ্টি হয়। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, বড় ঋণ কেলেঙ্কারির হোতারা পার পেয়ে যাচ্ছেন কিনা। এমনকি উচ্চ আদালতও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে, বড় বড় ঋণ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা যাতে কোনোভাবেই পার পেয়ে না যান, সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা লোপাটের খবর বেরিয়েছে গণমাধ্যমে। এভাবে লোপাট চলতে থাকলে ব্যাংক খাতের প্রতি মানুষের আস্থার সংকট দেখা দেবে। কমতে থাকবে ব্যাংকের আমানত। ঋণদানের সক্ষমতা কমে যাবে ব্যাংকগুলোর। তাই ব্যাংক খাতের প্রতি সাধারণ আমানতকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া আবশ্যক। পাশাপাশি প্রবাসীরাও এখন ব্যাংকের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে অর্থ পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। এ ভয় দূর করার জন্য মুদ্রা বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো এ বিষয়ে তৎপর হবে বলেই
আমাদের বিশ্বাস।