ইসমাইল আলী: ডলার সংকটে কয়লা আমদানি বন্ধ ছিল এক মাসের বেশি সময়। বারবার চিঠি দিয়েও প্রায় ৩০ কোটি ডলার পায়নি বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল)। ফলে কয়লা মজুত শেষ হয়ে এসেছে কেন্দ্রটির। এতে গতকাল বন্ধ হয়ে গেছে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট। অবশিষ্ট কয়লা দিয়ে দ্বিতীয় ইউনিটটি চলবে আর মাত্র ১০ দিন। এরপর পুরোপুরি বন্ধ হবে দেশের সর্ববৃহৎ এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি।
পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটটি (৬৬০ মেগাওয়াট) বন্ধ হওয়ার তথ্য গতকালই বিদ্যুৎ বিভাগকে জানায় বিসিপিসিএল। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংককেও জানানো হয়। এর আগেও কয়লা আমদানির জন্য ডলার চেয়ে কয়েক দফা চিঠি দেয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। তবে প্রয়োজনীয় ডলার না পাওয়ায় কয়লা আমদানি শুরু করা যায়নি।
সূত্র জানায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ার পর গতকাল ৩ কোটি (৩০ মিলিয়ন) ডলার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে কয়লা আমদানিতে। আরও ৭ কোটি (৭০ মিলিয়ন) ডলার বরাদ্দের আশ্বাস দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পরিপ্রেক্ষিতে আগামী রোববার কয়লা আমদানির এলসি (ঋণপত্র) খোলা হবে। তবে এলসি খোলার পরও কয়লা আসতে অন্তত ২৫ দিন লাগবে। সে পর্যন্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ রাখতে হবে।
পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট গতকাল বন্ধ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম। তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, কয়লা সংকটে ২৫ মে বন্ধ হয়ে গেছে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট। দ্বিতীয় ইউনিটটিও ৩ বা ৪ জুন পর্যন্ত চালানো যাবে। এরপর পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে দেশের সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কয়লা আমদানির জন্য ৩০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দিয়েছে। আরও ৭০ মিলিয়ন বরাদ্দের আশ্বাস দিয়েছে। তবে আগামী রোববার এলসি খোলা হলে কমপক্ষে ২৫ দিন লাগবে কয়লা আসতে। সে পর্যন্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ রাখতে হবে।
সূত্র জানায়, এর আগে ২৭ এপ্রিল বিদ্যুৎ বিভাগের সচিবকে চিঠি দিয়ে ২৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার বরাদ্দ চেয়েছিল বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম। তিনি চিঠিতে বলেন, পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আমদানিকৃত কয়লার মূল্য বাবদ ওভারডিউয়ের (বকেয়া) পরিমাণ ২৯৮ মিলিয়ন (২৯.৮ কোটি) ডলার। এ বকেয়ার কারণে বিসিপিসিএলের ৫০ শতাংশ শেয়ার হোল্ডার ও ডেফার্ড পেমেন্ট সুবিধা প্রদানকারী সিএমসি জানিয়েছে, চায়নার বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ পিটি বায়ান রিসোর্সেস টিবিকে, ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা সরবরাহের জন্য পুনরায় ঋণপত্র খোলায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এতে মে মাস থেকে কয়লা আমদানিতে এলসি খোলা যাবে না।
প্রসঙ্গত, মজুতকৃত কয়লা দিয়ে মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। এর মধ্যে প্রয়োজনীয় কয়লা না পাওয়া গেলে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। আর বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জন্য মাসে তিন লাখ মেট্রিক টন কয়লা প্রয়োজন হয়। তবে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সংকটের কারণে পিটি বায়ান রিসোর্সেস টিবিকে, ইন্দোনেশিয়া ও বিসিপিসিএলের মধ্যে সম্পাদিত কয়লা সরবরাহ চুক্তির বিপরীতে সিএমসি ৬ মাসের ডেফার্ড (বিলম্বিত) পেমেন্টের শর্তে কয়লা সরবরাহের জন্য ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ঋণপত্র খুলে যাচ্ছে।
ওই সময় চিঠিতে আরও বলা হয়, সিএমসিকে ওভারডিউ পরিশোধের জন্য এপ্রিলের মধ্যে ৫০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা দরকার। এতে কয়লা সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় ঋণপত্র খুলতে পারবে সিএমসি। আর মে মাসে ৭০ মিলিয়ন ডলার এবং পরবর্তী প্রতি মাসে ৫০ মিলিয়ন ডলার করে পরিশোধ করা হলে সিএমসি প্রয়োজনীয় কয়লা সরবরাহ অব্যাহত রাখতে পারবে।
চিঠির অনুলিপি অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরকেও দেয়া হবে। তবে তাতে কোনো কাজ হয়নি। গত এক মাসে কোনো ডলার বরাদ্দ পায়নি পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি।
এর আগে ডলার সংকটে কয়লা আমদানি করতে না পেরে বন্ধ হয়ে যায় বরিশাল ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট (৬১২ মেগাওয়াট) কয়লা সংকটে প্রথম দফা বন্ধ হয়েছিল জানুয়ারিতে। আর বরিশাল ৩০৭ মেগাওয়াট কেন্দ্রটি বন্ধ হয় ফেব্রুয়ারিতে। দুই মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর বরিশাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলেও সংকট কাটেনি রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের। প্রায় তিন সপ্তাহ চালু হলেও কয়লা সংকটের কারণে বর্তমানে সক্ষমতার অর্ধেক বসে রয়েছে রামপাল কেন্দ্রটির।
প্রসঙ্গত, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু হওয়ার পর বরিশাল বিভাগে লোডশেডিং ন্যূনতম পর্যায়ে চলে আসে। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পর ওই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ খুলনা ও ঢাকা বিভাগে সরবরাহ করা হতো। তবে এ কেন্দ্রটি বন্ধ হলে দেশের সার্বিক বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি খারাপ হবে। এতে বরিশালসহ বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং বাড়বে।