প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

বহুজাতিক কোম্পানির তালিকাভুক্তিতে চাপ দেওয়া হবে: অর্থমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ‘দেশের পুঁজিবাজারে বহুজাতিক কোম্পানির সংখ্যা অনেক কম। অথচ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ব্যবসা করতে হলে কোম্পানিগুলোকে সে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে হয়। আমাদের অর্থনীতির অবস্থা বিবেচনা করে কোনো কোম্পানিকে আমরা চাপ সৃষ্টি করিনি। আগামীদিনে পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতার স্বার্থে তালিকাভুক্তির জন্য বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে চাপ দেওয়া হবে। গতকাল সিকিউরিটিজ কমিশন ভবনের ফলক উম্মোচন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, বিনিয়োগ চাঙা রাখতে প্রধান ভূমিকা পালন করতে পারে পুঁজিবাজার। এখানে ব্যাংকের ভূমিকাও কম নয়। উন্নত দেশে ব্যাংক সব সময়ই স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য ঋণ দিয়ে থাকে। দীর্ঘ মেয়াদের বিনিয়োগে আগ্রহী উদ্যোক্তারা পুঁজিবাজারের দিকে ধাবিত হন। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য পুঁজিবাজারের দিকে বিশেষ নজর দিচ্ছে আমাদের সরকার। পুঁজিবাজারের উন্নয়নে কাজ করতে আমরা বদ্ধপরিকর। দুই বছরের মধ্যে দেশের পুঁজিবাজার শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, কার্যক্রম শুরুর পর থেকে বেশকিছু বিপদের সম্মুখীন হয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। বিশেষ করে ১৯৯৬ ও ২০১০ সালে আমাদের সরকারের আমলে দুটি বড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, ২০১০ সালে ধসের পর এর কারণ খতিয়ে দেখতে কাজ শুরু করি আমরা। পুঁজিবাজারের ইতিহাসে প্রথম অর্থমন্ত্রী হিসেবে সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে গিয়ে বৈঠক করি আমি। বৈঠকে আমার প্রথম প্রস্তাব ছিল, ব্যবস্থাপনা থেকে মালিকানা পৃথক করা। ওই সময় অনেকেই এতে বাধা দেন। পরবর্তী সময়ে সবার সহযোগিতায় অত্যন্ত সুন্দরভাবে আমরা কাজটি শেষ করি। ফলে আজকে বিনিয়োগকারীরা নিশ্চিন্তে বাজারে আসছেন।

অন্যদিকে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন বলেছেন, সরকারের বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থ দিতে প্রস্তুত পুঁজিবাজার। সাম্প্রতিক সময়ে সংস্কারের কারণেই পুঁজিবাজারে এ-সম্ভাবনার দ্বার উš§ুক্ত হয়েছে।

এম খায়রুল হোসেন বলেন, সাম্প্র্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারে অনেক সংস্কার হয়েছে। সংস্কারের ফলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে। দেশের পুঁজিবাজার সম্ভাবনাময়। এ বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ অনেক বেশি। এ আগ্রহকে কাজে লাগিয়ে পদ্ম সেতুর মতো বড় প্রকল্পের জন্য পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে পারে সরকার। সরকারের বড় বড় প্রকল্পে অর্থের জোগান দিতে প্রস্তুত পুঁজিবাজার।

তিনি আরও বলেন, আমাদের বাজারে নারী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। বর্তমানে নারী বিনিয়োগকারী সংখ্যা প্রায় আট লাখ। সংস্কারের কারণে পুরোনো বিনিয়োগকারীরা নতুন করে বাজারে আসছেন। আগে যেখানে দৈনিক ৪০০ কোটি টাকার লেনদেন হতো, এখন সেখানে দৈনিক হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হচ্ছে। আয়-ব্যয়ের ওপর ভিত্তি করে শেয়ারের দাম বাড়লে বা কমলে কোনো সমস্যা নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

দেশি ভালো কোম্পানি ও বহুজাতিক কোম্পানির পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বহুজাতিক কোম্পানিকে ব্যবসা করতে হলে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার শর্ত থাকে; আমাদের দেশে এমনটি নেই। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হলে একদিকে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হবে, অন্যদিকে দেশের রাজস্ব আয়ও বাড়বে।

বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলোকে বাজারে তালিকাভুক্ত করার জন্য আমরা আইন প্রণয়ন করেছি। এতে দেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাতে মূলধনের জোগান বাড়বে। পুঁজিবাজারের উন্নয়নের মাধ্যমে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব।