প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

বাংলাদেশের যুবসমাজ সংখ্যায় বাড়লেও কণ্ঠস্বর বাড়েনি

নিজস্ব প্রতিবেদক:‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট, ২০৩০’ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে অংশগ্রহণমূলক করার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কিন্তু জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে এসডিজি বাস্তবায়নে ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণে যুবসমাজের কার্যকর অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অনেক দুর্বলতা আছে এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামোও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের কিছু বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান যুবকদের দ্বারা স্থানীয় পর্যায়ে এসিডিজি বাস্তবায়নের মূল্যায়ন শুরু করে, যার মাধ্যমে এসডিজির আকাক্সক্ষার সঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ের যুবসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর সংশ্লেষ ঘটানোর চেষ্টা করা হয়।

এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের আয়োজনে এবং অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের সহযোগিতায় গতকাল ‘এসডিজি বাস্তবায়নে জবাবদিহি: স্থানীয় প্রেক্ষিত ও যুবসমাজ’ শীর্ষক একটি ভার্চুয়াল সংলাপে বক্তারা এ কথা বলেন।

সংলাপে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন নাগরিক প্ল্যাটফর্মের গবেষক নাজীবা আলতাফ। তিনি বলেন, শুধু কর্মভিত্তিক দক্ষতা বৃদ্ধির দিকে মনোনিবেশ না করে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে যুবভিত্তিক প্রশিক্ষণ, আইসিটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ এবং যুবকদের অধিকার-সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ কর্মসূচিরও উদ্যোগ নেয়া উচিত। শুধু পরোক্ষভাবে পরামর্শ গ্রহণ প্রক্রিয়া নয়, যুবকদের স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে এসডিজি জবাবদিহি প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত করতে হবে। সুনির্দিষ্ট এসডিজি-সম্পর্কিত ও যুবভিত্তিক কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করা উচিত।

সংলাপে সম্মানিত অতিথি ছিলেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আজহারুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, এই চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম এসডিজির জবাবদিহি এবং যুবকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

এনজিও-বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. রাশেদুল ইসলাম সংলাপে আরেকজন সম্মানিত অতিথি হিসেবে মন্তব্য করেন, যুব প্রশিক্ষণগুলোর যথাযথ প্রতিবেদন এবং প্রভাব বিশ্লেষণের অভাব রয়েছে, তাই অ্যাকশনএইড এবং নাগরিকের প্ল্যাটফর্মের মতো অন্যান্য সংস্থাকে সরকারের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করার বিষয়ে তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

সংলাপে সম্মানিত বক্তা হিসেবে ছিলেন ইউএনডিপি বাংলাদেশের অ্যাকসেলারেটর ল্যাবের হেড অব এক্সপেরিমেন্টেশন ড. রমিজ উদ্দিন, ইউএনডিপি বাংলাদেশের গভর্নেস ক্লাস্টারের প্রজেক্ট অফিসার মাহমুদ হাসান, অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের ম্যানেজার নাজমুল আহসান, ধ্রুবতারা ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (ডিওয়াইডিএফ) সাধারণ সম্পাদক ও নির্বাহী পরিচালক অমিয় প্রাপন চক্রবর্তী (অর্ক), বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টারের (বিওয়াইএলসি) প্রেসিডেন্ট এজাজ আহমেদ এবং ইয়ুথ এনগেজমেন্ট ফর সাস্টেইনিবিলিটি (ইয়েস) বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক শামীম আহমেদ।

এসডিজি বাস্তবায়ন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের প্রধান লক্ষ্য বলে মন্তব্য করেন অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির। তিনি সংলাপে প্রারম্ভিক বক্তব্য রাখেন। ২০১৭ ও ২০২০ সালে বাংলাদেশ ভিএনআরে এসডিজি বাস্তবায়নের প্রগতি তুলে ধরলেও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ও যুবসমাজকে সম্পূর্ণভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তাই অতিমারির কারণে পিছিয়ে পড়া যুবকদের এসডিজি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করা দরকার।

সমাপনী বক্তব্যে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মে আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, যুব কণ্ঠস্বরকে জোরালো করার জন্য কাজ করতে হবে। তিনি স্থানীয়ভাবে যুবকদের ক্ষমতায়ন করার ক্ষেত্রে তথ্য ও উপাত্তের প্রয়োজনীয়তা ওপর জোর দিয়েছেন। যুবকদের সংখ্যা বাড়ালেও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির প্রশ্নে তাদের অংশগ্রহণ এখনও সেভাবে বাড়ানো যায়নি।

সংলাপটি সঞ্চালনা করেন অভ্র ভট্টাচার্য, যুগ্ম পরিচালক, সংলাপ এবং প্রচার, সিপিডি।

সরকারি কর্মকর্তা, বিভিন্ন যুব সংগঠন, যুব প্রতিনিধি, বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজন এ ভার্চুয়াল সংলাপে অংশ নেন এবং তাদের মতামত ও মন্তব্য তুলে ধরেন। বক্তারা বলেন, যুবসমাজকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ২০১৭ ও ২০২০ সালে দুটি স্বপ্রণোদিত জাতীয় পর্যালোচনা (ভিএনআর) প্রতিবেদন প্রস্তুতকালে যুবসংগঠন ও যুব প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেছিল। কিন্তু তাদের মতামত ও পরামর্শগুলো সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়েছিল কি না, সে বিষয়ে আলোচনার অবকাশ রয়েছে।