প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

বাংলা কিউআর কোডে প্রতিনিয়ত বাড়ছে লেনদেন

সর্বজনীন ব্যবহারের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ডিজিটাল বাংলাদেশের পরবর্তী ধারা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয় ঘোষণা করেছে সরকার। সেই উদ্যোগের সঙ্গে সমন্বয় করে ক্যাশলেস বাংলাদেশের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গত ১৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এর সূচনা করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে ১০টি ব্যাংক, তিনটি মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ও তিনটি আন্তর্জাতিক পেমেন্ট স্কিম এ কাজে প্রাথমিকভাবে যুক্ত হয়েছে। তবে প্রথম দিকে এ লেনদেনে জটিলতা তৈরি হলেও এখন ধীরে ধীরে মানুষ এ মাধ্যমে লেনদেন বাড়িয়েছে। শুরুতে হাজারের ঘরে লেনদেন হলেও সেটা এখন লাখে হচ্ছে। গত ২১ দিনে ১৭ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, দেশে আর্থিক লেনদেন ডিজিটাল মাধ্যম করতে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করে যাচ্ছে। ডিজিটাল লেনদেন বাড়াতে বিভিন্ন মাধ্যম নিয়ে এসেছে। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলা কুইক রেসপন্স (কিউআর কোড) নিয়ে আসা হয়। এ কিউআর কোড থাকলে যেকোনো ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে লেনদেন করতে পারবে। প্রথমে মতিঝিল দিয়ে শুরু করা হয়। তবে এখন গুলশান ও কারওয়ান বাজার এলাকায়ও এ মাধ্যমে লেনদেন চালু হয়েছে। ধীরে ধীরে আমরা ঢাকার শহরের সব জায়গায় চালু করব। এরপর দেশের ১২টি জেলায় একযোগে চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা সবাইকে বাংলা কিউআর কোড সেবার আওতায় আনার জন্য কাজ করছি।

বেশিরভাগ ক্রেতাই কিউআর কোডের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করতে পারছেন না। আবার কারও অ্যাকাউন্ট খুললেও তার পাসওয়ার্ড দিচ্ছে না। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে কর্মকর্তারা জানান, সবার সমস্যা হচ্ছে না, কিছু কিছু হচ্ছে। এটার কারণ হলো, আমরা নতুন কোনো কিছুই সহজে ব্যবহার করতে পারি না। তাই একটু সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। ধীরে ধীরে ব্যবহার-উপযোগী হবে। বাজার পরিস্থিতি ভালো হতে একটু সময় লাগবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ সেবার মাধ্যমে লেনদেন এগিয়ে নিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে নিচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, বাংলা কিউআর কোডে প্রথম দিনে ৩০৩টি ট্র্যানজেকশনে ১২ হাজার ৫৩৪ টাকার লেনদেন হয়। আর গত ৭ তারিখে এক লাখ ৮৬ হাজার ৯২৪ টাকা লেনদেন হয়। ফলে গত ২১ দিনে সর্বমোট ১৭ লাখ আট হাজার ৪৪ টাকার লেনদেন হয়। এর মধ্যে গত ৪ তারিখে সর্বোচ্চ দুই লাখ ৪৫ হাজার ৫০০ টাকা লেনদেন হয়।

জানা যায়, বাংলা কিউআর কোডের লেনদেন এগিয়ে নিতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে রোজাকেন্দ্রিক সারাদেশে ক্যাম্পেইন, অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়ে মনিটরিং সেল গঠন, গ্রাহক ও

মার্চেন্টদের মাঝে লিফলেট বিতরণ, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক বিক্রেতাদের জমাকৃত উত্তোলনের চার্জ মওকুফ এবং অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের নিয়ে ১২ সদস্যের কমিটি গঠন করা। এসব বিষয়ে আলোচনা করতে আজ একটি সভা ডাকছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক।

এছাড়া ‘??বাংলা কিউআর’ এগিয়ে নিয়ে যেতে ইচ্ছামতো লেনদেন ও সব প্রোভাইডারদের বাংলা কিউআর ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠান আগামী ৩০ জুনের মধ্যে ‘বাংলা কিউআর’ কোড পেমেন্ট সিস্টেম চালু করতে হবে। এছাড়া এতদিন ‘বাংলা কিউআর’ কোডে দৈনিক লেনদেনের সর্বোচ্চসীমা ছিল ২০ হাজার টাকা। এখন ব্যক্তি হিসেবে এ সর্বোচ্চ লেনদেনের সীমা উঠিয়ে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে সন্দেহজনক ও বড় অঙ্কের লেনদেনগুলো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান যথাযথভাবে যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলো তাদের সীমা নির্ধারণ করতে পারবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, পণ্য বা সেবামূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে নগদ অর্থ, কার্ড বা চেক ব্যবহƒত হয়ে থাকে। নগদ অর্থে পরিশোধ ঝুঁকিপূর্ণ, চেক পরিশোধ সময়সাপেক্ষ, জটিল। অপরদিকে কার্ড ব্যবহারের জন্য ব্যাংক বা এমএফএস-গুলোকে ডিজিটাল পেমেন্ট অবকাঠামো বিনির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে বিপুল বিনিয়োগ করতে হয়। ফলে কার্ডে মূল্য পরিশোধ ব্যবস্থা মার্চেন্টদের জন্য ব্যয়বহুল। ছোট মার্চেন্টের (যেমনÑডাব বিক্রেতা, ঝালমুড়ি বিক্রেতা, মুচি প্রভৃতি) পক্ষে এ ব্যয় বহন করা সম্ভব নয় বলে প্রান্তিক পর্যায়ে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার কাক্সিক্ষত মাত্রায় অর্জিত হয়নি। ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসারে বিশ্বব্যাপী লো কস্ট সলিউশন প্রচলনের তাগিদ রয়েছে। কিউআর ডিজিটাল পেমেন্ট এমনি একটি লো কস্ট সলিউশন। বাংলাদেশে কিছু ব্যাংক ও এমএফএসের কিউআর কোড থাকলেও সর্বজনীন কিউআর ছিল না। শুধু ওই ব্যাংক এমএফএস গ্রাহকরা পারস্পরিক লেনদেনে সীমাবদ্ধ ছিল।