Print Date & Time : 3 June 2023 Saturday 2:38 pm

বাংলা ভাষার ব্যবহার হোক যথাযথ

কাজী নুরুল ইসলাম: মানুষের ভাব প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম হলো ভাষা। মাতৃভাষায় কথা বলার মতো তৃপ্তি অন্য ভাষায় হয় না। এ নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। তাই বলা যায়, মাতৃভাষার গুরুত্ব বর্ণনাতীত। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। এ ভাষার জন্য জীবন দিয়েছেন ভাষাশহীদরা। একুশে ফেব্রুয়ারি এলেই বাংলার গুরুত্ব নিয়ে কথা ওঠে সব জায়গায়। মঙ্গলবার মহান মাতৃভাষা দিবস ছিল। এ দিন যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয় দিবসটি। এটা নিশ্চয়ই ভালো দিক। কিন্তু বর্তমানে এ ভাষার ব্যবহার নিয়ে রয়েছে নানা কথা। বিশেষ করে তরুণসমাজ যেভাবে এ ভাষা ব্যবহার করছে, তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন।

প্রধানমন্ত্রী নিজে তরুণদের বাংলা উচ্চারণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এ নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, ‘ইদানীং বাংলা বলতে গিয়ে ইংরেজি বলার একটা বিচিত্র প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। জানি না, অনেক ছেলেমেয়ের মাঝে এটা এখন সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে গেছে। এভাবে কথা না বললে যেন তাদের মর্যাদা থাকে না, এমন একটা ভাব। এই জায়গা থেকে আমাদের ছেলেমেয়েদের বেরিয়ে আসতে হবে।’ অন্য ভাষার প্রতি বৈরিতা নেই উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘নিজের ভাষা আগে শিখতে হবে। সেই সঙ্গে অন্য ভাষাও আমরা শিখব। অন্য ভাষাও শিখতে হবে। কিন্তু মাতৃভাষাকে ভুললে চলবে না।’

বাংলা উচ্চারণ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে মন্তব্য করেছেন, তরুণদের ক্ষেত্রে তা অনেকখানি সত্য বলে আমার কাছে মনে হয়। মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস থাকায় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করেছে, তেমনি রাজধানীর মধ্যবাড্ডার একটি ঘটনা আমাকে কষ্ট দিয়েছে অনেক। একটি অখ্যাত কোচিং সেন্টারে সকাল থেকেই হিন্দি গান উচ্চস্বরে বাজানো হয়। সেসঙ্গে তালে তালে নাচে উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা। কোচিং সেন্টারটি রাস্তার পাশে হওয়ায় আমার মতো অনেকের নজরেই এসেছে। প্রশ্ন হলোÑআমরা এ তরুণদের কী শেখাচ্ছি? ওই কোচিং সেন্টারের শিক্ষক কী শেখাচ্ছেন তার শিক্ষার্থীদের? ওই শিক্ষকইবা কী শিখলেন? তাদের অভিভাবকরা কী শেখালেন সন্তানদের? এই তো কয়েক বছর আগেও একুশে ফেব্রুয়ারি এলে খালি পায়ে যেতাম আমরা শহীদবেদিতে ফুল দিতে। মাইকে বাজানো হতো ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’র মতো কালজয়ী গান। সে দিনগুলো কি হারিয়ে যাবে? ভাষাশহীদ রফিক, শফিউর, জব্বারের মতো নাম না-জানা আরও অনেক ভাষাশহীদের স্মৃতি। তাদের আত্মদানে মহান এ মাতৃভাষা আমাদের চোখের সামনেই

নষ্ট হয়ে যাবে!

এখনই সময় এ তরুণদের মধ্যে ভাষার প্রতি ভালোবাসা জাগানোর। তা না হলে ভুলে ভরা বাংলা-ইংলিশ বা হিন্দির বিকৃত উচ্চারণই ফ্যাশনে পরিণত হবে। এ ধরনের ফ্যাশন ব্যবহার করলে তাকে তিরস্কার করা যেতে পারে। এজন্য অভিভাবক, শিক্ষক, সিনিয়রদের এগিয়ে আসতে হবে। এ ব্যাপারে গণমাধ্যমও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। অনেক গণমাধ্যমও সঠিকভাবে ভাষা ব্যবহার করে না। তাদেরও সঠিক শব্দ, সঠিক উচ্চারণ জানানোর ব্যবস্থা করা দরকার। সব জায়গায় শুদ্ধভাবে বাংলার ব্যবহার হবে এমনটাই প্রত্যাশা।

 

মধ্যবাড্ডা, ঢাকা