নিজস্ব প্রতিবেদক: নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন না হওয়ায় চলতি অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন বেশ কঠিন হবে। বিশেষত রাজস্ব খাতে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না। ফলে বেড়ে যাচ্ছে বাজেট ঘাটতি। এ অবস্থায় নির্ধারিত সময়ের বেশ আগেই সংশোধিত বাজেট ঘোষণার কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সংশোধিত এ বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হতে পারে। ওই বাজেটে রাজস্ব আদায় খাতে বেশ কিছু পরিবর্তনও আনা হবে।
নতুন বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে গত শনিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময়কালে অর্থমন্ত্রী এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘এবার বাজেট বাস্তবায়ন বেশ কঠিন হবে। কারণ আমরা বাজেটের আকার পরিবর্তন করিনি। অন্যদিকে বাজেটে আয়ের একটি বড় উৎস বাদ দেওয়া হয়েছে। সুতরাং এটা নিয়ে আমাদের চিন্তা করতে হবে।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সার্বিকভাবে বাজেটের আউট-কাম হচ্ছে, এক ধরনের ঘাটতি বেড়েছে। এটা একটা সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানে একটা হার্ড কোর বৈঠক করা হবে। রাজস্ব আদায়ের উৎস কিছুটা পরিবর্তিত হবে। অর্থাৎ রাজস্ব আদায়ের প্রকৃত উৎসগুলো থেকে রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পরিবর্তন করা হবে।’
পরিস্থিতি সামাল দিতে ‘একটা সংশোধিত বাজেট এবার বেশ আগেই দেব’ উল্লেখ করে মুহিত বলেন, ‘সেখানে মূল বাজেটের বিভিন্ন পরিসংখ্যানে পরিবর্তন আনা হবে। বিশেষত রাজস্ব আদায়ে ভ্যাট খাতের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, সেটা আদায় হবেই না। সুতরাং এটা পরিবর্তন করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘সংশোধিত বাজেটটি সংসদে উপস্থাপন করা হতে পারে। সেরকমই ইচ্ছা আছে। তবে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। আর সংসদে উপস্থাপন করা না হলে আর্থিক বিধিমালা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নেওয়া হবে।’
রাজস্ব আদায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা এবার আয়কর ও করপোরেট ট্যাক্স খাত থেকে অনেক বেশি রাজস্ব আদায় হবে।’ এ নিয়ে আগাম খুশিও ব্যক্ত করেন তিনি।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে মুহিত বলেন, ‘আয়কর রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যা ১৪ লাখ থেকে ২৯ লাখে উন্নীত হয়েছে। এটি একটি বড় ধরনের সাফল্য। তবে তারা সবাই আয়কর রিটার্ন দাখিল করলেও সবাই কিন্তু আয়কর দেন না। এটা স্বাভাবিক, সবাই করদাতা হবেন না। এর মধ্যে ‘স্বাভাবিক জিরো’ করদাতার সংখ্যা কতÑএটা বের করতে হবে। ইতিপূর্বে জিরো করদাতার সংখ্যা ছিল তিন-চার লাখ।’
বাজেটের শেষ মুহূর্তে পরিবর্তনের কারণ জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু ভ্যাটের ক্ষেত্রে পরিবর্তন করতে হয়েছে। তবে প্রতিবারই আমরা যে বাজেট দিই, সেটা কিন্তু পাস হয় না। যে বাজেট পাস হয়, সেটা যথেষ্ট পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই পাস হয়। এবার বড় পরিবর্তন মনে হওয়ার কারণ হচ্ছে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন না হওয়া।’
‘ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে সরকারের একটা অঙ্গীকার ছিল’Ñসাংবাদিকদের এমন কথার জবাবে তিনি বলেন, ‘না না, এ নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে কোনো অঙ্গীকার নেই। আর শুধু আইএমএফকে নয়, সরকার সবাইকেই বলেছিল চলতি অর্থবছর থেকে নতুন ভ্যাট আইন চালু হচ্ছে। সেটা আমরা করতে পারিনি। কারণ এটা আমাদের নিজস্ব বাস্তবতা।’
‘তবে এর জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে মুহিত বলেন, ‘এবারের বাজেট নিয়ে আইএমএফ এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।’ তবে অবশ্যই প্রতিক্রিয়া জানাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বৈদেশিক ঋণের ব্যবহার বাড়াতে দক্ষতা বাড়ানো হবে
নতুন বাজেটে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ৭০০ কোটি ডলার ধরা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এটা প্রায় কিছুই নয়। কারণ পাইপলাইনে প্রচুর পরিমাণ অর্থ রয়েছে।’
‘কিন্তু আমরা তো সাড়ে ৩০০ বা ৪০০ কোটি ডলারের বেশি ব্যয় করতে পারি না’Ñসাংবাদিকদের এমন কথার জবাবে তিনি বলেন, ‘বৈদেশিক ঋণের ব্যবহার বাড়ানো অতটা কঠিন নয়, যতটা কঠিন অভ্যন্তরীণ ব্যয় বাড়ানো। বৈদেশিক ঋণের ব্যবহার বাড়াতে দক্ষতা বাড়ানো হবে। আর বৈদেশিক ঋণ ব্যবহারে কোন খাতে কত ব্যয় হবেÑসেটা সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা থাকে। সুতরাং সেদিকে লক্ষ্য রাখলেই সেটা সম্ভব।’
‘ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত ১০টি প্রকল্পে মোট বাজেটের ৪১ শতাংশ ব্যয় হবে’ বলে জানান অর্থমন্ত্রী।