প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

বাড়ছে ব্যয়, লোকসানে ডুবতে যাচ্ছে পিডিবি

ইসমাইল আলী: দুই বছর ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় দ্রুত বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ানো হচ্ছে বিদ্যুতের দামও। তবে দাম বাড়ার তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে দুই বছর ধরে বড় অঙ্কের লোকসান গুনছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। চলতি ও আগামী অর্থবছর এ লোকসান আরও বাড়বে। এতে ডুবতে বসেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি। যদিও তিন মাসের মধ্যে দুই দফা বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। কিন্তু তার প্রভাব খুবই কম।

সূত্রমতে, চলতি (২০২২-২৩) ও আগামী (২০২৩-২৪) অর্থবছর পিডিবি লোকসান গুনবে প্রায় ৮৭ হাজার ৮৩৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর মধ্যে চলতি অর্থবছর লোকসান দাঁড়াবে ৪৪ হাজার ৯৫০ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং আগামী অর্থবছর ৪২ হাজার ৮৮৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এছাড়া গত (২০২১-২২) অর্থবছর সংস্থাটি লোকসান গুনে ৩১ হাজার আট কোটি ৩২ লাখ টাকা এবং ২০২০-২১ অর্থবছর ১১ হাজার ৫০৯ কোটি ১২ লাখ টাকা।

পিডিবির একাধিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছর দেশে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের (সম্ভাব্য) পরিমাণ দাঁড়াবে আট হাজার ৯৪১ কোটি ৫০ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এজন্য জ্বালানি ব্যয় পড়বে ৫৭ হাজার ৯৮৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। আর জ্বালানি-বহির্ভূত (ক্যাপাসিটি চার্জ ও বিদ্যুৎকেন্দ্র রক্ষণাবেক্ষণ) ব্যয় হবে ৩৭ হাজার ২১২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। অর্থাৎ মোট উৎপাদন ব্যয় পড়বে ৯৫ হাজার ১৯৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এ বিদ্যুৎ বিক্রি করে পিডিবির সম্ভাব্য আয় দাঁড়াবে ৫১ হাজার ৫৪৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা। অন্যান্য ব্যয় বাদ দিয়ে পিডিবির সম্ভাব্য লোকসান দাঁড়াবে ৪৪ হাজার ৯৫০ কোটি ১০ লাখ টাকা।

এদিকে আগামী অর্থবছর মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের (সম্ভাব্য) পরিমাণ ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৭১৪ কোটি ২০ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এজন্য জ্বালানি ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৬ হাজার ৮৯৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা আর জ্বালানি-বহির্ভূত ব্যয় ৪৭ হাজার ৬৯০ কোটি ৮০ লাখ টাকা। অর্থাৎ মোট উৎপাদন ব্যয় দাঁড়াবে এক লাখ চার হাজার ৫৮৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ বিদ্যুৎ বিক্রি করে পিডিবির সম্ভাব্য আয় হবে ৬৩ হাজার ১৩২ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এর থেকে অন্যান্য ব্যয় বাদ দিয়ে আগামী অর্থবছর পিডিবির সম্ভাব্য লোকসান দাঁড়াবে ৪২ হাজার ৮৮৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

অন্যদিকে ২০২১-২২ অর্থবছর দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় (আমদানিসহ) আট হাজার ৩৮২ কোটি ৩০ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এতে মোট ব্যয় হয়েছিল ৭১ হাজার ৫৮৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আর সে বিদ্যুৎ বিক্রি করে আয় হয় ৪০ হাজার ৫৭৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছর পিডিবির লোকসান দাঁড়ায় ৩১ হাজার আট কোটি ৩২ লাখ টাকা। আর ২০২০-২১ অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল (আমদানিসহ) সাত হাজার ৮৫২ কোটি ৫৬ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এতে মোট ব্যয় হয়েছিল ৪৯ হাজার ২৩৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। আর ওই অর্থবছর পিডিরিব আয় হয় ৩৭ হাজার ৭২৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এতে সংস্থাটির লোকসান দাঁড়ায় ১১ হাজার ৫০৯ কোটি ১২ লাখ টাকা।

সব মিলিয়ে চার বছরে পিডিবি লোকসানের পরিমাণ দাঁড়াবে এক লাখ ৩০ হাজার ৩৫৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা। পিডিবির একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেয়ার বিজকে বলেন, আগে পিডিবি বছরে যে পরিমাণ লোকসান গুনত, এখন এক মাসেই তার কাছাকাছি পরিমাণ লোকসান হচ্ছে। ডিসেম্বর ও ফেব্রুয়ারিতে দুই দফা বাল্ক বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলেও গ্যাসের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে ব্যয় আরও বেশি হারে বেড়েছে। আবার ৮৫ টাকার ডলার এখন ১০৭ টাকা (ব্যাংক রেট)। এসব কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। ফলে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ফল অতটা পাওয়া যাচ্ছে না।

তারা আরও বলেন, নতুন বেশ কয়েকটি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসছে। এতে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। এ কারণেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় বাড়বে। আবার অর্থ মন্ত্রণালয় চাহিদা অনুযায়ী ভর্তুকি ছাড় করছে না। সব মিলিয়ে দুই বছর (চলতি ও আগামী অর্থবছর) বিদ্যুৎ খাতের জন্য খুবই জটিল সময়।

পিডিবির প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় ছিল আট টাকা ৮৬ পয়সা। তবে চলতি অর্থবছর তা বেড়ে দাঁড়াবে ১০ টাকা ৯৮ পয়সা। আগামী অর্থবছর আরও বেড়ে দাঁড়াবে ১১ টাকা ১০ পয়সা। যদিও চলতি অর্থবছর বিদ্যুতের বাল্ক মূল্যহার ছিল পাঁচ টাকা আট পয়সা। প্রথম দফা বৃদ্ধির পর তা দাঁড়ায় ছয় টাকা ২০ পয়সা। গত মাস থেকে তা দাঁড়ায় ছয় টাকা ৭০ পয়সা। এতে চলতি অর্থবছর প্রতি ইউনিটে পিডিবির লোকসান দাঁড়াবে পাঁচ টাকা চার পয়সা। আগামী অর্থবছর তা কিছুটা কমে দাঁড়াবে গড়ে চার টাকা ৪০ পয়সা। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছর দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় ছিল ছয় টাকা ৫৮ পয়সা।