বর্তমানে দেশে মোবাইল ফোনের অ্যাকসেসরিজের বাজার দাঁড়িয়েছে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা, যা প্রতি বছর সম্প্রসারিত হচ্ছে। স্মার্টফোনের কারণে অ্যাকসেসরিজের বাজার বড় হচ্ছে
নাজমুল হুসাইন: দেশে এখন ১৩ কোটি মানুষের হাতে মুঠোফোন। আর ব্যবহারকারীদের কাছে ফিচার ফোন থেকে জনপ্রিয়তা বেড়েছে স্মার্টফোনের। বর্তমানে সামগ্রিক মুঠোফোনের বাজারমূল্য ছাড়িয়েছে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার। তবে প্রযুক্তির পরিবর্তনে কমেনি অ্যাকসেসরিজের বাজারও। মোবাইল ফোনের সঙ্গেই তাল মিলিয়ে বড় হয়েছে এর বাজারও।
মোবাইল ফোনের অ্যাকসেসরিজের বাজার কত টাকার এমন সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই। তবে দেশে এ খাত সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ মোবাইল অ্যাকসেসরিজ আমদানিকারক সমিতি, বাংলাদেশ মোবাইল ফোন আমদানিকারক সমিতি ও মোবাইল ব্যবসায়ী সমিতির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে মোবাইল ফোনের অ্যাকসেসরিজের বাজার দাঁড়িয়েছে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। যা প্রতি বছর সম্প্রসারিত হচ্ছে।
দেশে স্মার্টফোনের বাজার বাড়াতে অ্যাকসেসরিজের বাজার কমার শঙ্কা ছিল ব্যবসায়ীদের। কারণ স্মার্টফোনে ফিচার ফোনের তুলনায় মেরামতের সুযোগ অনেক কম। তবে তা হয়নি; উল্টো বেড়েছে অ্যাকসেসরিজের ব্যবহার। আগের মতো হার্ডওয়ারের মেরামত কমলেও বেড়েছে সফটওয়ারের ব্যবহার ও কাজ। এছাড়া মোবাইল ফোনের এখন ব্যবহারকারীরা প্রচুর অ্যাকসেসরিজ ব্যবহার করছেন। হেডফোন, স্ক্রিন প্রটেক্টর, কাভার, পাওয়ার ব্যাংক, মেমোরির মতো অ্যাকসেসরিজের ব্যবহার রয়েছে প্রতিটি ফোনেই। এসব পণ্যই বড় ভূমিকা রাখছে বাজার প্রসারে।
বাজার বড় হওয়ার যুক্তি দিয়ে এসবি ট্রেডার্সের আহম্মেদ বাপ্পী নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, প্রতিটি ক্রেতা মোবাইল কেনার পর এখন কভার, স্ক্রিন প্রটেক্টর, মেমোরি কার্ড, পাওয়ার ব্যাংক কিনছেই। আবার যারা সৌখিন তারা বাহুবন্ধনী, ক্লিনার, স্টিকারের মতো উপকরণ কিনছেন। এখন এক্সেসরিজ কিনতে একজন ক্রেতা ১ থেকে ২ হাজার টাকা অনায়াসে ব্যয় করছে। যাতে একটি সাধারণ ফিচার ফোন হয়। আর এ পরিমাণ টাকা আগে পুরো লাইফটাইমে একটি মোবাইল সার্ভিসিং-এ খরচ হয়নি। এছাড়া এখন প্রতিদিন প্রচুর ব্যাটারি, চার্জার বিক্রি হয়; যা আগের থেকে বেশি। সবমিলে বিক্রি আগের থেকে অনেক বেড়েছে। অনেক প্রসারিত হয়েছে এ বাজার।
গত দুই-তিন বছরে দেশে এক্সেসরিজ খাতে বড় বাজার তৈরির সঙ্গে একমত মুঠোফোন আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমপিআইএ)-এর সভাপতি নিজাম উদ্দিন জিতু। তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, গত বছরে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার মুঠোফোন দেশে এসেছে। আর অবৈধ পথে প্রচুর ফোন আসে। বর্তমানে দেশে যত সংখ্যক মুঠোফোন ব্যবহার হয়, এর মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ স্মার্টফোন। এসব স্মার্টফোনের কারণে এক্সেসরিজের বাজারও বড় হচ্ছে। এ বাজার চার হাজার কোটি টাকার কম হবে না। কারণ প্রতিটি মোবাইলে অনেক টাকার এক্সেসরিজ রয়েছে।
এদিকে সরেজমিনে মুঠোফোনের বড় এক্সেসরিজের বাজার গুলিস্তানের পাতাল মার্কেটেই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হয়। এ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, সেখানেই প্রতি মাসে বেচাকেনা হচ্ছে প্রায় ১৬ থেকে ২০ কোটি টাকার। মার্কেটটিতে দোকান আছে মোট ১০৪টি। প্রতিটি দোকানে সর্বনি¤œ গড়ে দৈনিক বেচাকেনা হয় প্রায় ৫০ হাজার টাকার থেকে ৬০ হাজার টাকা।
মার্কেট সমিতির কয়েকজন নেতা বলছেন, ব্যবহার বাড়ার কারণে আগের চেয়ে বেচাকেনা বেড়েছে কয়েকগুণ। প্রতি বছরই আনুমানিক ২৫ শতাংশ করে বাড়ছে এ ব্যবসার পরিধি। আগের তুলনায় প্রতি বছর বাড়ছে বিক্রির টাকার পরিমাণ।
অন্যদিকে রাজধানীর মোবাইল ও এক্সেসরিজের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমাহার হাতিরপুলে। এখানে মোতালেব প্লাজা ও ইস্টার্ন প্লাজা থেকে দেশের সর্বত্র পাইকারি মুঠোফোনের এক্সেসরিজ বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। এখানে ব্যবসা করেন এমন কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, স্মার্টফোনের আধিক্য বাড়ায় এক্সেসরিজের বাজার বেড়েছে। প্রতিদিন এ মার্কেট থেকে সারা দেশে প্রতিটি জেলায় এক্সেসরিজ সরবরাহ করা হচ্ছে। এমন সরবরাহকারী কোম্পানিই এ এলাকায় রয়েছে কয়েকশ।
শুধু মার্কেটেই নয়, এক্সেরিজের ব্যবসা এখন প্রচুর জমজমাট ফুটপাতের দোকানগুলোতেও। সারা রাজধানীতেই চোখে পড়ে এসব বিক্রয়কেন্দ্র। কথা বলে জানা গেছে, শুধু গুলিস্তানের এ ফুটপাতে দোকান আছে প্রায় দুই শতাধিক। মানিক চাঁদ নামে এক ফুটপাতের বিক্রেতা বলেন, প্রতিটি এসব দোকানেই ন্যূনতম গড়ে দেড় থেকে দুই হাজার টাকার বেচাকেনা হয়। অর্থাৎ প্রতিমাসে কোটি টাকার বেচাকেনা হয় গুলিস্তানের ফুটপাতেই।
এদিকে মোবাইল এক্সেসরিজ আমদানিকারক সমিতির সভাপতি মো. মাঈন উদ্দিন এক্সেসরিজের বাজার আরও সম্প্রসারিত হওয়া উচিত বলে মনে করেন। তিনি বলেন, সঠিকভাবে বিকশিত হলে এসব সামগ্রির প্রকৃত বাজার প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেত। তবে এ খাতে বিটিআরসির কোনো নীতিমালা না থাকায় অনেক বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। চায়না থেকে ই-বর্জ্য আমদানি করে নতুন মোড়কে ব্র্যান্ড আকারে বাজারজাত হচ্ছে। এ ছাড়া যত্রতত্রভাবে উৎপাদন, আমদানি ও বাজারজাত করা পণ্যে প্রকৃত বাজার তৈরি হয়নি। বাজার সম্প্রসারণ করে সরকারের রাজস্ব পেতে সঠিক নীতিমালা প্রয়োজন।