প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

বিক্রির চাপে পতনের শীর্ষে বিমা খাত

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের পুঁজিবাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে সূচক ও লেনদেন পতনের মাধ্যমে গত সপ্তাহ পার করছে। এর আগের সপ্তাহে সূচক বাড়লেও লেনদেন কমেছিল পুঁজিবাজারে। গত সপ্তাহে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত ছিল। এদিকে গত সপ্তাহে বিমা খাতের শেয়ারদর সবচেয়ে বেশি কমেছে। ফলে সপ্তাহের ব্যবধানে খাতটিতে পতন হয়েছে এবং শেয়ারদর পতনের শীর্ষে রয়েছে। এর আগের সপ্তাহে খাতটিতে শেয়ারদর বেড়েছিল। সে সময় খাতটি শেয়ারদর বৃদ্ধিতে দ্বিতীয় স্থানে ছিল। এতে সপ্তাহজুড়ে আগের সপ্তাহের মুনাফা সংগ্রহের কারণে এ পতন হয়েছে। আলোচ্য সময়ে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শীর্ষে থাকা সেবা ও আবাসন খাতে বড় উত্থান হয়েছে। ফলে আলোচ্য খাতে শেয়ারদর সব থেকে বেশি বেড়েছে। এছাড়া দর বৃদ্ধির দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সিরামিক খাতের শেয়ার। এরপর তৃতীয় স্থানে ছিল খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের শেয়ার।

গত সপ্তাহে আগ্রহ বেশি থাকা সেবা খাতের শেয়ারদর বেড়েছে ৪ শতাংশ। এ খাতে গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের ৭ দশমিক ৭০ শতাংশ বা ২১৯ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সিরামিক খাতে গত সপ্তাহে দর বেড়েছে ২ দশমিক ৩০ শতাংশ। এ খাতে ডিএসইর মোট লেনদেনের ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ বা ১২২ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। এরপর তৃতীয় স্থানে থাকা খাদ্য খাতে গত সপ্তাহে দর বেড়েছে ২ শতাংশ। এ খাতে ডিএসইর মোট লেনদেনের ৭ দশমিক ৬০ শতাংশ বা ২১৬ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। এছাড়া গত সপ্তাহে টেলিকমিউনিকেশন এবং ট্যানারি খাতের শেয়ার দর কমা বা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন হয়নি।

এদিকে গত সপ্তাহে শেয়ারদর সবচেয়ে বেশি কমেছে বিমা খাতে। এ খাতে গত সপ্তাহে ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ শেয়ারদর কমেছে। খাতটিতে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১১ দশমিক ৪০ শতাংশ বা ৩২৩ কোটি টাকা, যা সপ্তাহের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেনের খাত। ২ দশমিক ৬০ শতাংশ শেয়ারদর কমে কাগজ ও মুদ্রণ খাত দ্বিতীয় স্থানে ছিল। খাতটিতে ডিএসইর মোট লেনদেনের ৭ শতাংশ বা ১৯৯ কোটি টাকা।

অন্যদিকে গত সপ্তাহে লেনদেনের দিক থেকে প্রথম স্থানে রয়েছে আইটি খাত। খাতটিতে ডিএসইর মোট লেনদেনের ২১ শতাংশ বা ৫৯৬ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। কিন্তু খাতটিতে শূন্য দশমিক ৯০ শতাংশ শেয়ারদর বেড়েছে। এরপর তৃতীয় স্থানে থাকা ওষুধ ও রসায়ন খাতে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ বা ২৯৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। কিন্তু এ খাতে শূন্য দশমিক ৪০ শতাংশ শেয়ারদর কমেছে।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ডিএসইতে গত সপ্তাহে লেনদেনের পরিমাণ আগের সপ্তাহের তুলনায় কমেছে। ওই সময় লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৮৩৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। মোট লেনদেনের ৪৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ শেয়ার ১০ কোম্পানির দখলে রয়েছে। ওই কোম্পানিগুলোতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা।

ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৮৩৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৩ হাজার ৫০ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ২১০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা বা ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। ডিএসইতে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৫৬৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৬১০ কোটি ৩ লাখ টাকা। গেল সপ্তাহে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৪০০টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৫৩টির, দর কমেছে ১২৪টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ২০৮টি কোম্পানির। লেনদন হয়নি ১৫টি কোম্পানির শেয়ার।

গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স সামান্য পতনে লেনদেন শেষ হয়। এক সপ্তাহে ব্যবধানে ডিএসইএক্স ১ দশমিক ৫২ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ৬ হাজার ২৯৪ দশমিক ৭৩ পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস দশমিক ৫৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ৩৭৩ দশমিক ৯৬ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই৩০ সূচক দশমিক শূন্য ৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ২৩০ দশমিক ৭৩ পয়েন্টে। এদিকে গেল সপ্তাহের শেষে ডিএসইর পিই রেশিও অবস্থান করে ১৪ দশমিক ৪৫ পয়েন্টে। যা আগের সপ্তাহের শেষে ছিল ১৪ দশমিক ২১ পয়েন্ট। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পিই রেশিও বেড়েছে দশমিক ২৪ পয়েন্ট।

পুঁজিবাজারে কোনো কোম্পানির মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ১৫ পয়েন্ট ছাড়ালেই তা বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসেবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও বেঁধে দিয়েছে। এ হিসেবে ৪০ পর্যন্ত পিইধারীর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে জানায় বিএসইসি। সেই হিসেবে গত বৃহস্পতিবার ডিএসইর পিই দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৪৫ পয়েন্টে। পিই রেশিও হিসাবে বিনিয়োগ নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে।