প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

বিজনেস আইডিয়া: ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট

 তাহসিন আহমেদ: নিজের পায়ে দাঁড়াতে হলে আপনাকে উদ্যোগী হতে হবে। আর উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য ঠিক করতে হবে কী দিয়ে শুরু করবেন। এজন্য দরকার অল্প পুঁজিতে শুরু করা যায় এমন ব্যবসা। এ ধরনের উদ্যোক্তার পাশে দাঁড়াতে শেয়ার বিজের সাপ্তাহিক আয়োজন

মোবাইল ও ওয়্যারলেস ইন্টারনেটের দাম তুলনামূলক বেশি। ডেটা ব্যবহারেও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এরপরও এর কার্যক্রম থেমে নেই। কম টাকায় উচ্চ গতির ইন্টারনেটসেবা পাওয়ার একমাত্র মাধ্যম ব্রডব্যান্ড।

শুরু করবেন যেভাবে

ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবসা শুরুর আগে আপনাকে নির্দিষ্ট এলাকার ব্যবহারকারীর সংখ্যা কেমন, তা জানতে হবে। ব্যবহারকারীর সংখ্যা ও প্রতিযোগী ব্রডব্যান্ড ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কম হলে আপনার সফলতার সম্ভাবনা বেশি থাকবে।

আবেদনের নিয়ম

ব্রডব্যান্ড ব্যবসা শুরু করার জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। লাইসেন্স করার জন্য নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। ফরমে বর্ণিত সব কাগজপত্র সংযুক্ত করে বিটিআরসির প্রধান কার্যালয়ে জমা দিতে হবে। কাগজপত্র ঠিক থাকলে আবেদন করার তিন মাসের মধ্যেই লাইসেন্স পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এরপর কিনতে হবে ব্যান্ডউইথ।

ব্যান্ডউইথ কীভাবে পাবেন

ব্যান্ডউইথ বলতে একটি নেটওয়ার্ক সংযোগের মাধ্যমে কী পরিমাণ ডেটা পাঠানো হচ্ছে তাকে বোঝায়। এটি সাধারণত বিট পার সেকেন্ডে (বিপিএস) পরিমাপ করা হয়। মূলত ব্যান্ডউইথ আসে অপটিক্যাল ফাইবারের (সাবমেরিন কেবল) মাধ্যমে। তাই আপনার ব্যবসায়িক ঠিকানায় কোনো আইএসপি কোম্পানির অপটিক্যাল ফাইবার আছে কি না, তার পপস পোর্ট থাকতে হবে। বিটিসিএলের ফাইবার লাইনের পপস পোর্ট শুধু জেলা শহরগুলোয় পাওয়া যায়। দেশে এখন পর্যন্ত মোট ৩৬টি ব্যান্ডউইথ প্রোভাইডার রয়েছে। এগুলোর কোনো একটি থেকে আপনি ব্যান্ডউইথ সংগ্রহ করতে পারেন। তবে সেই প্রতিষ্ঠান যেন আপনার নাগালের মধ্যে হয়। পপস পোর্টের দূরত্ব বেশি হলে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ব্যান্ডউইথ নিতে পারবেন অথবা ম্যাগনেটিক ওয়েভ দ্বারা কানেক্টেড মোবাইল টাওয়ারের বিটিএস থেকে নিতে পারবেন ব্যান্ডউইথ। তবে এ দুই পদ্ধতিতেই ব্যান্ডউইথের দাম তুলনামূলক বেশি পড়বে। আপনার বাবসাপ্রতিষ্ঠান ঢাকার বাইরে হলে বিভাগীয় শহরগুলোয় অনেক আইএসপি তুলনামূলক কম দামে সাবলাইন দিয়ে থাকে। তাদের থেকে ব্যান্ডউইথ নিয়েও ব্যবসা করতে পারেন।

যা লাগবে

ব্রডব্যান্ড ব্যবসা করতে হলে কিছু ডিভাইস কিনতে হবে। যেমন গতি ও ব্যবহারকারী নিয়ন্ত্রণের জন্য মাইক্রোটিক রাউটার, মিডিয়া কনভার্টার, কেবল, একটি পিসি প্রয়োজন পড়বে। বেজ স্টেশন স্থাপন করার জন্য সুইচ ও বক্স লাগবে। মাইক্রোটিক রাউটার ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে হবে।

বিনিয়োগ

বিনিয়োগের পরিমাণ নির্ভর করবে আপনি কত বর্গ কিলোমিটার এলাকায় লাইন টেনে আনবেন তার ওপর। রাউটার ৩০ হাজার টাকা, মিডিয়া কনভার্টার চার হাজার টাকা, পিসি ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা, সুইচ বক্স ও কানেকশন পোর্ট প্রতি কিলোমিটার লাইনে কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা, কেবল প্রতি কিলোমিটার ১০ হাজার টাকা, লাইসেন্স ফি এক হাজার টাকা ও কানেকশন ফি ১৫ হাজার টাকা। ১৫০০ টাকায় আনলিমিটেড ব্যান্ডউইথ কিনতে পারবেন।

ঝুঁকি

ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবসায় এককালীন সবকিছু স্থাপন করে নিলে ব্যান্ডউইথ ছাড়া তেমন খরচ নেই। বর্ষাকাল ব্রডব্যান্ড ব্যবসার জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ বজ্রপাতে যন্ত্রপাতি পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

আয়

আপনি তিন ধরনের প্যাকেজ দিতে পারেন। এক মেগাবাইট ৬০০ টাকা, দুই মেগাবাইট ৮০০ টাকা, তিন মেগাবাইট ১০০০ টাকা। সব পাকেজে ৫০ জন করে গ্রাহক থাকলে এবং আপনার এলাকার একমাত্র ইন্টারনেট সরবরাহকারী হয়ে থাকলে মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। গ্রাহক বাড়ার সঙ্গে আপনার আয়ও বাড়বে। এজন্য আপনাকে এলাকায় পোস্টারিং, লিফলেট ও ব্যানারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান পরিচিতির ব্যবস্থা করতে হবে। পরিচিতি বাড়লে বছর খানেকের মধ্যে আপনার ব্রডব্যান্ড সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে সাইবার ক্যাফে হিসেবে কাজে লাগাতে পারবেন। একই সঙ্গে প্রিন্টিং, স্ক্যানিং, নানা চাকরি ও ভর্তি পরীক্ষার ফরম পূরণ করে বাড়তি উপার্জন করতে পারবেন। সাইবার ক্যাফে ব্যবসা নিয়ে অন্য আরেক দিন আলোচনা করা যাবে।