নিজস্ব প্রতিবেদক: তৈরি পোশাক খাতের রফতানি ২০২১ সালের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা ৫০ বিলিয়ন ডলার অর্জন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। বৈশ্বিকভাবে গত কয়েক বছর ধরেই রফতানির পরিমাণ কমছে। চলতি বছরও রফতানির হার আশাব্যঞ্জক নয়। এছাড়া এ খাতে ২৫ শতাংশ দক্ষ শ্রমিকের ঘাটতি রয়েছে। যে কারণে প্রায় ২০ হাজার বিদেশিকে নিয়োগ দিয়ে বছরে পাঁচ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে গবেষণায় গুরুত্ব দিতে হবে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে বিজিএমইএর সহযোগী প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর এক্সিলেন্স ফর বাংলাদেশ অ্যাপারেল ইন্ডাস্ট্রি (সিবাই) আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বৈঠকে ‘৫০ বিলিয়ন ডলার রফতানিতে করণীয়’ শীর্ষক ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন সিবাই’র পরিচালক ও ভিয়েলাটেক্সের চেয়ারম্যান রেজাউল হাসনাত ডেভিড। তিনি বলেন, শুধু সস্তা শ্রমের দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ। ৫০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে শ্রমনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে ‘পূর্ণাঙ্গ সমাধানদাতা’ হিসেবে কাজ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘তৈরি পোশাক খাতের গবেষণা এবং উন্নয়ন এখনও বিদেশি গবেষক ও প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল। তারা অনেক সময় নিজ দেশি উদ্যোক্তাদের লক্ষ্য পূরণ করছে। মূলত দেশের উদ্যোক্তারা নিজেরাই জানেন না কি করতে হবে। এমনকি কোন কোন বিষয় তাদের অজানাÑতাও তারা জানেন না। এজন্য তৈরি পোশাক খাতে নিজস্ব গবেষক এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান জরুরি।’
দক্ষ শ্রমিকের অভাবের কথা উল্লেখ করে ধারণাপত্রে বলা হয়, ‘২০১৪ সালের তথ্যমতে পোশাক খাতে যে পরিমাণ দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা আছে, তার ২৫ ভাগ ঘাটতি রয়েছে। ফলে প্রায় ২০ হাজার বিদেশি কর্মকর্তা এখানে নিযুক্ত, যারা বছরে পাঁচ বিলিয়ন ডলার নিয়ে যাচ্ছেন।’
আইএলও, সিআইডিএ এবং এইচঅ্যান্ডএমের সহায়তায় তৈরি প্রতিষ্ঠান সিবাই বাংলাদেশে পোশাক খাতের উন্নয়নে গবেষণা কাজ শুরু করে ২০১৪ সাল থেকে।
সিবাই সভাপতি ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা অধ্যয়ন অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রোবায়েত, বিজিএমইএর সাবেক সহ-সভাপতি শাহিদুল্যাহ আজিম, রাবাব গ্রুপের চেয়ারম্যান লুতফে এম আইয়ুব, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রতিনিধি তুমো পুনিয়ানিন, শাহিদ জামান ও খাদিজা খন্দকার, শ্রমিক নেতা বাবুল আখতার প্রমুখ।
সভায় বিজেএমইএর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশ মূলত টি-শার্ট, সোয়েটার, জ্যাকেট, শার্ট এবং ট্রাউজারÑএই পাঁচ ধরনের পণ্যের তৈরির ওপর নির্ভরশীল। যা তৈরি পোশাক খাতের মোট রফতানির প্রায় ৭৯ শতাংশ। বাংলাদেশকে এখন ক্রীড়া পোশাক, স্যুট, অন্তর্বাসসহ উচ্চমূল্যের পণ্য তৈরি করতে হবে। পণ্যের বৈচিত্র্যকরণের ওপর জোর দিতে হবে।’
ফারুক হাসান আরও বলেন, ‘২০১৪ সালে সারা বিশ্বে পোশাক পণ্যের মোট রফতানি ছিল ৪৮৩ বিলিয়ন ডলার। ২০১৫ সালে সেটা ৪৪৫ বিলিয়নে নেমেছে। চলতি বছরও আশাব্যঞ্জক নয়।’
অধ্যাপক শিবলী রোবায়েত বলেন, ‘৫০ বিলিয়ন রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের উপায় নির্ধারণে বিজিএমইএকেই গবেষণা করতে হবে। এছাড়া তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য এখন একটি আলাদা মন্ত্রণালয় ও আলাদা ব্যাংক চালু করা দরকার’ বলে তিনি মত দেন।
রাবাব গ্রুপের চেয়ারম্যান লুতফে এম আইয়ুব বলেন, ‘গত কয়েক বছরের প্রবৃদ্ধি থেকে গাণিতিকভাবে মনে হয় ২০২১ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব। তবে বাস্তবতা অনেক দূরে। যা সত্যিই হতাশাজনক। কারণ অবকাঠামো, শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক এবং কমপ্ল্যায়েন্স ইস্যুতে ইমেজ সংকট এখনও রয়েছে। এসব উত্তরণে সব স্টেকহোলডারকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
সিইএবিআই সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘এখনও পোশাক খাতে বাংলাদেশকে দেখা হচ্ছে রানা প্লাজা হিসেবে। এজন্য বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং অনেক জরুরি। দেশে এখন বিশ্বসেরা কারখানা রয়েছে। সেটা নিয়ে প্রচার কম হচ্ছে। দক্ষ জনশক্তি, জমির সহজলভ্যতা, জ্বালানি সরবরাহ, বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো এবং স্থিতিশীল রাজনীতি অত্যন্ত জরুরি।’
সিইএবিআই পরিচালক এবং বিজিএমইএর সাবেক সহ-সভাপতি শাহিদুল্যাহ আজিম বলেন, ‘শুধু শ্রমিকদের নয়, উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে তৈরি পোশাক খাতের সব পর্যায়ের জনশক্তিকেই প্রশিক্ষিত করতে হবে।’
শ্রমিক নেতা বাবুল আখতার বলেন, ‘শ্রম অসন্তোষ থাকলে লক্ষ্য অর্জনে ঝুঁকি রয়ে যাবে। শ্রম অসন্তোষের কারণ কি সেটা জানার জন্য গবেষণা করা দরকার।’