প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

বিদায়ী সপ্তাহে সব খাতেই বেড়েছে শেয়ারদর

দুই সিদ্ধান্তে সুবাতাস পুঁজিবাজারে

আতাউর রহমান: সপ্তাহজুড়ে টানা উত্থানের মধ্য দিয়ে সপ্তাহ পার করেছে দেশের পুঁজিবাজার। এর মাধ্যমে দেশের পুঁজিবাজারে সূচক, লেনদেন ও বাজার মূলধনসহ লেনদেনকৃত শেয়ার ও ইউনিটের ৯৪ শতাংশ বেড়েছে। সেই সঙ্গে পুঁজিবাজারের প্রতিটি খাতেই রিটার্ন বেড়েছ্।ে এতে আগামী সপ্তাহে বাজার ভালো যাবে বলে আশা করছেন বাজার-সংশ্লিষ্টরা।

সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহে লেনদেন শেষে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের সপ্তাহের তুলনায় ৫ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। লেনদেন বেড়েছে ৫৯ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং সপ্তাহ শেষে বাজার মূলধন বেড়েছে ৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এরই সঙ্গে ডিএসইর পিই রেশিও বেড়েছে ৪ দশমিক ১৯ পয়েন্ট।

সাপ্তাহিক খাতভিত্তিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহে সব কয়টি খাতেই রিটার্ন বেড়েছে। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বিবিধ খাত। আলোচিত খাতটিতে গত সপ্তাহে ৯ শতাংশ রিটার্ন এসেছে। এরপর ৮ দশমিক ৯ শতাংশ রিটার্নের মাধ্যমে রয়েছে সেবা ও আবাসন খাত। বস্ত্র খাত ৮ দশমিক ৬ শতাংশ রিটার্ন নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। চতুর্থ স্থানে রয়েছে সিমেন্ট খাত, খাতটিতে রিটার্ন এসেছে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ। ৭ দশমিক ৯ শতাংশ রিটার্নে নিয়ে পেপার ও প্রিন্টিং খাত পঞ্চম স্থানে রয়েছে। এরপর ধারাবাহিকভাবে সব খাতেই রিটার্ন এসেছে।  

বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়তে শুরু করেছে। যে কারণে লেনদেনও বাড়তে শুরু করেছে। আশা করা যাচ্ছে আগামী সপ্তাহেও এই উত্থানের ধারা অব্যাহত থাকবে। ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ শেয়ারের ক্রয়মূল্য হওয়ার কারণে এখনও অনেক ব্যাংকের ২৫ শতাংশ বিনিয়োগের কোটা বাকি রয়েছে। যে কারণে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগে আসতে শুরু করেছে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নরের কথা অনুযায়ী শিগগিরই বন্ডগুলো সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ করবে। তখন লেনদেন আরও বেড়ে যাবে এবং বাজারে গতিশীলতা লক্ষ করা যাবে।

সব খাতে রিটার্নের বিষয়ে তারা বলেন, টানা পতনের কারণে অনেক শেয়ার সঠিক দামের নিচে চলে গিয়েছিল। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে দেয়ায় এবং ব্যাংক এক্সপোজারের বিষয়টি নিয়ে শঙ্কা কাটতে শুরু করলে ব্যাংকগুলো সীমা অনুসারে বিনিয়োগ বাড়াতে লাগল। ব্যাংকগুলো কম দামে ভালো শেয়ার ক্রয় করায় পরবর্তীতে ভালো রিটার্নের সুযোগ রয়েছে। এতে সব খাতের শেয়ারে আগ্রহ বাড়তে লাগল, যাতে সপ্তাহজুড়ে লেনদেন শেষে দেখা গেল সব খাতের রিটার্ন ভালো হয়েছে।

এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, উত্থান-পতন এটা পুঁজিবাজারের স্বাভাবিক বিষয়। বাজারে যখন পতন হতে শুরু করে তখন কিছু বিনিয়োগকারী হতাশ হয়ে যায় এবং পেনিক সৃষ্টি করে। বিশেষ করে যারা বাজারে না বুঝে বিনিয়োগ করে থাকে। যে কারণে বিএসইসি ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে। কিন্তু শেয়ারে কখনও ফ্লোর প্রাইস থাকা ঠিক নয়। তবে বিএসইসির ফ্লোর প্রাইসের কারণে কিছু বিনিয়োগকারীর ভালো হচ্ছে।

ব্যাংক বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যাংক এক্সপোজারের বিষয়টি বড় কোনো বিষয় ছিল না। কারণ শেয়ারের দর বেড়ে গেলে ব্যাংকগুলোকে তাদেও সীমার মধ্যে আসতে শেয়ার বিক্রি করা লাগত। যে কারণে বিনিয়োগ কিছুটা বাকি থাকত এবং বাজারে শেয়ার ফোর্স সেলের ঘটনা ঘটত। সেটা শুধু এখন সমাধান হয়েছে। কিন্তু শেয়ারগুলো যখন ক্রয়মূল্যের নিচে যাবে তখন কী হবে, ব্যাংকগুলো তো আর তখন বিনিয়োগ করবে না।

তিনি আরও বলেন, বাজার ভালো যাবে সেটা সবাই চায়। সবাই শুধু চায় বাজার উত্থানে থাকবে। যখন টানা উত্থানে থাকে তখন কিছু বলে না, আর পতন হলেই তখন পেনিক শুরু করে। বাজারকে নিজের গতিতেই চলতে দেয়া দরকার। বাজারে যেমন উত্থান থাকবে তেমন কারেকশন হয়ে পতনও হবে।

আগামী সপ্তাহের বাজার প্রত্যাশার বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, আশা করছি এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। ইতোধ্যে বাজারের কিছু অনিশ্চয়তা কেটেছে এবং সামনে আরও কাটবে। বিশেষ করে ব্যাংক এক্সপোজারের বিষয়টি দীর্ঘদিন অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিল, সেটার সমাধান হয়েছে। শিগগিরই বন্ড বিনিয়োগ শুরু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এছাড়া এইর মধ্যে নতুন বিনিয়োগ আসতে শুরু করেছে, সামনে আরও আসবে বলে আশা করা যা”। সব মিলিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যে অনিশ্চয়তা ছিল সেগুলো অনেকটাই কেটেছে, আস্তে আস্তে সেগুলো কেটে যাবে। তাই বাজারে এই উত্থানের ধার অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

ফ্লোর প্রাইসের বিষয়ে তিনি বলেন, ফ্লোর প্রাইস সাময়িক সময়ের জন্য। এটা আপাতত দেয়া হয়েছে বিনিয়োগকারীদের বড় ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে। ধীরে ধীরে বাজার যখন ভালো হবে তখর আগের বারের মতো ফ্লোর প্রাইসও তুলে নেয়া হবে। কারণ শেয়ারে ফ্লোর প্রাইস থাকা ঠিক নয়।