যুক্তরাষ্ট্রে গতকাল শুরু হয়েছে অর্থনীতিবিষয়ক ‘রোডশো’। ১০ দিনের এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অর্থনীতির সক্ষমতা, বিনিয়োগ, বাণিজ্য, বাংলাদেশি পণ্য ও সেবা, পুঁজিবাজার এবং বন্ড মার্কেটকে তুলে ধরা হবে। এখন বিএসইসি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল সেখানে অবস্থান করছে। বর্তমান কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করার পরই পুঁজিবাজারে শীর্ষ মূলধনি কোম্পানির একটি রবি আজিয়াটার মতো ভালো ভালো কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এছাড়া এসময় পুঁজিবাজারে নানা সংস্কার হয়েছে। পুঁজিবাজারের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে শেয়ার বিজের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মুখোমুখি হন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন শেয়ার বিজের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক শেখ সাজিদ। পাঠকদের জন্য এর চৌম্বক অংশ প্রকাশ করা হলো।
শেয়ার বিজ: বর্তমান কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করার পর আমরা পুঁজিবাজারে নানা উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছি। এর আলোকেই যুক্তরাষ্ট্রে রোডশো আয়োজন করা হয়েছে। পুঁজিবাজারের জন্য নিশ্চয়ই এটি ভালো দিক। এ রোডশো আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য কী?
শিবলী রুবাইয়াত–উল–ইসলাম: গত ১০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির ঈর্ষণীয় অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু এসব তথ্য সঠিকভাবে সব জায়গায় পৌঁছায়নি। অর্থনীতির সব সূচকে আমরা এগিয়েছি। সামগ্রিকভাবে মূল্যায়ন করলে আগামী দিনে বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্ভাবনা বিশাল। কিন্তু আমাদের অর্থনীতির যে অর্জন ও সম্ভাবনা রয়েছে, উন্নত দেশগুলোর বিনিয়োগকারীদের কাছে তা সেভাবে তুলে ধরা হয়নি, যে কারণে আমাদের দেশে ওইভাবে বিদেশি বিনিয়োগও আসেনি। তাই আমরা এ ধরনের ‘রোডশো’র উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা আমাদের পুঁজিবাজার ও অর্থনৈতিক অবস্থা সবার কাছে ছড়িয়ে দিতে চাই।
শেয়ার বিজ: মূলত কোন ধরনের ইনভেস্টরদের উদ্দেশে এই ‘রোডশো’র আয়োজন করা হয়েছে?
শিবলী রুবাইয়াত–উল–ইসলাম: দুই ধরনের ইনভেস্টরের জন্য এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এক হচ্ছে যারা প্রবাসী বিনিয়োগকারী রয়েছেন, তারা। রোডশোর মাধ্যমে তারা দেশের পুঁজিবাজার সম্পর্কে জানতে পারবেন। অর্থনৈতিক সূচকগুলো কেমন রয়েছে, তাও জানতে পারবেন। এছাড়া যারা বিয়েল ইনভেস্টর রয়েছেন, বিশেষ করে তাদের জন্য এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা। অর্থাৎ ব্যাংকসহ যারা বিভিন্ন সেক্টরে বিনিয়োগ করেন, সেসব বিনিয়োগকারীর জন্য এমন একটি আয়োজন করা হয়েছে। আশা করছি আমরা ইতিবাচক সাড়া পাব।
শেয়ার বিজ: এ ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কী পরিমাণ বিদেশি ইনভেস্টর আসতে পারে বলে মনে করেন?
শিবলী রুবাইয়াত–উল–ইসলাম: আসলে এটা তো সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়। তবে আমরা অনেক বেশি সাড়া পাচ্ছি। অনেকেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। আশা করছি রোডশোর মাধ্যমে এখান থেকে বাংলাদেশে বড় ধরনের বিনিয়োগ আসবে।
শেয়ার বিজ: এর আগে দুবাইয়ে রোডশো হয়েছিল ফেব্রুয়ারিতে। সেখান থেকে আমাদের কতটুকু অর্জন হয়েছে বলে মনে করছেন?
শিবলী রুবাইয়াত–উল–ইসলাম: আমি বলব, সেই রোডশো সফল হয়েছে। সেখানে রোডশো করার পর আশানুরূপ বিনিয়োগ এসেছে। অনেক বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। এই বিনিয়োগ শুধু সেকেন্ডারি মার্কেটেই নয়, এখন আমরা বন্ড ও মিউচুয়াল ফান্ডেও বিদেশি বিনিয়োগ দেখতে পাচ্ছি। আমাদের মার্কেট আরও বড় হবে। তাই সেখানে বিদেশি বিনিয়োগ দরকার। পর্যায়ক্রমে সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের দিকে লক্ষ রেখে ভবিষ্যতে বিভিন্ন দেশে এ ধরনের আরও আয়োজন থাকবে।
শেয়ার বিজ: আপনি কি মনে করেন এ ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বন্ড মার্কেটকে বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলা যাবে?
শিবলী রুবাইয়াত–উল–ইসলাম: অবশ্যই। মানুষ ফেয়ার বা মেলা কেন করে? নিজেদের পণ্য প্রদর্শনের জন্যই তো! আমাদের যেহেতু পণ্য নেই, সেহেতু অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তির বিবেচনায় বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী এই দেশটিতে বাংলাদেশকে তুলে ধরব। বিদেশি ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ আকর্ষণই এ আয়োজনের মূল লক্ষ্য।
শেয়ার বিজ: বর্তমানে পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?
শিবলী রুবাইয়াত–উল–ইসলাম: বর্তমানে পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থা ভালো। মার্কেট শক্তিশালী হচ্ছে। আশা করছি শিগগিরই আমরা খুব ম্যাচিউর একটি মার্কেট দেখতে পাব। মার্কেট যাতে আরও ভালো হয়, আমরা সে চেষ্টা করে যাচ্ছি। মার্কেটের যখন খারাপ অবস্থা ছিল, তখন আমরা ধস ঠেকাতে ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দিয়েছিলাম। আবার মার্কেট ঠিক হয়ে গেলে তা তুলে দেয়া হয়েছে। মার্কেটের স্বার্থেই আমরা ‘জেড’ ক্যাটেগরির শেয়ারের লেনদেন নিষ্পত্তির সময় কমিয়ে টি+১ করেছি। অনিয়মের দায়ে অনেক কোম্পানিকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। দুর্বল কোম্পানিগুলোর আইপিও বাতিল করেছি। চলছে ওটিসি মার্কেটের সংস্কার। প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সবাই পুঁজিবাজারের প্রতি আন্তরিক। আমরাও চেষ্টা করে যাচ্ছি। সব মিলে ভালোর দিকে যাচ্ছে পুঁজিবাজার। আশা করছি আমরা সফল হব।
শেয়ার বিজ: শেয়ার বিজের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: আপনাদেরও অনেক ধন্যবাদ।