প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

বিদ্যুতের দাম বাল্কে বেড়েছে ১৮৩ ও গ্রাহক পর্যায়ে ১১১ শতাংশ

বর্তমান সরকারের মেয়াদকাল

ইসমাইল আলী: ১৪ বছরে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় তিনগুণ হয়েছে। ব্যয় বৃদ্ধির এ ধাক্কা ভর্তুকি দিয়ে মেটানো যায়নি। এজন্য দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। আজ থেকে আরেক দফা বাড়ছে বাল্ক (পাইকারি) ও গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম। এবারসহ বাল্ক বিদ্যুতের দাম ১২ বছরে বাড়ল ১০ বার। আর গ্রাহক পর্যায়ে বাড়ানো হলো ১৩ বছরে ১১ বার। এতে বর্তমান সরকারের সময়ে বাল্ক বিদ্যুতের দাম বাড়ল প্রায় ১৮৩ শতাংশ ও গ্রাহক পর্যায়ে ১১১ শতাংশ।

বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির চিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১১ সালের শুরুতে বাল্ক বিদ্যুতের দাম ছিল দুই টাকা ৩৭ পয়সা। বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে ছয় টাকা ৭০ পয়সা। আর ২০১০ সালের শুরুতে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ছিল তিন টাকা ৯২ পয়সা। বর্তমানে তা দাঁড়াল সাত টাকা ৮৬ পয়সা। তবে এ দাম আগামীতে আরও বাড়বে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়তে থাকলে ২০১১ সালে তিনবার বাল্ক মূল্যহার বাড়ানো হয়। ওই বছর ফেব্রুয়ারিতে প্রথম বাল্ক মূল্যহার ১১ শতাংশ বাড়ানো হয়। এতে মূল্যহার দাঁড়ায় দুই টাকা ৬৩ পয়সা। আগস্টে বাড়ানো হয় ছয় দশমিক ৬৬ শতাংশ দাম। এতে দাম বেড়ে হয় দুই টাকা ৮০ পয়সা। আর ডিসেম্বরে ১৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ বাড়িয়ে করা হয় তিন টাকা ২৭ পয়সা।

২০১২ সালেও তিনবার বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানো হয়। ওই বছরে ফেব্রুয়ারিতে বাল্ক মূল্যহার ১৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ বাড়ানো হয়। এতে মূল্যহার দাঁড়ায় তিন টাকা ৭৪ পয়সা। মার্চেই আবার সাত দশমিক ৪৯ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। এতে বাল্ক দাম বেড়ে হয় চার টাকা দুই পয়সা। আর আগস্টে ১৬ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়িয়ে করা হয় চার টাকা ৭০ পয়সা। তবে পরে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোয় বেশি বিক্রি করায় বাল্ক মূল্যহার কিছুটা কমে দাঁড়ায় চার টাকা ৬৭ পয়সা। এরপর কয়েক বছর বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়নি।

২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে বাল্ক মূল্যহার চার দশমিক ৯৩ শতাংশ বাড়িয়ে করা হয় চার টাকা ৯০ পয়সা। তবে সেবারও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোতে বেশি বিদ্যুৎ বিক্রি করায় বাল্ক মূল্যহার কিছুটা কমে দাঁড়ায় চার টাকা ৮৭ পয়সা। তবে ২০১৭ সালে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) প্রস্তাব করলেও তা বাতিল করে দেয় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। সেবার মূল্যহার না বাড়িয়ে উল্টো কমিয়ে দেয় বিইআরসি। সে সময় এ হার নির্ধারণ করে দেয় চার টাকা ৮৪ পয়সা।

এরপর আবারও তিন বছর বাল্ক মূল্যহার বাড়ানো হয়নি। তবে এ সময় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোতে বেশি বিদ্যুৎ বিক্রি করায় আগের মতোই বাল্ক মূল্যহার কিছুটা কমে দাঁড়ায় চার টাকা ৭৭ পয়সা। ২০২০ সালের মার্চে বিদ্যুতের বাল্ক মূল্যহার আট দশমিক ৪০ শতাংশ বাড়ানো হয়। এতে বাল্ক দাম বেড়ে হয় পাঁচ টাকা ১৭ পয়সা। গত বছর ডিসেম্বরে ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাল্ক মূল্যহার বাড়ানো হয়। এতে বাল্ক দাম বেড়ে হয় ছয় টাকা ২০ পয়সা। আর সর্বশেষ আজ থেকে পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ছে আট দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ। এতে বাল্ক বিদ্যুতের দাম দাঁড়াচ্ছে ছয় টাকা ৭০ পয়সা।

এদিকে ২০১০ সালের শুরুতে মার্চে গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহকৃত বিদ্যুতের গড় মূল্য ছিল তিন টাকা ৭৩ পয়সা। ওই বছর মার্চে তা পাঁচ শতাংশ বাড়িয়ে তিন টাকা ৯২ পয়সা করা হয়। পরের বছর (২০১১ সাল) গ্রাহক পর্যায়ে দুই দফা বাড়ানো হয় বিদ্যুতের দাম। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে বাড়ানো হয় পাঁচ শতাংশ ও ডিসেম্বরে ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। এতে বিদ্যুতের গড় দাম বেড়ে দাঁড়ায় চার টাকা ৬৭ পয়সা। ২০১২ সালেও খুচরা বিদ্যুতের দাম দুই দফা বাড়ানো হয়। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে বাড়ে সাত দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ ও সেপ্টেম্বরে বাড়ে ১৫ শতাংশ। এতে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে বিদ্যুতের গড় মূল্য বেড়ে দাঁড়ায় পাঁচ টাকা ৭৫ পয়সা।

এরপর ২০১৪ সালের মার্চে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ছয় দশমিক ৯৬ শতাংশ বাড়িয়ে করা হয় ছয় টাকা ১৫ পয়সা। আর ২০১৫ সালের সালের সেপ্টেম্বরে তা দুই দশমিক ৯৩ শতাংশ বেড়ে হয় ছয় টাকা ৩৩ পয়সা। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম আবারও পাঁচ দশমিক ৩০ শতাংশ বাড়ানো হয়। সে সময় বিদ্যুতের গড় মূল্যহার ছয় টাকা ৮৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে ওইবারই প্রথম বিদ্যুৎ বিতরণকারী সবগুলো কোম্পানির জন্য অভিন্ন মূল্যহার নির্ধারণ করা হয়। এতে ঢাকার চেয়ে বেশি গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতের দাম বেশি হারে বাড়ে। এর প্রভাবে মূল্যহার কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে দাঁড়িয়েছে গড়ে ছয় টাকা ৭৭ পয়সা।

সংশোধিত মূল্যহারের ভিত্তিতে ২০২০ সালের মার্চে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের গড় মূল্যহার পাঁচ দশমিক ৩০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এতে গড় মূল্যহার দাঁড়িয়েছে সাত টাকা ১৩ পয়সা। আর চলতি বছর পরপর দুই মাসে বিদ্যুতের গড় মূল্যহার পাঁচ শতাংশ করে বাড়ানো হল। এতে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্যহার বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাত টাকা ৮৬ পয়সা। তবে এ দুবারই গণশুনানি উপেক্ষা করে দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়া হয়।