বিদ্যুৎ খাতে ক্যাপাসিটি চার্জ নামক রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় এ খাতে আমাদের সাফল্যকে অনেকটাই ম্লান করে দিচ্ছে। ভাড়াভিত্তিক (রেন্টাল) ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক (কুইক রেন্টাল) বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সরকারের বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কম দামে জ্বালানি দেয়া ও সেগুলোর কাছ থেকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনার পর তা ভোক্তার কাছে সরকার বিক্রি করছে কম মূল্যে। এভাবে তিন ধাপে কেনাবেচায় বছরে মোটা অঙ্কের অর্থ গচ্চা দিচ্ছে সরকার। তীব্র বিদ্যুৎ সংকট মেটাতে তেলচালিত ভাড়া ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে হয়েছিল। জরুরি ভিত্তিতে বিশেষ আইনের আওতায় প্রতিষ্ঠিত এসব কেন্দ্র বিদ্যুৎ সংকট মিটিয়েছে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতেও কিছুটা সহায়ক হয়েছে; কিন্তু এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে দিতে হচ্ছে বড় মূল্য। দুর্ভাগ্যের বিষয়, ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনতে পরামর্শ আমলে তো নেয়াই হচ্ছে না, বরং নতুন করে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে।
গতকাল শেয়ার বিজে ‘পাইপলাইনে ১৭ বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র: ২০৫১ সাল পর্যন্ত টানতে হবে ক্যাপাসিটি চার্জের বোঝা’ শীর্ষক প্রতিবেদন পড়ে পাঠক হতাশই হয়েছেন বলে ধারণা।
বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য নিয়মিতই ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি)। যদিও এসব কেন্দ্রের বড় অংশই অলস বসে থাকছে। এতে বিদ্যুৎ খাতের বোঝা হয়ে উঠেছে কেন্দ্রভাড়া (ক্যাপাসিটি চার্জ)। তবে এ চার্জ থেকে সহজেই মুক্তি পাচ্ছে না বাংলাদেশ। বেসরকারি খাতে নতুন কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি না দিলেও আরও ২৯ বছর টানতে হবে ক্যাপাসিটি চার্জের বোঝা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের এশীয় ও প্যাসিফিক বিভাগের প্রতিনিধিদল সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগ ও পিডিবির সঙ্গে বৈঠক করে। আইএমএফ প্রতিনিধিদলের প্রশ্ন ছিলÑবিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় যে ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হচ্ছে, সেটি ২০৩০ সালে শেষ হবে কি না? তখন পিডিবি বলেছে, ‘সেটি সম্ভব নয়, কারণ নতুন বেশকিছু আইপিপি (ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) আসছে। সেগুলোকেও ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে।
পাইপলাইনে থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন আমাদের প্রতিবেদক। তিনি দেখিয়েছেন বেসরকারি, দেশীয় ও বিদেশি যৌথ বিনিয়োগে আরও বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে ১৭টি কেন্দ্রের জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হবে ২০৫১ সাল পর্যন্ত। আর চলমান কেন্দ্রগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ শেষ হবে ২০৪৭ সালে। চুক্তির কারণে পুরো ক্যাপাসিটি চার্জই পরিশোধ করতে হয়; মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে সরকারের পক্ষ থেকে চুক্তি বাতিলেরও সুযোগ নেই।
অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, দেশ বড় ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কেন্দ্র ভাড়া পরিশোধ করতে হবে। যেসব কেন্দ্র জাতীয় সঞ্চালন লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে না (অলস বসে থাকছে), এগুলোকে কেন ভাড়া দিতে হবেÑএ প্রশ্নের উত্তর আমাদের জানা নেই। নানা কারণে দেশে অনিশ্চিত পরিস্থিতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সরকারপ্রধানের বক্তব্যেও সে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা আশা করতেই পারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের অতিরিক্ত ক্যাপাসিটি চার্জ কমিয়ে আনতে সরকার শূন্যসহনশীলতায় সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেবে।