প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

বিদ্যুৎ খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করুন

বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোর রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোয় দুর্নীতি বহুল আলোচিত বিষয়। এই দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করার তাগিদ থেকেই প্রতিনিয়ত দুর্নীতি নিরূপণ এবং নিবারণের কৌশল খুঁজতে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞদের কোনো কাজ নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও তারা জনগণের কল্যাণচিন্তা থেকেই গবেষণা করেন বলেই সাধারণ মানুষের ধারণা। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সংগঠন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এ ধরনেরই সংগঠন।  

রাজধানীর ধানমন্ডিতে নিজস্ব কার্যালয়ে ‘নতুন নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি ২০২২ (খসড়া): এটি কি পরিচ্ছন্ন জ্বালানির লক্ষ্য পূরণ করতে সক্ষম হবে?’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন করে সিপিডি। এখানে সিপিডি বলেছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিদ্যুৎ খাতে সরকারকে যে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে তার মূলে রয়েছে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও ত্রুটিপূর্ণ বিদ্যুৎ ক্রয়ের চুক্তিগুলো। পাশাপাশি ২০১০ সালে প্রণীত ও ২০২১ সালে সংশোধিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনের ক্ষমতাবলে সরকার অপচয়কে উৎসাহিত করছে এবং এর ফলে একশ্রেণির কোম্পানি অতি মুনাফা লুটে নিচ্ছে। সিপিডি বলছে, বিদ্যুৎ খাতে অদক্ষতা ও অনিয়মের কারণে এ খাতে সরকারের বিপুল পরিমাণ ভর্তুকির দায় মেটাতে হচ্ছে জনগণকেই। বর্তমানে আইনটির প্রয়োজন নেই উল্লেখ করে সিপিডির গবেষকরা দ্রুত আইনটি বাতিল করার দাবিও জানিয়েছেন।

সাধারণ মানুষ জানে, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের দাম সবচেয়ে কম। অথচ নতুন চুক্তির অধীনে আমরা ভারত থেকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ আনা শুরু হয়েছে; সেটার দাম প্রতি ইউনিট ১৫ টাকা। বিদ্যুৎ জ্বালানির দাম বৃদ্ধির বিষয়ে সম্প্রতি সরকার আইনে সংস্কার এনেছে। তাতে সরকার জরুরি প্রয়োজনে কোনো ধরনের শুনানি ছাড়াই বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বাড়াতে পারবে। জনগণ জানতেও পারবে না কোন মাসে কেন বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। আমাদের বিদ্যুৎ খাতে কখনোই শৃঙ্খলা ও জবাবদিহি ছিল না। দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতাও ছিল। কখনও নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে বলা হচ্ছে, মোট ক্ষমতার প্রায় অর্ধেক বিদ্যুৎকেন্দ্রই অলস পড়ে আছে। এরপরও সরকারঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি দেয়া হচ্ছে।

বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য পিডিবিকে প্রতি বছর বিপুল ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয়। এটি দুঃখজনক। এ অবস্থায় আমাদের উচিত বিদ্যুতের চাহিদা ও পরিকল্পনা পর্যালোচনা করা, অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ক্রমেই বন্ধ করা এবং মাস্টারপ্ল্যান জরুরিভাবে পর্যালোচনা করা। কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই বেসরকারি কোম্পানিগুলো বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেবে, এটি প্রত্যাশিত নয়। কেন অলস বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য পিডিবির ক্যাপাসিটি চার্জ ক্রমেই বেড়ে যাবে! বিদ্যুৎ উৎপাদনে রাষ্ট্রের সাফল্য উল্লেখযোগ্য। কিন্তু ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়ও হতাশাজনক। অপচয়, দুর্নীতি ও জনদুর্ভোগ কমাতে বিদ্যুৎ খাতে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।