প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

বিদ্যুৎ ব্যবহারে আমাদেরও সচেতন হতে হবে

জাতীয় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহ ২০১৬-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সচেতন ও সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এও জানিয়েছেন, ঘর থেকে বের হওয়ার সময় তিনি নিজেই লাইট বন্ধ করেন। নিজের কাজ নিজে করতে লজ্জার কিছু নেই

প্রধানমন্ত্রীর এ মনোভাব আশা করি সবাইকে উদ্বুদ্ধ করবে। তার সঙ্গে আমরাও একমত যে, সবাই যদি অপ্রয়োজনে বাসা ও অফিসে লাইট, ফ্যান, এসি ইত্যাদি বন্ধ রাখি এবং ঘর থেকে বের হওয়ার সময় এগুলো বন্ধ করার কষ্টটুকু করি, তাহলে অনেক বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে পারি।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। চাহিদা মোতাবেক জোগান দিতে গিয়ে সরকারকে হিমশিম খেতে হচ্ছে এখনও। বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনেরও তোড়জোড় চলছে। বেসরকারি প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ কিনেও প্রয়োজন পুরো মেটানো যাচ্ছে না। চাহিদা ও জোগানের ফাঁক থেকে যাচ্ছে সবসময়ই। যখন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে, তখনও দেখা যাবে চাহিদা এতো বেড়েছে যে সাশ্রয়ী না হয়ে উপায় নেই। গোটা দুনিয়াতেই জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রভাব পড়ছে পরিবেশে। দিন দিন কমছে জীবাশ্ম জ্বালানির মজুত; বাড়ছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ। অন্যদিকে বিদ্যুৎ বেশি থাকলেই যে ব্যবহার করতে হবে, সে মনোভাব থেকেও বেরিয়ে আসা প্রয়োজন। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বিভিন্ন অফিস-আদালতে দিনের পর দিন অপ্রয়োজনে বাতি জ্বলতে থাকে, ঘুরতে থাকে ফ্যান। কর্মস্থলের বিদ্যুৎ বিল নিজেকে দিতে হয় না বলে এ-ব্যাপারে সচেতনতাও অনেকের নিজের দিক থেকে আসে না। বিদ্যুৎ ব্যবহারে নিজ বাসাবাড়িতে যে সচেতনতাটুকু প্রয়োগ করি, সেটি আবার কর্মস্থলে প্রয়োগ করি না বা করতে চাই না অনেকে। অথচ সবাই সচেতন হলে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ সাশ্রয় সম্ভব, তাতে সরকারের ওপর কিছুটা হলেও চাপ কমানো যেত। নিজেরাও বিদ্যুৎজনিত ভোগান্তি থেকে অনেকটা মুক্তি পেতাম।

 

মানুষের সচেতন হওয়ার পাশাপাশি অফিস, বাড়ি বা ভবনের নকশাতেও বিদ্যুৎ-সচেতনতার প্রয়াস নেওয়া প্রয়োজন। অফিস বা বাসা তৈরির সময় যদি এমনভাবে নকশা করা হয়, যেখানে সহজে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস ঢুকবে, তাতে কিন্তু কমবে বিদ্যুতের চাহিদা। চাহিদা বাড়া ও বিদ্যুৎ অপচয় দুটির সঙ্গেই জীবনযাপন-পদ্ধতি সরাসরি জড়িত। শুধু যে সরাসরি সচেতনতার মাধ্যমে বিদ্যুতের অপচয় রোধ করা যাবে তা নয়, দৈনন্দিন কিছু অভ্যাসকে বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীলতা থেকে বের করে নিয়ে আসতে পারলেও এর চাহিদা কমানো সম্ভব। বিদ্যুতের ওপর অত্যধিক নির্ভরশীলতা সুস্বাস্থ্য ও সুন্দর জীবনযাপনের সহায়ক কি না, তা নিয়ে গবেষণা হতে পারে।

বিদ্যুৎ পরিচালন ও বিতরণেও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। সিস্টেম লসের কারণে প্রচুর বিদ্যুৎ নষ্ট হয়, তাতে দুর্নীতিও রয়েছে। অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে বা কম বিল দিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহারের খবর আমরা মাঝেমধ্যেই শুনি। সেগুলোও বিদ্যুতের চাহিদা ও খরচ বাড়ায়। বিদ্যুৎ-সাশ্রয়ী হতে হলে শুধু একদিকে নয়, সবদিকেই সমান নজর দেওয়া প্রয়োজন।