প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা

আবু সালেহ মোহাম্মদ মুসা :রহিমা বেগমের ঘরে রান্নার চাল-ডাল নেই, নেই কোনো খাদ্যসামগ্রী। ছোট্ট  শিশুসন্তান দুটির ‘মা খেতে দাও; খেতে দাও’ চিৎকার মায়ের জন্য কতটা বেদনাদায়ক, মায়ের মনের অবস্থা কি দুঃসহ তা বুঝতে কারোরই বাকি নেই। কিন্তু উপায় কী? কে আসবে এ মুহূর্তে তাকে সাহায্যের হাত বাড়াতে, আত্মীয়স্বজনরাও ভালো অবস্থানে আছে তা তো নয়, আর এক-দু’বার সাহায্য করতে সম্মত হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে এগুলো টেনে নিয়ে এগিয়ে চলতে কেউ কি আছেন! স্বামী যে দায়িত্ব পালন করতে পারছে না বা করছে না তা কি অন্য কারও দ্বারা কখনও সম্ভব হয়? এমন একটা পরিস্থিতিতে মমতাময়ী মানুষের সেবা প্রদান একান্ত জরুরি। সরকার এসব অবস্থা আমলে নিয়ে বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়।

১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলাদের ভাতা কর্মসূচি প্রবর্তন করা হয়। ওই অর্থবছরে ৪ লাখ ৩ হাজার ১১০ জনকে এককালীন মাসিক ১০০ টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হয়। ২০০৩-০৪ অর্থবছরে এ কর্মসূচিটি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়।

বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা কর্মসূচি বাস্তবায়নে অধিকতর গতিশীলতা আনয়ণের জন্য সরকার পুনরায় ২০১০-১১ অর্থবছরে এ কর্মসূচি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় হতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত হওয়ার পর এ কর্মসূচিতে অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য বিদ্যমান বাস্তবায়ন নীতিমালা সংশোধন করে যুগোপযোগীকরণ, উপকারভোগী নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ  অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্তকরণ,  ডেটাবেজ প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। সে সময়ে ভাতাভোগীর সংখ্যা ছিল ৯ লাখ ২০ হাজার জন এবং জনপ্রতি মাসিক ভাতার পরিমাণ ছিল ৩০০ টাকা। বর্তমান সরকারের উদ্যোগে প্রবর্তিত এ কর্মসূচির সকল উপকারভোগীকে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডার নগদ ও বিকাশ এবং এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জিটুপি পদ্ধতিতে (গভর্নমেন্ট টু পারসন) সফলভাবে ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। এ কর্মসূচির আওতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৪ লাখ ৭৫ হাজার বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীকে জনপ্রতি মাসিক ৫০০ টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ হাজার ৪৯৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

সরকার মূলত ৪টি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সামনে রেখে এ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑ

এক. বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলাদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও সামাজিক নিরাপত্তা বিধান;

দুই. পরিবার ও সমাজে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি;

তিন. আর্থিক অনুদানের মাধ্যমে তাদের মনোবল জোরদার করা;

চার. চিকিৎসা সহায়তা ও পুষ্টি সরবরাহ বৃদ্ধিতে আর্থিক সহায়তা প্রদান।

এ বিষয়টি যাতে সঠিকভাবে এগিয়ে যেতে পারে সে জন্য”বিধবা” নির্বাচনে একটি সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা প্রদান কর্মসূচি আওতায় ‘বিধবা’ বলতে তাদেরই বুঝানো হবে যাদের

স্বামী মৃত; আর ‘স্বামী নিগৃহীতা’ বলতে তাদেরই বুঝানো হবে যারা স্বামী কর্তৃক তালাকপ্রাপ্ত বা অন্য যে কোনো কারণে অন্তত দু’বছর ধরে স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বা একত্রে বসবাস করেন না। একইসঙ্গে সরকার প্রার্থী নির্বাচনে একটি মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে।

(ক) নাগরিকত্ব: প্রার্থীকে অবশ্যই বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক হতে হবে।

(খ) বয়স: বয়স অবস্যই ১৮ (আঠারো) বছরের ঊর্ধ্বে হতে হবে। তবে সর্বোচ্চ বয়স্ক মহিলাকে অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে।

(গ) স্বাস্থ্যগত অবস্থা: যিনি শারীরিকভাবে অক্ষম অর্থাৎ সম্পূর্ণরূপে কর্মক্ষমতাহীন তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।

(ঘ) আর্থসামাজিক অবস্থা :

এক. আর্থিক অবস্থার ক্ষেত্রে: নিঃস্ব, উদ্বাস্তু ও ভূমিহীনকে ক্রমানুসারে অগ্রাধিকার দিতে হবে; দুই. সামাজিক অবস্থার ক্ষেত্রে: নিঃসন্তান, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিদের ক্রমানুসারে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

(ঙ)  ভূমির মালিকানা: ভূমিহীন প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বসতবাড়ি ব্যতীত কোনো ব্যক্তির জমির পরিমাণ ৫০ শতাংশ বা তার কম হলে তিনি ভূমিহীন বলে গণ্য হবেন।

 এ ছাড়া ভাতা প্রাপকের জন্য যোগ্যতা ও শর্তাবলি নি¤œরূপÑ

ক. সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে; খ. জš§নিবন্ধন/জাতীয় পরিচিতি নম্বর থাকতে হবে; গ. বয়ঃবৃদ্ধ অসহায় ও দুস্থ বিধবা বা স্বামী নিগৃহীতা মহিলাকে অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে; ঘ. যিনি দুস্থ, অসহায়, প্রায় ভূমিহীন, বিধবা বা স্বামী নিগৃহীতা এবং যার ১৬ বছর বয়সের নিচে ২টি সন্তান রয়েছে, তিনি ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন; ঙ. দুস্থ, দরিদ্র, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতাদের মধ্যে যারা প্রতিবন্ধী ও অসুস্থ তারা ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন; চ. প্রার্থীর বার্ষিক গড় আয়: অনূর্ধ্ব ১২ হাজার টাকা হতে হবে; ছ. বাছাই কমিটি কর্তৃক নির্বাচিত হতে হবে।

সরকারের এ মহতী উদ্যোগ সবসময়ই প্রশংসনীয়। বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্যের বর্তমান পরিস্থিতিতে এ ধরনের উদ্যোগ গরিব অসহায় মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবেÑএটা নিশ্চিত করে বলা যায়। সরকারি এ সাহায্য যতটুকুই মাথাপিছু এখন দেয়া হোক তা যে এসব অসহায় মানুষের জন্য অনেক।  হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে এটি বিপুল সমাদৃত। সুবিধাবঞ্চিত মানুষ ফিরে আসুক মূলধারায়।

মুক্ত লেখক

শ্যামলী, ঢাকা