প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

বিনা শর্তে আড়াই শতাংশ করপোরেট কর কমানোর প্রস্তাব

প্রাক-বাজেট আলোচনায়

নিজস্ব প্রতিবেদক: শর্ত ছাড়াই আড়াই শতাংশ করপোরেট কর কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় এ প্রস্তাব দেয় সংগঠনটি। গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। সভায় বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ), বিসিআইর পরিচালক জিয়া হায়দার মিঠু, যশোদা জীবন দেব নাথ, মো. শাহিদ আলম, মো. খায়ের মিয়া ও মো. মাহফুজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। আসন্ন জাতীয় বাজেটে এ অন্তর্ভুক্তির জন্য বিসিআই সভাপতি নি¤œলিখিত সুপারিশ উপস্থাপন করেন।

বিসিআই সভাপতি বলেন, বিসিআই তরুণ শিল্প উদ্যোক্তা সৃষ্টি, মাইক্রো ও স্মল শিল্প উদ্যোক্তা সৃষ্টি, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, শিল্পায়নের প্রসার, দেশীয় শিল্পের সুরক্ষা এবং বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র বিমোচন ছাড়াও স্থানীয় সব শিল্পের সর্বপ্রকার প্রতিবন্ধকতা নিরসনে বিসিআই কাজ করে চলেছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক মন্দা ও ডলার সংকটের মধ্যে সরকারের জাতীয় উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-৪১, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন-২০৩০, ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের প্রক্রিয়া এবং চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পথপ্রদর্শক হিসেবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট কাজ করবে বলে বিসিআই বিশ্বাস করে।

বিসিআই সভাপতি বলেন, এনবিআর বাংলাদেশের করপোরেট ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে নেয়ার ব্যাপারে কাজ শুরু করেছে। এ ব্যবস্থা বাস্তবায়নে শিল্প খাতের নি¤œলিখিত সমস্যাগুলো সমাধানের দাবি জানাইÑ১. গ্রস প্রফিট (জিপি) খাতভিত্তিকভাবে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে, যা যুক্তি সংগত নয়। আবার এচ কমে গেলে অথবা ব্যবসায় লস হলে বিবেচনায় নেয়া হয় না। এমনকি পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় বিক্রি কম হলেও কর কর্তৃপক্ষ

বিবেচনায় নিতে রাজি হয় না, এ ধারণার সমাপ্তি টানা দরকার। ২. ব্যবসায় ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও টার্নওভার কর নির্ধারণ করা হয়ে থাকে, যা প্রতিষ্ঠানের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। ৩. আয়কর আইনের ৮২সি ধারা অনুসারে সর্বনি¤œ কর হিসেবে উৎসে কর কর্তন করা হয়ে থাকে। কিন্তু পরে তা আবার অ্যাসেসমেন্টে নেয়া হয়, আমরা উৎসে কর চূড়ান্ত কর দায় বা ফাইনাল স্টেটমেন্ট হিসেবে গণ্য করার প্রস্তাব করছি। ৪. কর নিরূপণ সম্পন্ন হওয়ার পর আয়কর রিফান্ড সৃষ্টি হলে (ধারা-১৫০, বিধি-৩৬) ফেরত দেয়ার বিধান থাকলেও অগ্রিম আয়কর ফেরত পাওয়া যায় না। ৫. আয়কর আইনের ৩০ ধারা মোতাবেক অননুমোদিত খরচ অতিরিক্ত বোঝা বহন করে। এ ধারার ক্ষেত্রে বিজনেস প্রমোশনের খরচ, যেমনÑমার্কেটিং, এন্টারটেইনমেন্ট, স্যাম্পল, বিদেশভ্রমণ, এমপ্লয়ি পারকুইজিট, ইনসেনটিভ বোনাস, টেকনিক্যাল ফি প্রভৃতি ক্ষেত্রে ধারা ৩০ অনুযায়ী খরচের সীমা রহিত করে প্রকৃত খরচ হিসেবে আমলে নেয়ার প্রস্তাব করছি। ৬. সম্পদ অর্জনের ক্ষেত্রে উৎসে কর কর্তন না করা হলে, তা অন্যান্য উৎসের আয় হিসেবে বিবেচিত হওয়ার [ধারা-১৯(৩২) মোতাবেক] বিধান বাতিলের প্রস্তাব করছি।

বিসিআই মাইক্রো, কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্প খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং তরুণ শিল্প উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং তার ধারাবাহিকতায় আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ২০২৩-২৪-এ বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য নি¤œলিখিত সুপারিশ পেশ করছে:

১. তরুণ উদ্যোক্তাদের অর্থায়নের জন্য বাজেটে বিশেষ তহবিল গঠন করা হয়েছে, কিন্তু সুষ্ঠু নীতিমালার অভাবে এই তহবিলের সুফল পাওয়া সম্ভব হয়নি। আমরা তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ তহবিল বিতরণের জন্য নীতিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব করছি।

২. শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে শূন্য শতাংশ থেকে তিন শতাংশ উৎসে কর নির্ধারণের প্রস্তাব করছি।

৩. মাইক্রো, কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্প খাতে সব ধরনের ইউটিলিটির ওপর ভ্যাট অব্যাহতির সুপারিশ করছি।

৪. মাইক্রো, কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্প এবং তরুণ শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য ন্যূনতম পাঁচ বছর কর অবকাশ প্রদান করা এবং পরে ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশের মধ্যে কর নির্ধারণের সুপারিশ করছি।

৫. ক্ষুদ্র শিল্প ও নারী উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে খাতভিত্তিক যৌথ রপ্তানিম–খী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্ডেড-ওয়্যারহাউজ সুবিধা প্রদান করা।

আয়কর-সংক্রান্ত প্রস্তাবাবলি

১. বাংলাদেশের করপোরেট করহার আশপাশের দেশের তুলনায় অনেক বেশি। বিসিআই কোনো শর্ত ছাড়াই ২.৫ শতাংশ হারে কমিয়ে আনার প্রস্তাব করছি। এর ফলে স্থানীয় পর্যায়ে ব্যবসা উৎসাহিত হবে এবং দেশে বিনিয়োগ বাড়তে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। বিসিআই করপোরেট করহার ধাপে ধাপে কমিয়ে আনার প্রস্তাব করছে।

২. শিল্প ক্ষেত্রে মূসক ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বেশি। শিল্প খাত রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় এবং আমদানি হ্রাসের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করে দেশের অর্থনীতিতে অধিক ভূমিকা রাখে বলে তাদের প্রণোদনা প্রদান এবং ট্রেডিং কোম্পানির তুলনায় নি¤œহারে করপোরেট কর আরোপ করার প্রস্তাব করছি।

৩. সকল রপ্তানি খাতে সমহারে উৎসে ০.১ শতাংশ এবং আয়কর ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা।

৪. আমরা ব্যক্তি খাতে করমুক্ত আয়ের সীমা পাঁচ লাখ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করছি (ভারতে সাত লাখ রুপি)। ব্যক্তিগত করমুক্ত সীমা ও বিদ্যমান আয়করের হার পুনর্নির্ধারণ: মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনায় আগামী ২০২৩-২৪ কর বছরের জন্য বর্তমান ব্যক্তিগত করমুক্ত সীমা ও বিদ্যমান আয়করের হার পুনর্নির্ধারণের প্রস্তাব করছি।

৫. কর ব্যবস্থাকে স্বচ্ছ, দ্রুত, আধুনিক, যুগোপযোগী এবং সবাইকে কর প্রদানে উদ্বুদ্ধ করার জন্য কর ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে ডিজিটাল করার প্রস্তাব করছি।

৬.  ডিভিডেন্ডের ওপর কর ১০ শতাংশ করার সুপারিশ করছি।

৭. গ্রিন সার্টিফাইড শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য দুই শতাংশ কর রেয়াতের প্রস্তাব করছি।

মূল্য সংযোজন কর (মূসক)