দেশের পুঁজিবাজারে রোববার পর্যন্ত টানা পঞ্চম দিন দর পতন হয়েছে। প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সিংহভাগ শেয়ারদর হারানোয় ডিএসইএক্স সূচক ২৪৫ পয়েন্ট হারিয়ে ৫২০২ পয়েন্টে নেমেছে। সূচক পতনের হার সাড়ে ৪ শতাংশ। এর মধ্যে রোববারই কমেছে ৮১ পয়েন্ট। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সর্বশেষ ৫ কর্মদিবসে তালিকাভুক্ত ৯২ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদর হারিয়েছে।
জানা গেছে, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে প্রধান তিনটি ইস্যু নিয়ে উদ্বেগ লক্ষ করেছেন বিশ্লেষকরা। এগুলো হলো—মার্জিন ঋণ বিধিমালা সংশোধন, তালিকাভুক্ত পাঁচ ব্যাংকের একীভূতকরণ প্রক্রিয়া এবং বিগত সরকারের সময়কার গুম-খুন ইস্যুতে সেনা কর্মকর্তাদের নামে ওয়ারেন্ট জারি-পরবর্তী নানা আলোচনা।
সাম্প্রতিক সময়ে যেসব বিনিয়োগকারীর শেয়ার ক্রয়ে বাজারে গতি এসেছিল, তাদের অনেকে এখন নিষ্ক্রিয় বা লেনদেন কমিয়ে এনেছেন। এরও প্রভাব পড়েছে বাজারে।
বাজারে আলোচনা আছে, বাংলাদেশ ব্যাংক তালিকাভুক্ত পাঁচটি ব্যাংক একীভূত করে একটি করতে যাচ্ছে, যেখানে শেয়ারহোল্ডাররা কিছু পাবেন না। একই সঙ্গে ৯টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে অবসায়নের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। এ কোম্পানিগুলোর শেয়ারহোল্ডারদেরও কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
সব মিলিয়ে হতাশায় রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। যদিও নিয়ন্ত্রক সংস্থা অনিয়মের সুযোগ করে দিয়েছিল বা প্রশ্রয় দিয়েছিল। তাদের কারও কিছু হচ্ছে না, শুধু শেয়ারহোল্ডারদের দায় নিতে হচ্ছে। এর বাইরে দীর্ঘ সংস্কার প্রক্রিয়াও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা রয়েছে।
রোববার ডিএসইতে ৩৬০ কোম্পানির মধ্যে ২৯২টি দর হারিয়েছে, বেড়েছে মাত্র ৩৮টির দর। সর্বাধিক দর হারিয়েছে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বস্ত্র, খাদ্য, সিমেন্ট, তথ্যপ্রযুক্তি, কাগজ এবং ভ্রমণ ও অবকাশ খাতের শেয়ার।
দেশের পুঁজিবাজারের যাত্রা ছয় দশকের বেশি। কিন্তু অপরাপর দেশ কিংবা আমাদের অর্থনীতির অগ্রগতির সঙ্গেও তাল মিলিয়ে দেশের পুঁজিবাজার এগোতে পারেনি। আমাদের পুঁজিবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বেশি, দুর্বলতা হিসেবে চিহ্নিত করছেন। বাজারে ভালো কোম্পানির সংখ্যাও কম। খারাপ কোম্পানির জাঙ্ক বা প্রায় অচল শেয়ারই বেশি। আছে সুশাসনের সংকটও।
বিশ্বের প্রতিটি দেশের অর্থনীতিতে পুঁজিবাজার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। জিডিপিতে পুঁজিবাজারের অবদান বৃদ্ধিতে পুঁজিবাজারের কাঠামোগত সংস্কার করতে হবে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। দেশি-বিদেশি ভালো ভালো কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করার পাশাপাশি তথ্যগত স্বচ্ছতা ও প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহি নিশ্চিত করা উচিত।
অন্যায্য কারসাজি রোধে কঠোর আইন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার সার্বক্ষণিক নজরদারি নিশ্চিত করাও জরুরি। দীর্ঘমেয়াদে বাজার চাঙা রাখতে বিনিয়োগবান্ধব টেকসই পদক্ষেপ নেয়াই সময়ের দাবি।
প্রিন্ট করুন





Discussion about this post