নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের এভিয়েশন খাতে বড় বড় কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম বিমানবন্দরে সক্ষমতা বৃদ্ধি ও ফুয়েল। পাশাপাশি নেভিগেশন ও কমিউনিকেশন সিস্টেমের উন্নতকরণও বিরাট চ্যালেঞ্জ বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মুফিদুর রহমান। গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম এক্সপো (বিআইটিটিআই) উপলক্ষে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
এম মুফিদুর রহমান বলেন, এভিয়েশন খাতে আমাদের চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে বড় একটি চ্যালেঞ্জ হলোÑবিমানবন্দরে সক্ষমতা বৃদ্ধি। বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ ফুয়েল। কম দামে এটি পাওয়াই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতি বছর ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়ছে। কাজেই কম দামে ফুয়েল সরবরাহ করা এ মুহূর্তে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ।
বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, প্রযুক্তিগত দিক থেকেও আপডেট থাকা জরুরি। যেহেতু দ্রুত নতুন-নতুন প্রযুক্তি বদলাচ্ছে, তা না হলে আমরা এগিয়ে যেতে পারব না। এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। বিমানবন্দরে নিরাপত্তাও একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। এর আগে আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে বিমানবন্দরে বোমা হামলার মতো ঘটনা আমরা দেখেছি। তাই আমি মনে করি, নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটাও আগামী দিনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি নেভিগেশন ও কমিউনিকেশন সিস্টেমের উন্নতকরণও একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণসহ বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে এয়ার ভাইস মার্শাল বলেন, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও দুবাই কীভাবে উন্নত হলো? কীভাবে টুরিস্ট জোনে পরিণত হলো? তারা উন্নত হয়েছে সংযোগের কারণে। এভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজম খাতে উন্নতির কারণে। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশেরও এ খাতে প্রচুর সম্ভাবনা আছে।
দেশে প্রায় আড়াই লাখ বিদেশি নাগরিক আছেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশের ৭৫ লাখ মানুষ বিদেশে থাকেন। এই বিপুল জনসংখ্যার যাতায়াতের সুযোগ কাজে লাগাতে আমাদের ব্যবসা, পর্যটন, সেবাসহ অনেকগুলো খাতে কাজ করার সুযোগ আছে।
মুফিদুর রহমান আরও বলেন, বৈশ্বিকভাবেও বাংলাদেশ এভিয়েশন খাতে উন্নতির দিকে আছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, মেডিকেল, শিক্ষাসহ অনেক ধরনের ভ্রমণ চালু আছে। আর এই ট্যুরগুলো আমাদের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে,
এভিয়েশন ডিমান্ড বাড়ায়, পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করে। আমেরিকা ও কানাডায় প্রচুর এয়ারলাইনস থাকলেও বাংলাদেশের মতো এত কাজের সুযোগ নেই। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর তুলনায় ৪২-৪৫ শতাংশ বেশি কাজের সুযোগ আছে। ২০২২ সালের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের চেয়ে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট সংখ্যা বেড়েছে বলেও তিনি জানান।
চ্যালেঞ্জ থেকে উত্তরণের উপায় কীÑজানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, এ লক্ষ্যে সরকার আমাদের অর্থনৈতিক ও নীতিগত সহায়তা দিয়ে আসছে। পাশাপাশি আমরা নিজেদের ফান্ডের অর্থায়নেও টেকসই এভিয়েশন পরিবেশ গড়ে তুলতে চাই।
সেমিনারে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন বলেন, ট্যুরিজম ও এভিয়েশন একে অপরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি খাত। আমাদের দেশে এই খাতে বিপুল সম্ভাবনা আছে, এটা নিয়ে কারও সন্দেহ নেই। আমরা আশা করছি, বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষ হলে আমাদের ফ্লাইট সংখ্যা বাড়বে। সেইসঙ্গে অবকাঠামোগত উন্নয়নও হবে। একই সঙ্গে কক্সবাজার বিমানবন্দরের উন্নয়নের ফলে সামগ্রিকভাবেই যাতায়াতে একটা অভূতপূর্ব উন্নয়ন হবে। ট্যুরিজম নিয়ে আমাদের মাস্টারপ্ল্যান আছে, সেটা সম্পন্ন হলে আমার আশা যে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে (জিডিপিতে) এ খাত আরও বেশি অবদান রাখবে।
বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মোহাম্মদ জাবের বলেন, দেশে প্রায় এক হাজারের বেশি পর্যটন স্পট আছে, যার মধ্যে ৫০টি টুরিস্ট গন্তব্য আগামী দিনে আন্তর্জাতিক মানের করে তৈরি করতে পারব, যা দেশের এভিয়েশন খাতকেও প্রভাবিত করবে।