প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

বেনজামিন গ্রাহাম: দ্য ইনটেলিজেন্ট ইনভেস্টর

 

পূর্বের প্রকাশের পর……….

১৭২০ সালের আগেই ইংল্যান্ডের সবচেয়ে দামি কোম্পানি ছিল সাউথ সি। ওই কোম্পানির কিছু শেয়ার কিনেছিলেন সর্বকালের অন্যতম সেরা চিন্তাবিদ স্যার আইজ্যাক নিউটনও। একবার আকস্মিকভাবে দরপতন শুরু হলে তিনি বেচে দেন সাউথ সি’র সব শেয়ার। বিস্মিত নিউটন শতভাগ মুনাফায় আয় করেন সাকুল্যে সাত হাজার পাউন্ড। শেয়ারের দাম কমার পরও তার কেন লাভ হলো, এটা বুঝতে না পেরে এই মহান পদার্থবিদ নাকি তার এক বন্ধুকে বলেছিলেন, ‘মহাবিশ্বের সব জাগতিক বস্তুর গতি-প্রকৃতি নির্ণয় করা সম্ভব; কিন্তু শেয়ারবাজারের মন কিছুতেই নয়।’ বিপত্তি ঘটলো এর পর। হুট করে বাড়তে শুরু করলো সাউথ সি’র শেয়ারদর। তাড়াহুড়ো করে অন্যদের দেখাদেখি বেশকিছু শেয়ার কিনে পরবর্তীতে বিক্রি করে ধরা খেলেন আনুমানিক ২০ হাজার পাউন্ড। এতে প্রচণ্ড হতাশ হন নিউটন। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত যদি ব্যর্থও হয়ে থাকেন, তার মানে এই নয় যে আপনি বোকা; আপনাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। এর কারণ হলো, সফল বিনিয়োগকারী হওয়ার জন্য যে মানসিক শৃঙ্খলার প্রয়োজন, তা আপনার নেই। যা ছিল না নিউটনেরও।

বাজারের বিচারশক্তিতে যাদের আস্থা কম

চরম বাজারে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হন সর্বাধিক

বুল ও বেয়ার মার্কেটকে জীবন্ত, ব্যক্তিত্বশালী শক্তির মতো মনে হয় প্রায়ই। সেজন্য আমি এর নাম দিয়েছি মি. মার্কেট। মজার বিষয়, ওই দুই পরিস্থিতিতে বাজার উদ্ভ্রান্তের মতো আচরণ করলেও স্বাভাবিক অবস্থায় শেয়ার মূল্যায়নের (স্টক প্রাইসিং) বেলায় কিন্তু মি. মার্কেট সঠিক। আসলে তখন লাখ লাখ ক্রেতা ও বিক্রেতার দর কষাকষিতে (ভ্যালুয়েশন) বাজারের মূল্যস্তর যৌক্তিক পর্যায়ে থাকে। বেশিরভাগ সময় তা-ই হয়। তবে মাঝেমধ্যে শেয়ার মূল্যায়ন করতে গিয়ে অগ্রাহ্য করার মতো ভুল করে বাজার। আরও নগণ্য ক্ষেত্রে বাজার কর্তৃক ঘটে মারাত্মক ভুল। এ ভুল মূল্যায়নের (মিস প্রাইসিং) কারণ বাই-পোলার ডিসঅর্ডার রোগ রয়েছে মি. মার্কেটের। মনোবিজ্ঞান বলে, বাই-পোলার রোগাক্রান্তরা সাধারণত চরম দুটি মানসিক অবস্থা প্রদর্শন করে; হঠাৎ হঠাৎ মারাত্মক হতাশ হয়ে ওঠে এরা, হঠাৎ হঠাৎ হয় অতি-উচ্ছ্বসিত। বিপত্তি হলো, মি. মার্কেট শেয়ারের মূল্যায়ন সঠিকভাবে করতে ব্যর্থ হয় এই উদ্ধত্ত ও অবসাদগ্রস্ত অবস্থায়। সেজন্য বাজারের উদ্বেলিত দশায় গুণাগুণ নির্বিচারে দ্রুত দাম বাড়ে শেয়ারের। সামান্য আনুকূল্যে থাকা স্টককে তখন বস্তুনিষ্ঠভাবে মূল্যায়ন করতে পারে না মি. মার্কেট। ফলে ঘটে শেয়ারের ওভার-প্রাইসিং বা অতিমূল্যায়ন। একইভাবে হতাশ অবস্থার খেয়ালি মন্দা বাজার অনেক ভালো শেয়ারকেই ছুড়ে ফেলতে চায় আন্ডার-প্রাইসিং বা অবমূল্যায়নের মাধ্যমে। লক্ষণীয়, এ দুই চরম অবস্থার কোনোটিই স্থায়ী নয়। আবার ঠিক ঘড়ি ধরেও ঘটে না বাজারের রোগমুক্তি। এই বাই-পোলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত মি. মার্কেটের ভাবগতিক বোঝানোর জন্য একটা ঘটনা বলি। ওয়ালস্ট্রিটে ইনকটোমি কোম্পানির শেয়ার নতুন রেকর্ড গড়ে ২০০০ সালের ১৭ মার্চ। সেদিন প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি শেয়ার বিক্রি হয় আনুমানিক ২৩২ ডলারে। ইনকটোমি ছিল ইন্টারনেট সার্চিং কোম্পানি। ১৯৯৮ সালের জুনে এটি তালিকাভুক্ত হয় পুঁজিবাজারে। এর পর থেকে ২০০০ সালে ১৭ মার্চ পর্যন্ত এর শেয়ারদর বাড়ে ১৪০০ শতাংশেরও বেশি! বাজারে ইনকটোমির উত্থানটা ছিল চমকপ্রদ। সেই ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরেই এক সপ্তাহের মধ্যে এর শেয়ারের দাম বেড়েছিল তিনগুণ। কথা হলো, কী জাদু ছিল ইনকটোমির শেয়ারে? জাদু কিছু নয়, আসলে ডটকম বুম থেকে সৃষ্ট সেদিনকার বুল মার্কেটের নেক নজরে পড়েছিল ইনকটোমি। ফলে প্রথম কয়েক মাসে দর্শনীয় প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী ইনকটোমির প্রতি তার আনুকূল্য ছিল অযৌক্তিক। লক্ষণীয়, ১৯৯৯ সালের শেষ প্রান্তিকে ইনকটোমি বিক্রি করে আনুমানিক ৩৬ মিলিয়ন ডলারের সেবা ও পণ্য। পরিমাণটি ১৯৯৮ সালের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিক্রীত পণ্য ও সেবার অনেক বেশি। অনেকে হিসাব করেন, বেশি লাগবে না শুধু ওই কয়েকটা মাসের প্রবৃদ্ধি যদি ইনকটোমি আর শুধু পঁাঁচটা বছর ধরে রাখতে পারে এক প্রান্তিকের ৩৬ মিলিয়ন ডলার আয়কে ছাড়িয়ে যেত মাসিক পাঁচ বিলিয়ন ডলারের আয়। ফলে সে সময় বহু বিনিয়োগকারী পড়েছিলেন ইনকটোমির প্রেমে। প্রতিষ্ঠানটির প্রবৃদ্ধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা অন্ধ আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছিলেন যে, ইনকটোমির প্রবৃদ্ধি টেকসই হবে। প্রেমিক-প্রেমিকারা পরস্পরের মারাত্মক দোষ-ত্রুটিও অগ্রাহ্য করে সাধারণত। একই ঘটনা ঘটেছে ইনকটোমির বেলায়ও। নইলে বিনিয়োগকারীরা নিশ্চয়ই দেখতে পেতেন, ব্যাপক মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি নিয়মিতভাবে বড় অঙ্কের মুনাফাও হারাচ্ছে কোম্পানিটি। ইনকটোমি ১৯৯৯ সালের শেষ প্রান্তিকে হারিয়েছিল ছয় মিলিয়ন ডলার; আরও ২৪ মিলিয়ন পরবর্তী ১২ মাসে। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি থেকে লোকসান বাদ দিলে কার্যত সে সময়কার ইনকটোমির মুনাফা সামান্যই। মি. মার্কেটের কাণ্ড দেখেন। এত কিছুর পরও ওয়ালস্ট্রিট ২০০০ সালের ১৭ মার্চ ইনকটোমিকে ঘোষণা দেয় ২৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যমানের প্রতিষ্ঠান হিসেবে। মি. মার্কেটের এ খোশমেজাজ বদমেজাজে পরিণত হয় ২০০২ সালের শেষ দিকে এসে। ২০০২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০০০ সালের ১৭ মার্চের আড়াই বছর পর ওয়ালস্ট্রিটে ইনকটোমির ২৩২ ডলারের শেয়ার বিক্রি হয় মাত্র ২৫ সেন্টে। আর এ মূল্য বিপর্যয়ে ২৫ বিলিয়ন ডলারের ইনকটোমির পরিণত হয় ৪৭০ মিলিয়ন ডলারের মাঝারি প্রতিষ্ঠানে। তবে কি শুকিয়ে আসছিল ইনকটোমির ব্যবসা? মোটেই নয়। প্রতিটি শেয়ারের দাম ২৫ সেন্টে পরিণত হওয়ার পরও পরবর্তী এক বছরে ইনকটোমি মুনাফা করেছে কমপক্ষে ১১৩ মিলিয়ন ডলার। তাহলে কী বদলেছিল? নিঃসন্দেহে মি. মার্কেটের মুড। ২০০০ সালের শুরুতে প্রায় সব মার্কিন বিনিয়োগকারী যেন পাগল হয়ে ওঠেন সম্ভাবনাময় ইন্টারনেট কোম্পানির শেয়ার কেনার জন্য। এই হুজুগে সহজেই নজরে পড়ে যায় শুরুতে ভালো পারফরম্যান্স দেখানো ইনকটোমি। আর সেই হুজুগই কোম্পানিটির প্রতি ডলার মূল্যের শেয়ারের দাম বাড়ায় ২৫০ গুণ; অথচ কেউ গ্রাহ্য করেননি এই ২৫০ গুণ বিনিয়োগের বিনিময়ে তারা মুনাফা পাচ্ছেন মাত্র দশমিক ৩৫ গুণ। মি. মার্কেটের বাই-পোলার ডিসঅর্ডার বুঝতে কষ্ট হলে ড. জেকিল ও মি. হাইডের গল্প পাড়া যায় এখানে। ড. জেকিল ও মি. হাইড একই ব্যক্তি। তবে সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী ব্যক্তিত্বের। ড. জেকিল আদতে ফুর্তিবাজ ভদ্রলোক, যিনি রাগান্বিত হলে পরিণত হতেন দানব মি. হাইডে। এমন হাস্যময় ভদ্রলোক থেকে রক্তপিপাসু দানবে রূপান্তর হওয়ার ক্ষমতা মি. মার্কেটের আরও দ্রুততর। তার প্রতিশোধপরায়ণতা আরও উগ্র ও সহিংস। সেজন্য বাজারের বিচারশক্তির প্রতি যাদের আস্থা কম, চরম (মন্দা ও চাঙা) বাজারে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হন সবচেয়ে বেশি। একই কারণে সিংহভাগ সময়ে পূর্ববর্তী বুল মার্কেটের অতিমূল্যায়িত শেয়ার বেয়ার মার্কেটে অবমূল্যায়িত হয় ব্যাপকভাবে।

সেক্ষেত্রে করণীয় কী? ভূমিকায়ই বলেছি, এটা একটা সতর্কতামূলক বই। যে কোনো পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারের লাখ লাখ বিনিয়োগকারী লাখ লাখ না হোক, বিনিয়োগ করতে পারেন অন্তত হাজার হাজার পন্থায়। ফলে বাজার ওঠানামার সঙ্গে সঙ্গে বিনিয়োগকারীর গৃহীত কৌশল নিয়ে নতুন কিছু বলতে যাওয়া বৃথা। করণীয় নিজেরাই নির্ধারণ করবেন তারা। আমি মূলত পরামর্শ দেব, কোন কোন বিষয় এড়িয়ে চলা উচিত বা কী একেবারেই করা ঠিক হবে না সেসব ইস্যুতে। সেজন্য পাঠকদের প্রশ্নের উত্তরে আমার জবাব হলো, আর যা-ই করুন বাজারের কথায় কান দিতে যাবেন না। মনে করুন, আপনার একজন প্রতিবেশী আছেন সনদপ্রাপ্ত পাগল, মানসিক হাসপাতাল ঘুরে এসেছেন দু-একবার। এখন আপনি কি সপ্তাহে পাঁচ দিন তার কাছে খোঁজ নেবেন, আজ কেমন বোধ করছেন তিনি? তার পর মিলিয়ে দেখবেন তার অনুভূতির সঙ্গে আপনার অনুভূতি মেলে কি না? যদি মিলে যায় তাহলে ওই ব্যক্তির আনন্দে আনন্দিত হবে কিংবা দুঃখে দুঃখিত হবেন অথবা সুখেদুঃখে পরামর্শ নেবেন তার? নিজের বিচার-বিবেচনা ও অনুভূতি মাপবেন পাগলের সঙ্গে? নিশ্চয়ই নিজ আবেগী জীবনের আনন্দ-বেদনার শরিক করবেন না কোনো পাগলকে। বরং সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ সাধারণত নিজ অনুভূতির প্রাথমিক মূল্যায়নটা করেন মূল্যবোধ ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে এবং বুদ্ধিমত্তা দ্বারা। এখন কথা হলো, কেউ যদি নিজ অনুভূতি ও বোধশক্তির মতো অত্যন্ত বিমূর্ত বিষয়ের ভারও পাগলের ওপর ছেড়ে দিতে অনিচ্ছুক থাকেন। পুঁজিবাজারে যেখানে আপনি হাজার হাজার টাকা বিনিয়োগ করছেন তার সংরক্ষণ ও উন্নয়নের ভার আপনি কোন বিবেচনায় ছেড়ে দেবেন উš§ত্ত বা অবসাদগ্রস্ত (অবস্থার) মি. মার্কেটের হাতে? অমন খেয়ালি শক্তির হাতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের নিরাপত্তা বিনা বাক্য ব্যয়ে ছেড়ে দেওয়া যায়? যারা মি. মার্কেটের খেয়ালি মেজাজের নমুনা এখনও দেখেননি তাদের জন্য একটা ঘটনা বলি। ১৯৯৯ সালে রিটারমেন্ট প্ল্যানগুলোতে মার্কিন চাকরিজীবীরা ব্যয় করেন মোট আয়ের গড়ে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ। মি. মার্কেট খুব খোশমেজাজে ছিলেন তখন। ফলে আলোচ্য প্ল্যানে বাড়ছিল বিনিয়োগকারীদের ভিড়। অথচ (বাজারশক্তির উচ্ছ্বাসমূলক প্রভাব ভিন্ন) ওই প্ল্যানগুলোতে এত আগ্রহ দেখানোর কোনো যুক্তি নেই। এ খোশমেজাজি মি. মার্কেট হতাশ হয়ে পড়েন ২০০২ সালে। সে সময় আবার রিটারমেন্ট প্ল্যানগুলোয় বিনিয়োগ কমে যায় সাত শতাংশের মতো। বাহ্যত ব্যাখ্যা মেলে না এ ঘটনারও, মি. মার্কেটের খেয়ালি আচরণ ছাড়া। শিক্ষা হলো, বুদ্ধিমান বিনিয়োগকারীকে বাজারের আবেগের কাছে আত্মসমর্পণ করা যাবে না কখনওই। যখনই আপনি নিজ বিচার-বিবেচনা মতামত অবজ্ঞা করে মি. মার্কেটের মতো হতে চাইবেন তখনই ঘটবে সর্বনাশের সূচনা। অনেকে এজন্য আবার পুরোপুরি মি. মার্কেটকে উপেক্ষা করে চলেন। এটা আরেকটা ভুল পদ্ধতি। সঠিক উপায় হচ্ছে, বাজার শক্তির তাঁবেদারি বা বিরোধিতা নয় বরং আপন স্বার্থ হাসিল পর্যন্ত মি. মার্কেটের অনুসরণ। যেই দেখলেন বাজার থেকে আপনার বিনিয়োগ-স্বার্থ হাসিল হয়েছে, পাত্তা দেবেন না বাজারকে। মনে রাখবেন, পুঁজিবাজারে মি. মার্কেট আপনার ব্যবসার অপরিহার্য সহযোগী। তাকে বাদ দিয়ে কিছু সম্ভব নয়। অন্যদিকে মি. মার্কেট হচ্ছেন নির্বোধ, একগুঁয়ে সর্বজনীন ক্রেতা ও বিক্রেতা (বায়ার অ্যান্ড সেলসম্যান)। তার কাজই হচ্ছে, একেক সময়ে একেক দামে আপনার কাছে পণ্য (শেয়ার) গছিয়ে দেওয়া। আর এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মি. মার্কেট আপনাকে কখনও কখনও চোখ রাঙাবে, মাঝেমধ্যে উসকানি দেবে বা ভয়ভীতি দেখাবে এবং হঠাৎ হঠাৎ পা ধরবে। লক্ষণীয়, মি. মার্কেট ভালো পণ্যও বেচেন আবার খারাপ পণ্যও আছে তার ঝুলিতে। একজন বুদ্ধিমান বিনিয়োগকারীর দায়িত্ব হলো, দর কষাকষির মাধ্যমে কম দামে মি. মার্কেটের কাছ থেকে ভালো পণ্য কেনা এবং নিজ হাতে রক্ষিত বেশি দামের মন্দ পণ্যটি তার হাতে গছিয়ে দেওয়া। এক্ষেত্রে সফল হলে আপনি বাজারের প্রভু, নইলে আপনাকে দাসে পরিণত করবে বাজার। আর সেজন্য দরকার নিজের ওপর আবেগী নিয়ন্ত্রণ (ইমোশনাল কন্ট্রোল)। আমি বিশ্বাস করি, শেয়ারবাজার-সংক্রান্ত যেকোনো টেকনিক্যাল টার্মস মুখস্থ করার চেয়ে কাজটি বেশি জরুরি এবং বাস্তবে প্রয়োগ করা কঠিন। মি. মার্কেট একই সঙ্গে ভয়ংকর শাস্তিদাতা ও অসম্ভব দয়ালু। আরেকটি কৌতূহলোদ্দীপক বিষয়, মি. মার্কেট শুধু মূল্য ধ্বংসই করে না, একই সঙ্গে ইকুইলিব্রিয়ামে আসার জন্য তা সৃষ্টি করে ক্ষতিপূরণমূলক মূল্য। আর যেসব বুদ্ধিমান বিনিয়োগকারীর নিজ আবেগের ওপর নিয়ন্ত্রণ আছে, তারাই চিহ্নিত করতে পারেন পরিবর্তনশীল স্থান-কালভেদে নবসৃষ্ট ওসব বাজারমূল্য। তাছাড়া আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হচ্ছে, শেয়ারবাজারের অসফল বিনিয়োগকারীর ব্যর্থতার প্রাথমিক কারণ হচ্ছে, বাজার কী করছে তার প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ দেওয়া তথা বাজারের খবর ও গুজবে নাক ডুবিয়ে বসে থাকা।