সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: সদ্য সমাপ্ত বছরে বেসরকারি খাতে গড়ে ওঠা ১৮টি কনটেইনার ডিপোতে আমদানি ও রপ্তানিবাহী মোট কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৭৮২ টিইইউ, যা ২০২১ সালে ছিল ১০ লাখ ২২ হাজার ২১২ টিইইউ। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ৭৫ হাজার ৪৩০ টিইইউ। মূলত দেশে চলমান ডলার সংকটে আমদানি নিয়ন্ত্রণসহ নানা কারণে দেশের সব ধরনের আমদানিপত্র খোলায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। ফলে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের গতি কমছে।
বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, দেশে চলমান ডলার সংকটে আমদানি নিয়ন্ত্রণসহ নানা কারণে আমদানিপত্র (এলসি) খোলায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। ফলে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের গতি কমছে। এতে আমদানি ও রপ্তানিবাহী কনটেইনার হ্যান্ডলিং কমেছে। দেশে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের উদ্যোগে গড়ে ওঠা ১৮টি কনটেইনার ডিপোতে ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে কমেছে ৭৫ হাজার ৪৩০ টিইইউ (টোয়েন্টি ফিট ইকুয়েভেলেন্ট ইউনিট) কনটেইনার হ্যান্ডলিং। ২০২২ সালে আমদানি ও রপ্তানিবাহী মোট ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৭৮২ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। যেখানে আগের বছর ছিল ১০ লাখ ২২ হাজারের বেশি। যদিও ২০২০ সালে কভিডের কারণে কমে মোট কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৭৫ হাজার ২০৫ টিইইউ।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২০২২ সালে মোট কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল ৩১ লাখ ৪২ হাজার ৫০৪ টিইইউ। অপরদিকে ২০২১ সালে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ ছিল ৩২ লাখ ১৪ হাজার ৫৪৮ টিইইউএস। এতে গত বছরের তুলনায় কমছে কনটেইনার হ্যান্ডলিং ৭২ হাজার ৪৪ টিইইউ। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের আয় কমেছে। পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব আহরণও কমবে। আর ২০২০ সালের মোট কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল ২৮ লাখ ৩৯ হাজার ৯২৭ টিইইউ।
আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধসহ নানা কারণে বিশ্বের নানা দেশে সংকট তৈরি হয়েছে। এ সংকটের কারণে দেশের আমদানিপত্র খোলায় কিছুটা কড়াকড়ি আরোপ করে সরকার। আবার বিশ্বব্যাপী পণ্যের চাহিদা কমছে। এর মধ্যেÑখাদ্যপণ্য, তেল, তুলা, গম, ইস্পাতসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম কমছে। পাশাপাশি বিভিন্ন গন্তব্যে জাহাজ ভাড়াও কমেছে ৬০ শতাংশেরও বেশি। মোটকথায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ধস দেখা দিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। দেশের অর্থনীতিতে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যাওয়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যদি আমাদের এলসি খোলা স্বাভাবিক হয়, তাহলে সবকিছুর দাম স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বেসরকারি ডিপোর স্বত্বাধিকারী শেয়ার বিজকে বলেন, চট্টগ্রামের আইসিডিগুলো থেকে প্রতিদিন গড়ে আড়াই হাজার টিইইউ কনটেইনার বন্দরে নিয়ে যাওয়া হতো। বর্তমানে তা দেড় হাজারে নেমে এসেছে।
গত কয়েকদিন আগে কাস্টমস হাউসের নির্দেশে আইসিডিতে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ আরও কমে যাবে। এতে আইসিডিতে কনটেইনার হ্যান্ডলিংসহ সার্বিক আয় কমবে। ফলে প্রতিটি আইসিডি থেকে লোকবল কমাতে হবে।
এ বিষয়ে বেসরকারি আইসিডি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেনার ডিপোটস অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা) সচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস থেকে রপ্তানি কনটেইনার কমে যায়। অপরদিকে ডলার সংকটের কারণে আমদানিও কমেছে। ফলে দেশের সার্বিক আমদানি ও রপ্তানি কমে যাওয়ার প্রভাবে আমাদের ডিপোগুলোর কনটেইনার হ্যান্ডলিং কমেছে। আর কিছুদিন আগে কাস্টমস ৩৮ ধরনের পণ্য বন্দর থেকে ডেলিভারি নেয়ার নির্দেশনা দেয়। এটি কার্যকর হলে বিশাল বিনিয়োগে গড়ে ওঠা প্রতিটি আইসিডির আয় কমবে। এতে অপূরণীয় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তাই ৩৮ ধরনের পণ্য বন্দর থেকে ডেলিভারি নেয়ার নির্দেশনা বাতিল করা উচিত। কারণ আমরাও কাস্টমসের সহায়ক প্রতিষ্ঠান।
উল্লেখ, চট্টগ্রাম বন্দরের এক থেকে ২৬ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে গড়ে ওঠা ১৮টি কনটেইনার ডিপো। এসব আইসিডি প্রতিষ্ঠানের ধারণক্ষমতা ৭৬ হাজার টিইইউ। বর্তমানে রপ্তানি পণ্যের ৯০ শতাংশ ডিপোর মাধ্যমে কনটেইনারে বোঝাই হয়। আর ৩৮ ধরনের আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে নামানোর পর ডিপোতে নিয়ে খালাস করতে হয়। এর পরিমাণ মোট আমদানির ২১ শতাংশ। অর্থাৎ রপ্তানিতে ৯০ শতাংশ এবং আমদানিতে ২১ শতাংশ পণ্যের কনটেইনার বেসরকারি ডিপোতে খালাস হয়।