প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পরিপালন নিশ্চিত হোক

একটি বিশ্ববিদ্যালয় কখনও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে রূপ নিতে পারে না- তা সেটি রাষ্ট্রীয় উদ্যোগেই প্রতিষ্ঠিত হোক, বা বেসরকারি উদ্যোগেই প্রতিষ্ঠিত হোক। কিন্তু আমাদের দেশে বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তদারকির দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও (ইউজিসি) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আইন পরিপালন নিশ্চিত করতে পারছে না। এমনকি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তলব করলেও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা কোনো সাড়া দিচ্ছেন না বলে জানা যাচ্ছে। আইনের প্রতি এমন বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগের মাধ্যমে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পরিপালন নিশ্চিত করা।

দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘দুদকের তলবে সাড়া দিচ্ছেন না নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টিরা’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তা পাঠকের নজরে এসে থাকবে। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান আজিমউদ্দিন আহমেদসহ গুরুত্বপূর্ণ ছয় সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ২, ৪ ও ৬ জানুয়ারি তলব করা হলেও ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তারা উপস্থিত হননি, যদিও তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, এফডিআর করার নামে প্রতিষ্ঠানের অর্থ লোপাট, স্ত্রী-স্বজনদের চাকরি দেয়ার নামে লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া, সরকারি শুল্ক ফাঁকি দিয়ে গাড়ি ক্রয়, অবৈধভাবে বিলাসবহুল বাড়ি ব্যবহার এবং বিভিন্ন অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা নেয়া।

এসব অভিযোগ সত্য নাকি মিথ্যা প্রমাণসাপেক্ষ; কিন্তু অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলাকালে রাষ্ট্রীয় যেসব প্রতিষ্ঠান আইনগতভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত, তাদের তলবে সাড়া না দেয়া আইন অমান্যের শামিল বৈকি। বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগ নতুন কিছু নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের অর্থে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের জন্য বিলাসবহুল গাড়ি ক্রয়ের বিষয়টি একাধিকবার গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে। যদিও নানামুখী সমালোচনার পর সে গাড়ি ফেরত দিতে বাধ্য হন ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা, কিন্তু এমনটি তো হওয়ার কথা ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয় তো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হতে পারে না। এর তহবিল কেবল শিক্ষা ও গবেষণার উন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের কল্যাণার্থে ব্যয় হওয়া উচিত বৈকি; কিন্তু সেই অর্থে বিলাসিতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ট্রাস্টিরা এখান থেকে কোনো মুনাফা গ্রহণ করতে পারবেন না বলেও অঙ্গীকারবদ্ধ। তারপরও এহেন আচরণ সামাজের জন্য পীড়াদায়ক বৈকি।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যাতে তাদের জন্য প্রযোজ্য আইনকানুন সঠিকভাবে পরিপালন করে কার্যক্রম পরিচালনা করে, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া জরুরি মনে করি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আইন পরিপালন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট তদারককারী ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো উদ্যোগী হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।