প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

বোনাসের নামে বিনিয়োগকারীদের ঠকাচ্ছে ৬৪ কোম্পানি

ব্যাংকের সুদহার কমতে থাকায় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে পুঁজিবাজারে। উচ্চ লভ্যাংশের হার দেখে অনেকে প্রভাবিতও হচ্ছেন। তবে এসব শেয়ারের প্রকৃত মুনাফার বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন না অনেকেই। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। তাই বিভিন্ন কোম্পানির প্রকৃত মুনাফাচিত্র তুলে ধরতে ধারাবাহিক আয়োজন। আজ ছাপা হচ্ছে তৃতীয় পর্ব

 

ইসমাইল আলী ও নাজমুল ইসলাম ফারুক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড নিয়মিতই মুনাফা করছে। পাঁচ বছরে ব্যাংকটির মুনাফা করে এক হাজার ৯২০ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটির রিজার্ভের পরিমাণ এক হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা। এরপরও ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড ১৫ বছর ধরে বোনাস লভ্যাংশ দিয়ে যাচ্ছে। এতে ব্যাংকটির শেয়ার থেকে বিনিয়োগকারীদের কোনো ডিভিডেন্ড গেইন হয়নি।

একই অবস্থা এবি ব্যাংক লিমিটেডের। নিয়মিতই মুনাফা করা ব্যাংকটির রিজার্ভের পরিমাণ এক হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা। পাঁচ বছরে ৬৩১ কোটি টাকা মুনাফা করলেও বিনিয়োগকারীদের এক যুগের বেশি সময় ধরে শুধু নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার ইতিহাস নেই এবি ব্যাংকের। প্রতিষ্ঠানটি সাতবার রাইট শেয়ার ইস্যু করেছে। ব্যাংকটির গত দুই বছরে ব্যাংকটির শেয়ারদর ১৪ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ৩১ টাকা ৪০ পয়সা পর্যন্ত ওঠানামা করেছে।

এদিকে আর্থিক খাতের বাংলাদেশ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (বিডি ফাইন্যান্স) তালিকাভুক্ত হয় ২০০৭ সালে। এর থেকে প্রতিবছরই শুধু বোনাস লভ্যাংশ দিয়ে আসছে কোম্পানিটি। ২০১৪ সালে বোনাসের সঙ্গে মাত্র ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। এছাড়া সাত বছর ১০ শতাংশ হারে বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি। যদিও কোম্পানির রিজার্ভের পরিমাণ ৫২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। মুনাফা প্রতিবছরই বাড়ছে। এছাড়া ২০১৩ সালে রাইট শেয়ারও ইস্যু করেছে কোম্পানিটি।

এভাবে ভিত্তি মজবুত থাকার পরও নগদের পরিবর্তে বোনাসে আগ্রহী তালিকাভুক্ত বেশ কিছু কোম্পানি। যদিও মুনাফার অর্থ পুনরায় বিনিয়োগ না করে রিজার্ভ বাড়াচ্ছে অনেকেই। এছাড়া ঋণে জর্জরিত হয়েও অনেকে কোম্পানি বোনাস লভ্যাংশ দিচ্ছে। সব মিলিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত ৬৪টি কোম্পানি নিয়মিতই বোনাস লভ্যাংশ দিয়ে যাচ্ছে। আর কোনো ধরনের নিয়মনীতি না থাকায় কোম্পানির ইচ্ছানুযায়ী দেওয়া বোনাস লভ্যাংশে ঠকছেন বিনিয়োগকারীরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেসব কোম্পানির আর্থিক সক্ষমতার অভাব, ব্যবসা করতে গিয়ে কোনো ধরনের লোকসানে পড়েছে সেসব কোম্পানি আপৎকালীন সময় বোনাস লভ্যাংশ দিতে পারে। তবে সব সময় বোনাস লভ্যাংশ দেওয়া মানে হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের ঠকানো। পাশাপাশি ডিভিডেন্ড গেইন থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।

ইয়াহু ফাইন্যান্সের ভাষ্যমতে, সাধারণত কোনো কোম্পানি মুনাফার অংশ পুনর্বিনিয়োগ করলে নগদ লভ্যাংশ নাও দিতে পারে। সেক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বোনাস লভ্যাংশ দেওয়া উচিত কোম্পানিগুলোর। এর অন্যতম উদাহরণ মাইক্রোসফট। প্রতিষ্ঠানটি এর বিনিয়োগকারীদের নগদ লভ্যাংশ দেয় না। কারণ মাইক্রোসফট লভ্যাংশের পুরো অর্থ গবেষণায় আবার বিনিয়োগ করে।

তবে বোনাস লভ্যাংশে কোনো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগের মুনাফার প্রকৃত হার বা ইল্ড পাওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করছে ইয়াহু ফাইন্যান্স। সংস্থাটির মতে, কোনো কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের আয়ের যে অংশ দেয়, তাহলো লভ্যাংশ। এটি সাধারণত শেয়ারপ্রতি আয় প্রকাশ করে। এক্ষেত্রে লভ্যাংশকে শেয়ারমূল্য দিয়ে ভাগ করে প্রকৃত মুনাফা নির্ণয় করা হয়। তবে বোনাস লভ্যাংশের নগদ মূল্য না থাকায় এর কোনো ইল্ড নেই।

ডিএসইর তথ্যমতে, নিয়মিত মুনাফা করলেও সাতটি ব্যাংক গত কয়েক বছর ধরে নিয়মিতই বোনাস লভ্যাংশ দিয়ে আসছে। যদিও এসব ব্যাংক মুনাফার অংশ বিনিয়োগ না করে রিজার্ভ বাড়াচ্ছে। এ তালিকায় রয়েছে আইএফআইসি ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটির রিজার্ভের পরিমাণ ৬৭৩ কোটি টাকা। অথচ ব্যাংকটি টানা ১৩ বছর ধরে বোনাস লভ্যাংশ দিয়ে যাচ্ছে। একইভাবে ৪৪৯ কোটি টাকা রিজার্ভ থাকলেও গত ১২ বছর ধরে বোনাস লভ্যাংশ দিচ্ছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক।

এছাড়া প্রিমিয়ার ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ ৩৪২ কোটি টাকা। অথচ ব্যাংকটি ৯ বছর ধরে বিনিয়োগকারীদের বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে। স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেডের রিজার্ভের পরিমাণ ৩৯৩ কোটি টাকা। কোম্পানিটির গত এক যুগে নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায়নি। আর রূপালী ব্যাংক লিমিটেডের রিজার্ভের পরিমাণ ৭২৭ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটি গত ছয় বছর বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে।

এ বিষয়ে ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানি বছর শেষে মুনাফার ওপর লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এ বিষয়ে কোনো কোম্পানি কী পরিমাণ লভ্যাংশ দেবে তার কোনো নিয়ম নেই। এতে কোনো প্রতিষ্ঠান ব্যবসা মন্দার কারণে বোনাস লভ্যাংশ দিচ্ছে আবার কেউ ভালো মুনাফা করেও বোনাস দিচ্ছে। যেসব কোম্পানি ভালো মুনাফার পরও বোনাস দিচ্ছে তারা বিনিয়োগকারীদের ঠকাচ্ছে। লভ্যাংশের বিষয়ে নিয়মনীতি থাকলে এমনটি হতো না।

তিনি আরও বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) উচিত বোনাস ও নগদ লভ্যাংশের বিষয়ে একটা নীতিমালা করে দেওয়া। আর এতে কোনো কোম্পানি বছরের পর বছর বোনাস লভ্যাংশ দিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমতো মূলধন বাড়াতে পারবে না।

তথ্যমতে, আর্থিক খাতের যেসব প্রতিষ্ঠান বোনাস লভ্যাংশ দিয়ে যাচ্ছে সেগুলোর মধ্যে আছে ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি গত পাঁচ বছরের মধ্যে তিন বছরই বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে। এ খাতের মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড ছয় বছর, ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রমোশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (আইপিডিসি) ৯ বছর, প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স লিমিটেড সাত বছর বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে বিনিয়োগকারীদের।

সিরামিক খাতের ফু-ওয়াং সিরামিক লিমিটেড তালিকাভুক্তির পর ৯ বছর ধরে বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে। প্রকৌশল খাতের গোল্ডেন সন লিমিটেড সর্বশেষ জুন ২০১৬ সমাপ্ত বছরে ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়ে কোম্পানিটি ‘বি’ ক্যাটাগরিতে নেমে আসে। কোম্পানিটির রিজার্ভের পরিমাণ ১৩২ কোটি টাকা। এর আগে মুনাফায় থাকলেও ২০০৮ সাল থেকে শুরু করে ছয় বছর বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

ন্যাশনাল পলিমার লিমিটেড গত ছয় বছর ধরে বোনাস লভ্যাংশ দিয়ে ‘এ’ ক্যাটাগরি ধরে রেখেছে। কোম্পানিটির রিজার্ভের পরিমাণ ৬৪ কোটি টাকা। ন্যাশনাল টিউবস লিমিটেডের রিজার্ভের পরিমাণ ৫৪৩ কোটি টাকা। তালিকাভুক্তির পর ৯ বছর বোনাস লভ্যাংশ প্রদান করেছে প্রতিষ্ঠানটি। অলিম্পিক অ্যাকসেসরিজ লিমিটেড ২০১২ থেকে ২০১৪ তিন বছর বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ দেয়নি। গত দুই বছর ধরে বোনাস লভ্যাংশ দিয়ে ক্যাটাগরি ধরে রেখেছে। কোম্পানিটির রিজার্ভের পরিমাণ ৬৮ কোটি টাকা। আর ইয়াকিন পলিমার লিমিটেড সদ্য বিদায়ী বছরে তালিকাভুক্ত হয়েছে। অথচ তালিকাভুক্তির প্রথম বছরই কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে।

এদিকে ওষুধ ও রসায়ন খাতের কেয়া কসমেটিকস লিমিটেড ব্যবসায়িক মন্দা ও দায়-দেনার পরে সাত বছর ধরে নগদ লভ্যাংশ দিতে পারছে না। যদিও ক্যাটাগরি ধরে রাখতে বোনাস লভ্যাংশ দিয়ে যাচ্ছে। এ খাতের এএফসি এগ্রো বায়োটেক লিমিটেড ২০১৪ সালে তালিকাভুক্তির পর থেকে বোনাস লভ্যাংশ দিয়ে আসছে। সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড ও স্যালভো কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড ক্ষেত্রে একই অবস্থা। প্রতিষ্ঠান দুটি যথাক্রমে ২০১৩ ও ২০১১ সালে তালিকাভুক্ত হয়।

খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের ফাইন ফুড লিমিটেড ২০০৯ সাল থেকে বোনাস লভ্যাংশ দেওয়া শুরু করেছে। ডিএসইতে দেওয়া তথ্যানুসারে প্রতিষ্ঠানটি তালিকাভুক্তির পর ছয় বছর বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে বলে রেকর্ড রয়েছে। এ খাতের ফু-ওয়াং ফুডস লিমিটেড আট বছর ও গোল্ডেন হার্ভেস্ট এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড গত দুই বছর ধরে বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে। তাছাড়া বঙ্গজ লিমিটেড লোকসানের কবলে পড়ে গত সমাপ্ত বছরে লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হয়ে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থান করে নিয়েছে। তবে ২০১০ সাল থেকে টানা ছয় বছর বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি।

জ্বালানি খাতের বিডি ওয়েল্ডিং সর্বশেষ পাঁচ বছরের মধ্যে চার বছরই বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে। এ খাতের জিবিবি পাওয়ার লিমিটেড ২০১২ সালে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ সময়ই বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি।

এদিকে বিমা খাতের ১৩টি কোম্পানি নিয়মিত বোনাস দিয়ে আসছে। যদিও বেশিরভাগ কোম্পানি মুনাফায় করছে। বোনাস দেওয়া কোম্পানির মধ্যে সিটি ইন্স্যুরেন্স টানা আট বছর, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স পাঁচ বছর, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স আট বছর, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স সাত বছর ধরে বোনাস লভ্যাংশ দিয়ে আসছে। নর্দার্ন জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের চিত্র একই। প্রতিটিই তালিকাভুক্তির পর থেকে বোনাস দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া নিটল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড টানা গত দুই বছর, পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড টানা আট বছর, প্রোগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স পাঁচ বছর ও সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স পাঁচ বছরের বেশিরভাগ সময়ই বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে।

আইটি খাতের ইনটেক লিমিটেড তালিকাভুক্ত হওয়ার দুই বছর পর থেকে বোনাস লভ্যাংশ দিয়ে আসছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০০২ সালে বাজার তালিকাভুক্ত হয়। আর আইটি কনসালট্যান্টস লিমিটেড সদ্য বিদায়ী বছরে তালিকাভুক্ত হয়। তালিকাভুক্ত হওয়ার পরপরই প্রতিষ্ঠানটি বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে।

বিবিধ খাতের খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ২০১৪ সালে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর থেকেই বোনাস লভ্যাংশ দিয়ে যাচ্ছে। মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড গত পাঁচ বছর ধরে বোনাস লভ্যাংশ দেয়। প্রতিষ্ঠানটি ‘বি’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। ন্যাশনাল ফিড মিল লিমিটেড গত দুই বছর বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে। উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি লিমিটেড একই চিত্র।

সেবা ও আবাসন খাতের সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড গত পাঁচ বছরের মধ্যে বেশিরভাগই নগদের সঙ্গে বোনাস দিয়েছে। তবে গত বছর শুধু বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি। আর চামড়া খাতের লিগ্যাসি ফুটওয়্যার লিমিটেড গত পাঁচ বছর ধরে বোনাস লভ্যাংশ দিয়ে আসছে।

বস্ত্র খাতের সিএমসি কামাল টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড গত পাঁচ বছরে কোনো ধরনের নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার ইতিহাস নেই। এ সময় কোম্পানিটি বোনাস দিয়েছে। সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলস লিমিটেড তালিকাভুক্ত হওয়ার পর থেকে বোনাস লভ্যাংশ দিয়ে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৫ সালে তালিকাভুক্ত হয়। ঢাকা ডায়িং অ্যান্ড ম্যানুফেকচারিং কোম্পানি লিমিটেড লোকসানে পড়ে ২০১৬ সমাপ্ত বছরে কোনো ধরনের লভ্যাংশ দেয়নি। তবে এর আগে গত ছয় বছর প্রতিষ্ঠানটি বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে। ডেল্টা স্পিনার্স লিমিটেড গত সমাপ্ত বছর, দেশ গার্মেন্টস গত দুই বছর, ফ্যামিলিটেক্স (বিডি) তিন বছর ও জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন লিমিটেড তালিকাভুক্তির পর থেকে বোনাস লভ্যাংশ দিয়ে আসছে।

এছাড়া মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডায়িং লিমিটেড টানা গত সাত বছর, রহিম টেক্সটাইল ও সাফকো স্পিনিং মিলস লিমিটেড ছয় বছর, তাল্লু স্পিনিং মিলস ২০১৬ সালে লভ্যাংশ দেয়নি। তবে আগের বছরগুলো বোনাস দিয়েছে। তুংহাই নিটিং অ্যান্ড ডায়িং, জাহিন স্পিনিং লিমিটেড তালিকাভুক্তির পর বোনাস লভ্যাংশ দিয়ে আসছে। প্রতিষ্ঠান দুটি যথাক্রমে ২০১৪ ও ২০১৫ সালে তালিকাভুক্ত হয়। একই চিত্র আরএন স্পিনিংয়ের।

এদিকে ভ্রমণ ও অবকাশ খাতের ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ (বিডি) লিমিটেডের একই চিত্র লক্ষ করা গেছে। প্রতিষ্ঠান ২০১০ সালে বাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ওই সময় থেকে প্রতিবছর কোম্পাটি বোনাস লভ্যাংশ দিয়ে আসছে।

লভ্যাংশ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, স্বচ্ছ কোম্পানি সবসময়ই নগদ লভ্যাংশ দেয়। যেসব কোম্পানির আর্থিক ভিত্তি তেমন ভালো না তারাই কেবল বোনাস লভ্যাংশ দেয়। আবার অনেক কোম্পানি ভালো ব্যবসা করেও বিনিয়োগকারীদের ঠকাতে বোনাস লভ্যাংশ দেয়। আর একসময় বোনাস লভ্যাংশ দিতে দিতে প্রতিষ্ঠান তলানিতে নেমে যায়। আর তাই নগদ লভ্যাংশ সবার জন্য ভালো।