নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যবসায়ী ও দেশের জনগণের কাছে রাষ্ট্রের আমানত হচ্ছে রাজস্ব। কর না দিয়ে এনবিআরকে ঠকানো মানে বীরত্ব দেখানো নয়। যারা কর ফাঁকি দেয় তারা মূলত নিজেরাই ঠকে যায়। এসব বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সচেতন করতে ধর্মীয় শিক্ষাগুরুরা এ আইনের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করবেন। গতকাল রোববার রাজধানীর কাকরাইলে আইডিইবি ভবনে ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন-২০১২’ শীর্ষক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
আগামী অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে বাস্তবায়ন হতে চলা ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন-২০১২’ আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সচেতনতা ও সম্পৃক্ততা বাড়াতে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব
মোহাম্মদ শফিউল আলম। এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সফিকুল ইসলাম বিশেষ অতিথি ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘এনবিআরের রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। এনবিআর ও করদাতারা এখন পরস্পরের সক্রিয় অংশীদার।’
করদাতাদের দায়িত্ব সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ী ও দেশের জনগণের কাছে রাষ্ট্রের আমানত হচ্ছে রাজস্ব। কর না দিয়ে এনবিআরকে ঠকানো মানে বীরত্ব দেখানো নয়। কর ফাঁকি দিয়ে আমরা মনে করতে পারি, ১৬ কোটি মানুষকে ঠকালাম। আসলে আমরা নিজেরাই ঠকে গেলাম।’ রাজস্ব না দিয়ে মানুষের অধিকার নষ্ট না করার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়ন সূচকে ১৯৮টি রাষ্ট্রের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৬তম।’ ব্যবসার পরিবেশ সূচক উন্নয়ন করার জন্য আইন সহজীকরণ, হয়রানিমুক্ত সেবা দেওয়া, জনবান্ধব অফিসে রূপান্তর ও ব্যবসায়ীদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এসব করতে পারলে ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান পাঁচ বছরে ১০০’র নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেন, ‘ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তারা দেশের অগ্রগতিতে মূল ভূমিকা পালন করছেন। নতুন মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইনের বিষয়ে তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ জরুরি। এ লক্ষ্যে এফবিসিসিআই’র সঙ্গে পার্টনারশিপ স্থাপন করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে এফবিসিসিআই’র উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ (টিওটি) দেওয়া হচ্ছে।’
নতুন মূসক আইন বাস্তবায়নে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অংশীদারত্ব স্থাপন করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় শিক্ষাগুরুরা এ আইনের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করবেন।
কর্মশালায় বক্তারা ভ্যাট আইনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনায় বলেন, নতুন মূসক আইন আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন, যুগোপযোগী ও সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক। এ আইন অনুযায়ী ক্ষুদ্র্র ও মাঝারী ব্যবসায়ীদের বার্ষিক টার্নওভার ৩০ লাখ টাকার কম হলে তাদের কোনো কর দিতে হবে না। যাদের বার্ষিক টার্নওভার ৩০ থেকে ৮০ লাখ টাকা তাদের ৩ শতাংশ হারে টার্নওভার কর দিতে হবে। আইনটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভ্যাট-জিডিপি হার সমানুপাতে বাড়বে বলেও আশা করা হয় কর্মশালায়।