পূর্ব প্রকাশিতের পর………..
সংমিশ্রণ বা সংযুক্তকরণ শিল্প: যে শিল্প-কারখানায় অংশ বা উপাদানগুলো সংযুক্ত বা সংমিশ্রণ করে একটি সম্পূর্ণ প্রস্তুত পণ্য তৈরি করা হয়, তাকে সংমিশ্রণ শিল্প বলে। সংমিশ্রণ শিল্পে ব্যবহৃত অংশ বা উপাদানগুলো সংমিশ্রণ শিল্পের উৎপাদিত হতে পারে অথবা অন্য শিল্প-কারখানায় প্রস্তুত পৃথক পৃথক উপাদানগুলো সংগ্রহ ও একত্র করে সংমিশ্রণজাত পণ্য তৈরি হতে পারে। এ ধরনের শিল্পের প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো: গাড়ি, টেলিভিশন, ক্যামেরা, কম্পিউটার, এক্স-রে মেশিন, ইসিজি মেশিন, ফ্রিজ প্রভৃতি।
নির্মাণ শিল্প: নির্মাণপ্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত শিল্প-কারখানাকে নির্মাণ শিল্প বলে। উদাহরণ: বাড়িঘর নির্মাণ, রাস্তাঘাট নির্মাণ, বাঁধ নির্মাণ, সেতু নির্মাণ প্রভৃতি। উৎপাদনমুখী শিল্প-কারখানায় প্রস্তুত পণ্য নির্মাণ শিল্পে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। যেমন: লোহা, ইট, সিমেন্ট, বালু, পাথর, মার্বেল, কাঠ, গ্লাস, রাবার, কলকব্জা প্রভৃতি নির্মাণ শিল্পে ব্যবহৃত হয়। অবকাঠামো ও অধিকাঠামোর পূর্ণ বিকাশ যে কোনো দেশের শিল্পায়নের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। নির্মাণ শিল্পের পরিপূর্ণ বিকাশের মাধ্যমেই কেবল অবকাঠামোর ও অধিকাঠামোর বিকাশ হতে পারে।
বাণিজ্য
যে কোনো শিল্পের মূল লক্ষ্য হলো মানুষের চাহিদা মোতাবেক পণ্য ও সেবাসামগ্রী উৎপাদন করা। আর বাণিজ্যের মূল লক্ষ্য হলো, এসব পণ্য ও সেবাসামগ্রী ভোক্তা ও ব্যবহারকারীদের রুচি, চাহিদা ও সুবিধা অনুযায়ী সেগুলো বিতরণ বা বিপণনের ব্যবস্থা করা। বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এক স্থানে প্রস্তুত পণ্য বহু স্থানে পৌঁছে যায়। বর্তমানে সমাজব্যবস্থায় পরিবহন, বিমাকরণ, গুদামজাতকরণ, ব্যাংকিং ও প্রচার প্রক্রিয়ার সমন্বয়ে বাণিজ্যিক প্রক্রিয়া একটি সুন্দর ও উন্নত ব্যবস্থাপনার ওপর ভিত্তি করে প্রসার হচ্ছে।
এভলিন থমাসের মতে বাণিজ্যের সংজ্ঞা নিম্ন রূপ: ‘বাণিজ্যিক কার্যক্রম বলতে পণ্যের ক্রয়-বিক্রয়, পণ্যের বিনিময় এবং বিতরণ ও বিপণনকে বোঝায়।’
সাধারণত কোনো বিশেষ পণ্য বা সেবাসামগ্রী কোনো একটি জায়গায় প্রস্তুত বা তৈরি হয় কিন্তু ভোক্তা বা ব্যবহারকারীরা দূরে ও কাছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে বা বসবাস করে। এ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভোক্তা ও ব্যবহারকারীদের কাছে পণ্য বা সেবাসামগ্রী পৌঁছে দেওয়াই বাণিজ্যিক কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য। ভোক্তা ও ব্যবহারকারীদের যখন যেখানে দরকার ও যে পরিমাণ দরকার সেরূপ চাহিদা মোতাবেক যেন পণ্য পেতে পারে, সে ধরনের ব্যবস্থা করা বাণিজ্যিক কার্যক্রমের অন্যতম লক্ষ্য। এভাবে বাণিজ্যের চাকা ঘোরে আর পণ্য ও সেবাসামগ্রী পৌঁছে যায় ভোক্তা ও ব্যবহারকারীদের দোরগোড়ায়।
বাণিজ্যের শ্রেণিবিভাগ
বাণিজ্যিক কার্যক্রমকে দুই ভাগ করা যায়। এগুলো হলো ট্রেড বা কেনাবেচা (দোকানদারি) ও কেনাবেচার সহায়ক উপাদান।
ট্রেড বা কেনাবেচা (দোকানদারি): দোকানদারি বলতে পণ্যের ক্রয় ও বিক্রয়কে বোঝায়। একজন দোকানদার পণ্যদ্রব্য কিনে নিয়ে আসেন এবং কিছু মুনাফা করে সেই পণ্য অন্য দোকানদার বা ভোক্তার কাছে বিক্রি করেন। ব্যক্তির বা সমাজে চাহিদা আছে এমন পণ্য কিনে আনেন এবং সুনির্দিষ্ট পরিমাণে লাভ বা মুনাফায় তা বিক্রি করেন। সব সময় যে মুনাফা হয় এমন নয়, দোকানদার কখনও কখনও ক্ষতিরও সম্মুখীন হন।
পণ্য বা সেবাসামগ্রী একটি সুনির্দিষ্টি স্থানে তৈরি হয়; কিন্তু পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গ্রাহক ও ভোক্তারা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকেন। উদ্যোক্তা বা উৎপাদনকারীর একার পক্ষে এই বিশাল ভোক্তাগোষ্ঠীর কাছে পণ্য বা সেবাসামগ্রী পৌঁছানো এককথায় অসম্ভব কাজ। সে জন্য উদ্যোক্তা বা উৎপাদক দেশের সব প্রান্তে পরিবেশেক নিয়োগ করেন। এ পরিবেশকরাই বিক্রেতাদের মাধ্যমে পণ্য ও সেবাসামগ্রী ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিশাল গ্রাহক ও ভোক্তার কাছে রুচি, চাহিদা ও সুবিধামতো পণ্য ও সেবা টাকার বিনিময়ে পৌঁছে দেন। এ পণ্য বেচাকেনায় পরিবেশক, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা সুনির্দিষ্ট পরিমাণে মুনাফা অর্জন করেন। তবে সব সময় যে মুনাফা হয় তেমন নয়, কখনও কখনও পণ্যের চাহিদা না থাকলে বা কম দামে অন্য কোম্পানির একই কিন্তু উন্নত মানের পণ্য বাজারে এলে তাদের লোকসানের মুখোমুখি হতে হয়।
দোকানদারির শ্রেণিবিভাগ
দোকানদারিকে দুই ভাগ করা যায়। এগুলো হলো অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক।
অভ্যন্তরীণ দোকানদারি: এ ধরনের দোকানদারিকে গৃহ-বাণিজ্যও বলা হয়। কারণ এ ধরনের দোকানদারি একটি দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে এবং এটি হতে পারে (ক) স্থানীয় দোকানদারি, যা একটি ছোট এলাকা বা শহরে সংঘটিত হয়, (খ) রাজ্য বা প্রদেশভিত্তিক দোকানদারি যাহা বড় শহর, রাজ্য ও প্রদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে; (গ) আন্তপ্রদেশ দোকানদারি এ ধরনের দোকানদারিতে পণ্য বা সেবাসামগ্রী এক প্রদেশ থেকে অন্য প্রদেশে ক্রয়-বিক্রয় হয়। উল্লিখিত যে কোনো ধরনের দোকানদারি ব্যবসায়িক লেনদেনের ক্ষেত্রে ওই দেশের নিজস্ব মুদ্রায় ও ব্যাংকের মাধ্যমে হয়ে থাকে। অভ্যন্তরীণ দোকানদারির প্রক্রিয়াকে আবার দুই ভাগ করা হয়: পাইকারি ও খুচরা। (চলবে)
অধ্যাপক, ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়