পূর্ব প্রকাশিতের পর…………
ড. শাহ ইমরান: সমাজতান্ত্রিক বা সাম্যবাদী ব্যবস্থা: এই অর্থ ব্যবস্থায় বড় বড় কলকারখানার মালিক বা নিয়ন্ত্রক সরকার। বিতরণ ও বিপণন ব্যবস্থাও সরকার কর্তৃক পরিচালিত হয়।
মিশ্র ব্যবস্থা: উপরোক্ত দুটি অর্থ ব্যবস্থার ভালো দিকগুলোর সমন্বয়ে মিশ্র অর্থনীতি গড়ে ওঠে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থার ভালো দিক হলো শ্রেয়তর আর্থিক উন্নয়ন, উৎপাদনের বর্ধিত হার ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রসার। পক্ষান্তরে সাম্যবাদী অর্থনীতির ভালো দিকগুলো হলো উপার্জনের অসমতা হ্রাসকরণ, বড় ও মৌলিক শিল্পগুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকে আর ভোগ্যপণ্যের ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করা হয়। মোট কথা হলো মিশ্রনীতিতে একটি রাষ্ট্রের অর্থ-ব্যবস্থার কিছু উপাদান সরকার নিয়ন্ত্রণ করে আর কিছু উপাদান ব্যক্তিমালিকানায় ছেড়ে দেয়ো হয়। ফলে অর্থ ব্যবস্থাটি কল্যাণকর ব্যবস্থা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
ব্যবস্থাপনা: বিভিন্ন ব্যবসায়-বাণিজ্যিক কার্যক্রমের সুষ্ঠু পরিচালনা ও সামঞ্জস্য বিধান করাকে ব্যবস্থাপনা বলে। ছোট ওষুধের দোকান থেকে বড় হাসপাতাল, ওষুধ কারখানা বা অন্য কোনো সংগঠন সবারই নিজস্ব ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি রয়েছে। দক্ষ ও সুস্থির ব্যবস্থাপনা ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানই স্থায়িত্ব পায় না।
ওষুধ ব্যবস্থাপনা
ব্যবস্থাপনার মূল নীতি ও চর্চাগুলো যখন ওষুধ ব্যবসায় প্রয়োগ করা হয়, তখন তাকে ওষুধ ব্যবস্থাপনা বলে। টেয়ারির মতে, ব্যবস্থাপনার সংজ্ঞা- পরিকল্পনা, সংগঠন, কর্মতৎপরতা ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মানবসম্পদ ও অন্যান্য সম্পদ ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের কর্মপন্থা নির্ধারণ ও সম্পাদনকে ব্যবস্থাপনা বলে। মূলকথা হলো, ব্যবস্থাপনা হলো প্রতিষ্ঠানের নানা ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনার কৌশল ও বিজ্ঞানসম্মত উপায়।
ব্যবস্থাপনার উপাদান
ব্যবস্থাপনার উপাদানগুলো হলো ১. পরিকল্পনা, ২. সংগঠিত করা, ৩. কর্মী নিয়োগ, ৪. পরিচালনা, ৫. নিয়ন্ত্রণ ও ৬. সমন্বয়।
পরিকল্পনা: পরিকল্পনা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ ব্যবস্থাপনার সব কার্যক্রম পরিকল্পনার ওপর নির্ভর করে। একটি ওষুধের দোকান স্থাপন করতে গেলে আর্থিক সামর্থ্যরে পাশাপাশি নিচের বিষয়গুলোও ভাবতে হবে:
ক. কী করতে হবে; খ. কখন ও কোথায় করতে হবে; গ. কীভাবে করতে হবে; ঘ. কোন ধরনের ওষুধের দোকান স্থাপন করা হবে; ঙ. ভবন ও আসবাবপত্র কেমন হবে; চ. কতজন দক্ষ ফার্মাসিস্ট ও অন্যান্য কর্মী লাগবে; ছ. তাদের বেতনভাতা কেমন হবে; জ. বার্ষিক আয় কত হতে পারে; ঝ. ভালো মানের ওষুধ ন্যায্যমূল্যে সরবরাহ করা যাবে কি না, প্রভৃতি।
সংগঠিত করা: সংগঠন বলতে বোঝায়, একদল লোক একটি সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনের নিমিত্তে মিলেমিশে কাজ করা। সুতরাং উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য সঠিক লোককে সঠিক জায়গায় বসাতে হবে।
কর্মী নিয়োগ: ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো সুনির্দিষ্টি কাজ করার জন্য সবচেয়ে যোগ্য দক্ষ লোক বাছাই করা। কর্মী ব্যবস্থাপনায় যেসব বিষয়কে প্রাধান্য দিতে হবে, সেগুলো হলোÑনিয়োগ, বাছাই, ট্রেনিং দেওয়া, উন্নয়ন, উপযুক্ত বেতনভাতা প্রদান ও চাকরি থেকে প্রয়োজনে বরখাস্তকরণ।
একটি হাসপাতাল ফার্মেসিতে যে ধরনের লোকবল দরকার, তা হলো নিবন্ধনকৃত ফার্মাসিষ্ট, দক্ষ কর্মী, অদক্ষ কর্মী ও কেরানি বা দাফতরিক কর্মী।
সব কর্মীকে তার কাজের বিবরণ ও কর্মস্থল সম্পর্কে ওয়াকিফহাল থাকতে হবে। সব কর্মীকে সর্বোত্তম পন্থায় তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে সচেষ্ট থাকতে হবে। কারণ তাদের মনে রাখতে হবে, তারা রোগীর স্বাস্থ্যসেবার কাজে নিয়োজিত আছেন। সব কর্মীকে নিজেদের মধ্যে ও অন্য কর্মীদের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।
পরিচালনা: সংগঠনের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য সবাই যেন দক্ষতা ও কার্যকরভাবে প্রতিটি কর্ম সুচারুরূপে সম্পন্ন করে, সেজন্য কর্তৃপক্ষকে যথোপযুক্ত নির্দেশনা দিতে হবে। নির্দেশনা প্রদান ও নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একজন ব্যবস্থাপকের নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলি থাকতে হবে, যাতে তিনি অধীনস্থ লোকজনকে প্রভাবিত, মটিভেট ও আনুগত্য বজায় রাখতে পারেন।
নিয়ন্ত্রণ: একজন ব্যবস্থাপকের তার অধীন লোকজনের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে। তার মানে, প্রতিটি কর্মী নিয়ম ও নির্দেশনা মেনে প্রতিটি কাজ সম্পাদনা করবেন। তবে অযাচিত ও অন্যায়ভাবে কারও কাজে হস্তক্ষেপ করা যাবে না। তাহলে প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে।
সমন্বয়: ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যের সফল বাস্তবায়নের জন্য কর্তৃপক্ষকে খেয়াল রাখতে হবে যে, প্রতিটি কর্মী ইউনিট ও প্রতিটি ব্যক্তি যেন তার ওপর অর্পিত কাজটি ভালো করে বোঝেন এবং দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করেন। সবাই পরস্পরের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে মিলেমিশে কাজ করলেই কেবল প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য সফলতার মুখ দেখবে। (শেষ)
অধ্যাপক, ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়