দেশের ব্যাংক খাত যেন অনিয়মের গল্পের এক ঠাকুমার ঝুলি। যে ঝুলি থেকে একের পর অনিয়মের গল্প বের হতেই থাকে। তেমনই এক অনিয়মের ঘটনা গতকাল প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক শেয়ার বিজে। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, সঞ্চয়ী, বিশেষ সঞ্চয়ী ও এসওডি ঋণ হিসাবের নামে ভুয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে হিসাব খুলে আমানতকারীদের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বেসরকারি খাতের এনসিসি ব্যাংকের কর্মকর্তারা। ব্যাংক কর্মকর্তাদের এমন অনিয়ম অত্যন্ত দুঃখজনক।
শেয়র বিজে প্রকাশিত ‘এনসিসি ব্যাংক: ঋণগ্রহীতা সেজে কর্মকর্তারা তুলে নেন ঋণের টাকা’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্য মতে ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক (এনসিসি) নরসিংদী সদর শাখায় কর্মকর্তারা পরস্পরের যোগসাজশে ব্যাংকের এক কোটি ৬০ লাখ ৮৮ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। বিষয়টি তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)
ব্যাংকের কর্মকর্তাদের অনিয়মে জড়িয়ে পড়া বা গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ করার ঘটনা নতুন কোনো বিষয় নয়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এ ধরনের ঘটনা বাড়ছে। কয়েক মাস আগে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের গ্রাহকদের অর্থ আত্মাসাতের অভিযোগ পাওয়া যায় ব্যাংকটির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। এছাড়া হলমার্ক, বিসমিল্লাহ, অ্যানন টেক্সসহ যেসব বড় বড় ঋণ কেলেঙ্কারি সংঘটিত হয়েছে, সেগুলোর পেছনেও কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে মর্মে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
ব্যাংক হচ্ছে গ্রাহকদের আমানতের রক্ষক। ব্যাংকের কর্মীরা গ্রাহকদের অর্থ ও অন্যান্য গচ্ছিত সম্পদের রক্ষকের ভূমিকা পালন করে থাকেন। কিন্তু সেই রক্ষকই যদি ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, তাহলে মানুষের আর যাওয়ার কোনো জায়গা থাকে না। আর ব্যাংকে যদি কর্মীদের মাধ্যমে এমন অনিয়মের ঘটনা ঘটতে থাকে তাহলে ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থার সংকট দেখা দেবে। কাজেই ব্যাংকে যাতে অনিয়ম না হয় সেই পদক্ষেপ নিতে হবে।
এ কথা ঠিক যে, কোনো মানুষটি ব্যাংকে গেলে পুরোপুরি সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন সেটি বলা মুশকিল। এমনকি এমন কোনো মানদণ্ড নেই যার মাধ্যমে ব্যক্তির সততা নির্ণয় করা যায়। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকিং সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহƒত বিভিন্ন পদ্ধতিকে এমনভাবে ডিজাইন করতে হবে যাতে কেই চাইলেও কোনো ধরনের অনিয়ম করার সুযোগ না পায় বা গ্রাহকের অর্থ নিজের হিসাবে নিয়ে নিতে না পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থ ব্যবস্থাপনায় সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে। এটি অত্যন্ত নিরাপদ একটি ব্যবস্থা। যদিও ২০১৬ সালে এটিও ভেদ করে অর্থ লোপাট করে নিয়েছিল হ্যাকাররা। তবে তা সত্ত্বেও এ ব্যবস্থাটি অত্যন্ত সুরক্ষিত একটি বিষয়। অন্যান্য সব ব্যাংকের লেনদেনের ক্ষেত্রেও এমন শক্তিশালী সফটওয়ারের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। ব্যাংকের অনিয়ম রোধে কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নেবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।