প্রতিনিধি, ব্রাহ্মণবড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া- ২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত প্রার্থীরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। শনিবার (১৪ জানুয়ারি) জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে তিন প্রার্থী তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। আর এতে করেই কপাল খুলতে যাচ্ছে বিএনপি’র বহিস্কৃত নেতা, সাবেক প্রতিমন্ত্রী উকিল আবদুস সাত্তার ভুইয়ার।
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারকারী প্রার্থীরা হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন-সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন মঈন ও আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু। জেলা প্রশাসক ও রিটারিং অফিসার মো. শাহগীর আলম তিন প্রার্থীর প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, ১৩ জানুয়ারি শুক্রবার কেন্দ্রীয় নির্দেশে জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রার্থীদের এক বৈঠকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত প্রার্থীদের নিরুৎসাহিত করা হয়। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হওয়া সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এম.পি, সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আল-মামুন সরকারসহ দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উপ-নির্বাচনের এক বছর পরই সেখানে হওয়া পরবর্তী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে হলে যেনো প্রার্থীরা সিদ্ধান্ত মেনে নেন সে বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেয়া হয়। মূলত উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়াকে কেন্দ্র করেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের সরে যাওয়া। এই আসনে প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে আব্দুস সাত্তার কিংবা অন্য প্রার্থী জয়ী হলে সেক্ষেত্রে দলীয় কৌশল বাস্তবায়ন হবে, যেটি কেন্দ্রীয় নির্দেশনা। এই অবস্থায় আসনটিতে কপাল খুলতে যাচ্ছে পদত্যাগী-বহিস্কৃত বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক ৫ বারের এম.পি ও প্রতিমন্ত্রী উকিল আব্দুস সাত্তার ভুইয়ার। সংসদ থেকে বিএনপির পদত্যাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে সাত্তারকে সরকার নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছেন বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছিলো।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা প্রশাসক আল-মামুন সরকার বলেন, ‘নির্বাচনকে ঘিরে সেখানে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত তিন প্রার্থী অংশগ্রহণ করায় দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে বিভক্তর সৃষ্টি হচ্ছিলো। এই অবস্থায় দলীয় বিভক্তি রুখতে ওই তিনজনকে নির্বাচনে অংশ নিতে নিরুৎসাহিত করা হয়। তারা তাদের সম্পূর্ণ স্বাধীন সিদ্ধান্তে কোনো রকম চাপ ছাড়াই তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছেন। দলীয় কোনো চাপ ছিলো না।’
মনোনয়ন প্রত্যাহারের বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু বলেন, ‘শুক্রবার জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে জেলা নেতাদের সাথে প্রার্থীদের আলোচনার প্রেক্ষিতে আমি স্বল্প সময়ের জন্য এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাই মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছি। তবে আগামী নির্বাচনের জন্য আমি প্রস্তুতি নিবো।’ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন মঈন বলেন, ‘অল্প সময়ের জন্য এম.পি হয়ে যেহেতু মানুষের কাঙ্খিত উন্নয়ন করতে পারবো না তাই আমি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছি। আমি মানুষের আস্থা এবং ভালবাসা হারাতে চাইনা।’ আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহান আলম সাজু জানান, ‘অল্প সময়ের জন্য আমি উপ-নির্বাচনে অংশ নিতে চাচ্ছিনা। তাই আমি মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছি। আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

উল্লেখ্য, সম্প্রতি বিএনপির হাইকমাণ্ডের সিদ্ধান্তে গত ১১ ডিসেম্বর উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করলে এ আসনটি শূন্য হয়। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি এই আসনে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সরকারি দল আওয়ামী লীগ এই আসনটিতে তাদের দলীয় মনোনয়ন না দিয়ে উন্মুক্ত ঘোষণা করেন। এদিকে ভোটের আগে বেশ আলোচনায় আসেন বিএনপি থেকে পদত্যাগী-বহিস্কৃত পাঁচবারের সংসদ সদস্য এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী ৮৪ বছর বয়েসি উকিল আব্দুস সাত্তার ভুইয়া। দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে পদত্যাগ করে ক্ষোভে দল থেকে পদত্যাগ করেন। তার নামে কেনা হয় মনোনয়নপত্র। এর পরপরই তাকে বহিস্কারের প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি। সর্বশেষ জেলা বিএনপিসহ সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপি তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে।
প্রসঙ্গত, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-(সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনে মোট ভোটারের সংখ্যা তিন লাখ ৬৯ হাজার ৫৪৩ জন। তন্মধ্যে সরাইল উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে দুই লাখ ৩৭ হাজার ১৫৩ জন এবং আশুগঞ্জ উপজেলার আট ইউনিয়নে এক লাখ ৩২ হাজার ৯৭০ জন।