প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

ভারতের রফতানি প্রণোদনায় আমাদের করণীয়

‘পোশাক রফতানিতে প্রণোদনা দ্বিগুণ করেছে ভারত’ শিরোনামে যে খবর ছাপা হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে, তা আমাদের জন্য ভাবনার বৈকি। প্রখ্যাত ভারতীয় সংবাদপত্র ইকোনমিক টাইমসের বরাত দিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, মূলত বস্ত্র, চামড়া, গহনা, হস্তশিল্প, কার্পেট ও তৈরি পোশাকের মতো শ্রমনিবিড় খাতগুলোর জন্য ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ হাজার ১৪৩ কোটি ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য ৬৮৫ কোটি রুপি প্রণোদনার প্রাক্কলন করেছে দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এগুলো দেওয়া হচ্ছে আবার মার্চেন্ডাইজ এক্সপোর্ট ফ্রম ইন্ডিয়া স্কিমের (এমইআইএস) আওতায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এর অন্তর্ভুক্ত রফতানিকারকরা মোট রফতানিমূল্যের ওপর একটা নির্দিষ্ট হারে কর কর্তন সুবিধা উপভোগ করবেন চলতি মাস থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত। প্রশ্ন হলো, ভারত কেন এমন একটা সিদ্ধান্ত নিতে গেল? আপাতদৃষ্টিতে কারণটা আমাদের কাছে মোটামুটি স্পষ্ট বলে প্রতীয়মান। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের বিশেষত শ্রমঘন শিল্প খাতের রফতানি লক্ষণীয়ভাবে কমেছে। তার কারণ প্রধানত উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি। দেশটির অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, এ ব্যয় বৃদ্ধির কারণ আবার হালে আরোপিত গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স (জিএসটি)। কর বেড়ে যাওয়ায় ভারতীয় উদ্যোক্তাদের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। ফলে দামের দিক থেকে পণ্যগুলো প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বজায় রাখতে পারছে না আন্তর্জাতিক বাজারে। এমনিতেই বিভিন্ন পণ্য রফতানি করতে গিয়ে বাংলাদেশ বা ভিয়েতনামের মতো দেশগুলো যে বাড়তি সুবিধা পায়, ভারতের মতো অর্থনৈতিক পরাশক্তির ক্ষেত্রে সেটা তুলনায় অনেক কম। নতুন এ প্রণোদনা প্যাকেজকে ভারত সরকার সম্ভবত দেখছে বাণিজ্যে প্রতি-ভারসাম্যকরণ উপকরণ হিসেবে। সমস্যা হলো, ভারতের মতো বৃহৎ অর্থনীতি যখন কোনো নির্দিষ্ট খাতে বিপুল প্রণোদনা ঢালতে শুরু করে, তাতে একই খাতের নিকটবর্তী প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর ওপর তার প্রভাব না পড়ে পারে না। এদিক থেকে বিষয়টি আমাদের জন্য উদ্বেগজনক বৈকি।

বিপত্তি হচ্ছে, জিএসটি’র মতো করারোপ একটি দেশের একেবারেই অভ্যন্তরীণ নীতিগত সিদ্ধান্ত। সেটির প্রভাব হ্রাসের জন্য কোন দেশ কেমন নীতি গ্রহণ করবে, তার ওপরও অন্যের হাত নেই। ক্ষীণ একটা আশা ছিল, যদি বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা শক্তিশালী হতো অথবা বৈশ্বিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিটা জোরালো হতো আরও। কাজ হোক বা না হোক, আন্তর্জাতিক দরবারে ভারতের এমন সিদ্ধান্তে আপত্তি জানাতে পারতাম আমরা। দুর্ভাগ্যবশত ওই দুই সম্ভাব্য অপশনের কোনোটিই আমাদের বেলায় প্রযোজ্য নয়। ফলে ফরিয়াদ জানিয়ে তেমন লাভ হবে বলে মনে হয় না। তবু প্রতীকী গুরুত্বের কারণে এবং ‘বৃহৎ’ প্রচেষ্টার ক্ষুদ্রাংশ হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের উচিত হবে ইস্যুটি ভারতের গোচরে আনা। স্থানীয় তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা দরকার। সঙ্গে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন, ভারতের সিদ্ধান্তটির কোনো কুপ্রভাব আদৌ আমাদের আন্তর্জাতিক বাজারে পড়ে কি না। যদি পড়ে, তাহলে এর ক্ষতির মাত্রাটা কেমন। কেননা এক্ষেত্রে বহিঃস্থভাবে ভারতকে চাপ দেওয়া কঠিন। সহজতর উপায় হচ্ছে বহিঃস্থ পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যনীতিকে সমন্বয় করে নেওয়া। স্থানীয় গার্মেন্ট ব্যবসায়ীদের ওপরও ভরসা রাখতে হবে। ২০০৮ সালে সৃষ্ট বিশ্বমন্দাজনিত পরিস্থিতি ভালোভাবেই সামলেছেন তারা। পরবর্তী সময়ে রানা প্লাজা ধসের ঘটনাও ছিল রফতানি বাজারে বিরাট ধাক্কা। তখন অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ায় এবং কমপ্লায়েন্স বাস্তবায়নের চাপে আমাদের পোশাক শিল্প মুখ থুবড়ে পড়বে। সুতরাং ভারতের সাম্প্রতিক প্রণোদনা নীতির কোনো প্রভাব তারা এড়িয়ে যেতে পারবেন না, এটা বিশ্বাস হতে চায় না। তবু যদি তেমন প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় সরকার সর্বাত্মকভাবে তাদের পাশে থাকবে, এমনটাই প্রত্যাশা।