প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

ভারতে নোট বাতিলের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী: হীরা বাজারে মন্দা

 

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ভারতে নরেন্দ্র মোদি সরকারের আকস্মিক ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিলের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী হীরা বাজারে ব্যাপক ধস নেমেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধাক্কার প্রভাব আগামী বছর ভ্যালেন্টাইন’স ডে’র পর পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবে। খবর রয়টার্স।

গুজরাটের বাণিজ্যনগরী সুরাটে হীরা কাটা ও পালিশের কাজ প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। অথচ ভারতের পশ্চিম প্রান্তের এ শহরেই সারা বিশ্বের প্রায় ৮০ শতাংশের বেশি হীরা কাটা ও পালিশের কাজ হয়। এবড়ো-থেবড়ো হীরার পাথরে তাক লাগানো বিচ্ছুরণ আনতে ছোট্ট খুপরি কারখানা বা ঘরে একটানা ১০-১২ ঘণ্টা কাজ করেন কারিগররা। তবে সে ব্যবসা চলে পুরোপুরি নগদ অর্থে। আর মূল সমস্যা সেখানেই। দেশটিতে গত ৮ নভেম্বরের পর থেকে নগদ অর্থ নিয়ে চলছে লঙ্কাকাণ্ড। অবশ্য এই সংকট মূলত তৈরি হয়েছে তুলনামূলক কমদামি হীরার ক্ষেত্রে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, নগদ অর্থের সংকট তীব্র। অধিকাংশ কারিগরই তাই কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন। ব্যবসা তলানিতে ঠেকেছে অলিগলিতে ছড়িয়ে থাকা হাজার হাজার সেসব ছোট ব্যবসায়ীরও, যারা পালিশ করা হীরা কারিগরদের থেকে নিয়ে বিভিন্ন সংস্থা বা ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেন।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতে প্রায় ১০ লাখ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে হীরাশিল্পে কাজ করে। যার মধ্যে বেশিরভাগই সুরাটের। তবে শুধু নগদ অর্থের অভাব নয়, করফাঁকি আটকানো নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কঠোর অবস্থানেও সংকটে পড়েছেন এসব ব্যবসায়ীর একাংশ, যারা বেআইনিভাবে ব্যবসা চালিয়ে মুনাফা করেন বা কর ফাঁকি দেন।

সংশ্লিষ্ট এই ব্যবসায়ীরা আক্ষেপ করে বলেন, এখন কর সংক্রান্ত বৈধ কাগজপত্র দেখে তবেই হীরা কেনার প্রবণতা বেড়েছে। বৈধ কাগজপত্র না থাকার কারণে মার খাচ্ছে তাদের ব্যবসা।

ভারতে নোট বাতিলের প্রভাবে তৈরি হওয়া এসব সমস্যার মাশুল দিতে হচ্ছে বিশ্বের হীরা ব্যবসায়ীদেরও। সংশ্লিষ্টদের দাবি, ভারতে হীরা কাটা-পালিশের কাজ কিছুটা থমকে থাকায় মূলত নিচুমানের ওই এবড়ো-থেবড়ো হীরার পাথরেই ছেয়ে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজার, যার জেরে মার খাচ্ছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

বিশ্বের অন্যতম সেরা হীরা খননকারী ও গয়না তৈরির সংস্থা ডি বিয়ার্সও তা স্বীকার করেছে। পাশাপাশি তারা জানিয়েছে, ভারতে হীরার বাজার পড়তির দিকে। তাই বর্তমানে কমদামি গয়নায় ব্যবহƒত হীরার চাহিদা ও দাম দুটিই কমছে। একই কথা বলছে কানাডার স্টর্নোওয়ে ডায়মন্ড ও ডোমিনিয়ন ডায়মন্ড।

এ তো গেল পাইকারি বাজারের চিত্র। নগদ অর্থের সংকটে খুচরা বাজারের অবস্থা আরও নাজুক।

হীরাশিল্প সংশ্লিষ্টদের দাবি, নগদ অর্থের অভাব যে ভারতে সাধারণ মানুষের হীরার গয়না কেনার আকাক্সক্ষায় বড় রকমের প্রভাব ফেলেছে, তা এ মুহূর্তে স্পষ্ট। কারণ তাদের হাতে নগদ অর্থ কম। শখ করে হীরার গয়না কেনাও তাই আপাতত বন্ধ। গয়নাশিল্পের দাবি, শীতে বিয়ের মৌসুমে সাধারণত হীরার চাহিদা বাড়ে। কিন্তু এবার ক্রেতাদের হাতে নগদ অর্থসংকট থাকায় বিক্রি প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কমেছে।

যদিও ভারতের হীরা কাটা ও পালিশের কাজে ফের গতি এলে পরিস্থিতি বদলাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু কতদিন অপেক্ষা করতে হবে, তা নিয়ে চিন্তা থেকেই যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, হীরা ব্যবসার এই দুর্দিন খুব দ্রুত শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ভোগান্তি বহাল থাকবে নতুন বছরের প্রথম কয়েক মাসও। অর্থাৎ পার পাবে না ১৪ ফেব্রুয়ারির ভ্যালেন্টাইন’স ডে। এ দিনকে কেন্দ্র করে উপহার হিসেবে হীরার গয়না বিক্রি করে বেশ মুনাফা করেন বিক্রেতারা।

খুব দামি হীরা বা তা বসানো গয়নার ক্রেতাদের অবশ্য দুশ্চিন্তার কারণ নেই বলে জানাচ্ছেন হীরাশিল্প সংশ্লিষ্টরা। কারণ তা কাটা ও পালিশের কাজ করে থাকে ইসরাইল, বেলজিয়াম ও বড় বড় ভারতীয় সংস্থা। যারা ডিজিটাল লেনদেনই করেন বেশি। ফলে নগদ অর্থের সংকটে তাদের ব্যবসায় তেমন প্রভাব পড়েনি।

ভারতে নোট বাতিলের কারণে নি¤œমানের হীরার দামের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়েছে উল্লেখ করে লন্ডনভিত্তিক অনলাইনে হীরার খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ৭৭ ডায়ামন্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তোবিয়াস করমাইন্ড বলেন, এর ফলে আমাদের গ্রাহকরা যে ধরনের হীরা পছন্দ করেন, সেগুলোর চাহিদা বেড়েছে। “

মুম্বাইভিত্তিক এনমল জুয়েলার্সের মালিক ইশু দাতুয়ানি বলেন, সরকারের নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের পর থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত হীরার গয়না বিক্রি কমেছে। ভারতের জেম ও জুয়েলারি এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিলের (জিজেইপিসি) প্রধান প্রবীণ শেখর পান্ডে বলেন, নগদ সংকটের কারণে হীরা এখন মানুষের চাহিদার সবচেয়ে তলানিতে। কমপক্ষে আগামী ছয় মাস হীরার চাহিদা কমতির দিকে থাকবে বলে তিনি জানান।