নিজস্ব প্রতিবেদক : সাবিহা সাকি ফ্যাশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভুয়া এলসির মাধ্যমে বিদেশে পণ্য রপ্তানির অভিযোগ উঠেছে। পণ্যের রপ্তানি মূল্য দেশে আসছে না বলেও প্রমাণ পেয়েছে কাস্টমস গোয়েন্দা। গত ৩১ জানুয়ারি চট্টগ্রামের উত্তর পতেঙ্গার কাঠগড় ডিপোতে অভিযানও পরিচালনা করা হয়েছে। আটক ৯টি চালানের পণ্যের পরিমাণ ১১৮ মেট্রিক টন, যার ঘোষিত মূল্য ৩ কোটি টাকা। তবে, আটক পণ্যের নমুনা অনুসারে প্রকৃত বিনিময় মূল্য আরও বেশি হবে জানিয়েছে কাস্টমস গোয়েন্দা।
কাস্টমস গোয়েন্দা সূত্র জানায়, সাবিহা সাকি ফ্যাশনের ১৫টি বিল অব এক্সপোর্ট সংক্রান্ত দলিলাদি পর্যালোচনা করে রপ্তানি জালিয়াতির প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। তখনই ১৫টি বিল অব এক্সপোর্টের রপ্তানি কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত করা হয়। রপ্তানি সংক্রান্ত কাগজপত্র যাচাইয়ের জন্য অগ্রণী ব্যাংকে চিঠি পাঠানো হয়। গত ২ ফেব্রুয়ারি অগ্রণী ব্যাংক জানিয়েছে, সাবিহা সাকি ফ্যাশন অগ্রণী ব্যাংক প্রধান শাখার গ্রাহক নয়। বিল অব এক্সপোর্ট সংশ্লিষ্ট ইএক্সপিগুলো অগ্রণী ব্যাংক প্রধান শাখার অন্য অন্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের নামে ইস্যু করা। এতেই প্রমাণিত হয়েছে, রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ইএক্সপি ও ভুয়া এলসি ব্যবহার করে পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে এবং হচ্ছিল। যেহেতু জালিয়াতির মাধ্যমে রপ্তানি সম্পন্ন হয়েছে, তাই পণ্যচালানের বিপরীতে কোনো বৈদেশিক মুদ্রা বৈধ পথে দেশে আসার সুযোগও নেই; এক্ষেত্রে অর্থপাচার রয়েছে।
পণ্যচালানগুলোর বিষয়ে রপ্তানিকারকের কাছে কাস্টমস গোয়েন্দা জানতে চাইলে তিনি জানান, এসব চালানের সঙ্গে তিনি সংশ্লিষ্ট নন; বরং তিনি এই বিষয়ে ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
কাস্টমস গোয়েন্দা জানিয়েছে, তাদের অভিযানের পর তিনি জিডিটি (নম্বর- ২৬৩৮, তারিখ: ৩১/১/২০২৩) করেন। পণ্যচালান কায়িক পরীক্ষার জন্য সহযোগিতা করতে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট লিমাক্স শিপার্সকে চিঠি পাঠানো হলেও তারা কোনো সহযোগিতা করেনি। ১৫ টি পণ্যচালানের মধ্যে ৯টি পণ্য চালান সংশ্লিষ্ট ডিপোতে পাওয়া গেছে। বাকিগুলো ইতোমধ্যে রপ্তানি করা হয়েছে। আটক কনটেইনার সাতটি ৪০ ফুট দৈর্ঘের। আটক পণ্য চালানগুলোর কায়িক পরীক্ষার পর ঘোষণা বহির্ভূত একাধিক পণ্য পাওয়া যায়।
রপ্তানিকারকের ঘোষণা অনুযায়ী টি শার্ট ও লেডিস ড্রেস রপ্তানির কথা থাকলেও কায়িক পরীক্ষায় বেবি ড্রেস, জিন্স প্যান্ট, শার্ট, লেগিস শালসহ ঘোষণা বহির্ভূত অসংখ্য পণ্য পাওয়া গেছে। একই রপ্তানিকারকের ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ৯৪টি পণ্যচালানের সন্ধান পাওয়া গেছে। তারমধ্যে ৮৫টির রপ্তানি সম্পন্ন হয়েছে। এসব চালানের পণ্যের পরিমাণ ৮৮২ মেট্রিক টন, যার ঘোষিত মূল্য ২২ কোটি ৬ লাখ ৩৬ হাজার ১৯৪ টাকা। আটক ৯টি চালানের পণ্যের পরিমাণ ১১৮ মেট্রিক টন, যার ঘোষিত মূল্য ৩ কোটি টাকা। তবে, আটক পণ্যের নমুনা অনুসারে প্রকৃত বিনিময় মূল্য আরও বেশি হবে মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে। সব রপ্তানি চালানের বিষয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে। সার্বিক অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের যুগ্ম পরিচালক সাইফুর রহমানকে আহ্বায়ক করে আট সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
চালানগুলো মালয়েশিয়া, সুদান, ইউএই, ত্রিনিদাদ, টোবাগো নেওয়ার কথা ছিল।