ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প নেওয়া হয় ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে। এদিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেন প্রকল্প শুরু হয় ২০১০ সালের জুনে। প্রকল্প দুটি গ্রহণকালের মধ্যে ব্যবধান কয়েক বছরের; যদিও চলতি বছর জুনে একই সঙ্গে উদ্বোধন হয়েছে দুই চার লেনই। বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতিই এর কারণ। এক্ষেত্রে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেনের কাজ তুলনামূলক দ্রুত সম্পন্ন হলেও ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের কাজ শেষ হতেই পেরিয়ে গেছে এক দশক। প্রাক্কলিত মেয়াদের চেয়ে বেশি সময় লাগায় প্রকল্পব্যয়ও বেড়েছে লক্ষণীয়ভাবে। জানা যায়, ২০০৬ সালে গৃহীত ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। ২০১০ সালে তা বাড়িয়ে ২ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা করা হয়। এরপর বিশেষ সংশোধনী আনা হলে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৪১০ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে হয়েছিল এর দ্বিতীয় সংশোধনী। দ্বিতীয় সংশোধনীর পর প্রকল্পটির ব্যয় দাঁড়ায় ৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকায়। সর্বশেষ ২০১৫ সালে ৩ হাজার ৮১৭ কোটি টাকায় সম্পন্ন করা গেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্প। মৌলিকভাবে একই চিত্র বিরাজ করছে ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেন প্রকল্পেও। ২০১০ সালে এর প্রকল্পব্যয় ধরা হয়েছিল ৯০২ কোটি টাকা। এক বছরের মধ্যে আরও ৯০ কোটি টাকা বাড়ে প্রকল্পব্যয়। সেটি আবার দ্বিগুণের মতো বেড়ে ওঠে ২০১৩ সালে। তাও সৌভাগ্য, শেষ পর্যন্ত কাজগুলো সম্পন্ন হয়েছে। এক্ষেত্রে দুঃখজনক ঘটনা হলো, ধীরগতিতে সম্পন্ন হওয়া ওই দুই প্রকল্পের কাজ শেষ হয় ধীরগতির যানবাহন চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় সার্ভিস লেন বাদ রেখেই, যার খবর রয়েছে সোমবারের শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘ভুল পরিকল্পনায় নির্মাণ ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদক অবশ্য জানিয়েছেন, সার্ভিস লেনটি যুক্ত করার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শামছুল হকের মতো পরিবহন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, দেরি হলেও সওজ (সড়ক ও জনপথ অধিদফতর) ভুল বুঝতে পেরেছে, এটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তার বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণের সুযোগ কম। তাছাড়া কথাটি তিনি সম্ভবত বলেছেন সার্ভিস লেনের কারিগরি তাৎপর্যের বিষয় মাথায় রেখে। লক্ষণীয়, বাংলাদেশে কোনো আদর্শ মহাসড়ক নেই। সেদিক থেকে আলোচ্য দুই চার লেনে সার্ভিস লেন সংযুক্ত হলে সার্বিকভাবে স্থানীয় সড়ক-মহাসড়কের একটা গুণগত উন্নয়ন হয় বৈকি। নিঃসন্দেহে এ নিয়ে কোনো আপত্তি নেই কারও। কথা হলো, কাজটি চার লেন নির্মাণকালে সংযোজন করলে সেটি আরও সহজ হয়ে যেতো না কি? এখন সার্ভিস লেন দিতে গেলে নতুন করে জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হতে পারে। বাড়তি নির্মাণব্যয়ের কথা না হয় এখানে না-ই বলা হলো। এমন প্রেক্ষাপটে ওই দুই মহাসড়কে সার্ভিস লেন না দেওয়ার ঘটনাকে সামান্য ভুল হিসেবে দেখার সুযোগ রয়েছে কি? বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার। অবশ্য সরকারি অবকাঠামো নির্মাণের সুফল পায় সাধারণ মানুষই। আবার কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত ভুল পরিকল্পনার ফলে কোনো প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে গেলে চূড়ান্তভাবে তার দায়ভারও বহন করতে হয় জনগণকেই। সুতরাং ২০১৮ সালের মধ্যে দুই সার্ভিস লেনের কাজ সম্পন্ন হোক, সমস্যা নেই। দুই চার লেন প্রকল্পে ভুল পরিকল্পনার ঘটনাটিকেও অধিকতর জবাবদিহির আওতায় আনা হোক এটাই প্রত্যাশা।