প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

ভেজাল খাদ্য থেকে মুক্তি কি মিলবে না!

সম্প্রতি দেশের রাজধানী ঢাকার অভিজাত খাবার প্রস্তুত ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান সুলতান’স ডাইনের কাচ্চিতে কুকুরের মাংস দেয়া হয় বলে যে প্রচারণা চলছে, এতে আবারো আলোচনায় এসেছে খাদ্যে ভেজাল মেশানোর বিষয়টি। আসলেই প্রতিষ্ঠানটি কাচ্চি বা অন্যান্য খাবারে মাটন-চিকেনের পরিবর্তে কুকুরের মাংস দিচ্ছে কি নাÑসেটিও যাচাই সাপেক্ষ।

দেশে খাদ্যে ভেজাল মিশ্রণ বেড়েই চলেছে। মানব স্বাস্থ্য পতিত হচ্ছে চরম ঝুঁকিতে। সুস্বাস্থ্য লাভের জন্য পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবারের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো বর্তমান সময়ে এসে দেশে যথাযথ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার পাওয়া একপ্রকার দুষ্কর হয়ে পড়েছে। দেশের প্রতিটি মানুষের দেহ এখন খাদ্যে ভেজালের কারণে স্বাস্থ্যহানির সম্মুখীন। শিশুদের খাদ্য থেকে শুরু করে কোনো খাদ্যই এখন ভেজালমুক্ত নয়। আর ভেজালযুক্ত এসব খাদ্য গ্রহণের কারণে মানবদেহে তৈরি হচ্ছে অনিরাময়যোগ্য হরেক রকমের রোগ। এগুলো একজন মানুষকে অনায়াসে নিয়ে যাচ্ছে মৃত্যুর দিকে। খাদ্যে ভেজাল রোধ করা এখন সময়ের অন্যতম দাবি। তবে খাদ্যে ভেজাল মিশ্রণ রোধে প্রশাসনের তরফ থেকে কঠোর অবস্থান নেই বললেই চলে। খাদ্যে ভেজাল রোধে প্রশাসন মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালনা করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য। ফলমূল, শাকসবজির অধিকাংশই আমাদের দেশে উৎপাদিত হয়। এই নির্ভেজাল খাদ্যগুলোকে দুষ্ট ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা বেশি দিন ধরে টিকিয়ে রাখতে এবং মৌসুমি ফলমূল যাতে দীর্ঘ সময় ভালো রাখতে পারে, সেজন্য ফরমালিন মিশিয়ে সেগুলোকে করে তুলছে বিষাক্ত।

১৯৯৪ সালে প্রকাশিত আমেরিকার এনভায়রনমেন্ট প্রটেকশন এজেন্সির একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ফরমালিন ফুসফুস ও গলবিল এলাকায় ক্যানসার সৃষ্টি করে। ২০০৪ সালের ১ অক্টোবর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, গলবিল এলাকায় ক্যানসার সৃষ্টির জন্য ফরমালিনকে দায়ী করা হয়। আবার কৃষি তথ্য সার্ভিসের (এআইএস) একটি প্রতিবেদন বলছে, টেক্সটাইল রংগুলো খাদ্য ও পানীয়ের সঙ্গে মিশে শরীরে প্রবেশ করার পর এমন কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নেই যার ক্ষতিসাধন হয় না। উদ্বেগের বিষয় হলো, সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান ক্ষতি হয় আমাদের কিডনি, লিভার, অস্থিমজ্জা ও হƒৎপিণ্ডের। ফলে ধীরে ধীরে এগুলো নষ্ট হতে থাকে। তবে শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে এগুলো নষ্ট হয় দ্রুত, তরুণদের ক্ষেত্রে হয় কিছুটা বিলম্বে। খাদ্যে ভেজাল মেশানোর কারণেই দেশে বিভিন্ন রকমের ক্যানসার, কিডনি ফেইলিউর, লিভার সিরোসিস, হƒদযন্ত্রের অসুখ, হাঁপানিসহ সংশ্লিষ্ট রোগ দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। সরকারি হিসাব মতে দেশে এখন কিডনি রোগী প্রায় ২ কোটি। যার অধিকাংশই খাদ্যে ভেজালের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত।

খাদ্য ভেজাল মেশানোর অন্যতম প্রধান কারণ হলো, কম খরচে অধিক মুনাফা লাভের হীন মানসিকতা। এসব মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ীকে আইনের আওতায় আনাও সময়ের দাবি। জাতিকে খাদ্যে ভেজালের এ অভিশাপ থেকে বাঁচানো এবং এটি প্রতিরোধ করা সরকারসহ সবার নৈতিক দায়িত্ব। খাদ্যে ভেজাল রোধকল্পে সরকারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।

জিহাদ হোসেন রাহাত

শিক্ষার্থী

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ

মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা